গোলাপগঞ্জ পৌর সদরের প্রাণকেন্দ্র চৌমুহনী ফুটপাত কিছুদিন জঞ্জালমুক্ত থাকলেও ফের পূর্বাবস্থায় ফেরছে জনগুরুত্বপূর্ণ চৌমুহনী। সাথে গাড়ির ‘হর্ণ’র শব্দ দূষণ বাড়ছেই। চারদিক থেকে আসা গাড়িগুলো এক সাথে যখন হর্ণ বাজাতে থাকে তখন চৌমুহনী মসজিদের মুসল্লি ও আশপাশের মার্কেটের ব্যবসায়ী/ক্রেতারা যেন আতকে উঠেন। কিন্তু আইন থাকলেও গোলাপগঞ্জে শব্দ দূষণের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করতে দেখা যায়নি প্রশাসনকে।
গোলাপগঞ্জ চৌমুহী হচ্ছে একটি জনগুরুত্বপূর্ণ পয়েন্ট। এ পয়েন্ট দিয়ে প্রতিদিন শুধু সিলেট জেলার গোলাপগঞ্জ, বিয়ানীবাজার, জকিগঞ্জ ও কানাইঘাট নয়, পাশ^বর্তী মৌলভীবাজার জেলার বড়লেখা ও জুড়ী উপজেলারও শতাধিক মানুষ চলাচল করেন। এমনকি পাশ^বর্তী দেশ ভারতের বড় বড় পণ্যবাহী গাড়ি প্রায়ই এ সড়ক দিয়েই চলাচল করে। জনগুরুত্বপূর্ণ সিলেট-জকিগঞ্জ-বিয়ানীবাজার-বড়লেখা সড়কের মূল পয়েন্ট গোলাপগঞ্জ চৌমুহনী। কিন্তু কোন ধরণের তদারকি না থাকায় গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীর দু’পাশের ফুটপাতজুড়ে একসময় গড়ে উঠেছিল ভাসমান দোকান। এসব ভাসমান দোকানের কারণে স্কুল-কলেজ যাতায়াতে ছাত্রী ও বাজারে আসা নারীরা পড়তে হতো নানা বিপাকে। আর সন্ধ্যার পর এসব দোকানের আড়ালে চলতো মাদকের ছড়াছড়ি।
চৌমুহনীর মার্কেটের ব্যবসায়ী ও সচেতন মহলের অভিযোগে ২০১৭/১৮ সালের দিকে তৎকালিন পৌর মেয়র মরহুম সিরাজুল জব্বার চৌধুরী উপজেলা ও থানা প্রশাসনের সহযোগিতায় গোলাপগঞ্জ চৌমুহনী জঞ্জালমুক্ত করার উদ্যোগ নিয়ে সফল হয়েছিলেন। কিন্তু তাঁর মৃত্যুর পরপরই পুণরায় ফুটপাত দখল করেন ভাসমান দোকানিরা। পরবর্তীতে প্রায় তিনবছল পর আমিনুল ইসলাম রাবেল মেয়র নির্বাচিত হয়ে চৌমুহনীর ফুটপাত দখলমুক্ত, দু’দিকে টানানো বিদ্যুৎ, টেলিফন, ডিস, ইন্টারনেট লাইন সরিয়ে জঞ্জালমুক্ত ও চৌমুহনী এলাকায় নাম্বার বিহীন সিএনজি-অটোরিক্সা বন্ধ করে জানযটমুক্ত করেছিলেন। এমনকি উচ্চ স্বরে হর্ণ বন্ধের বিরুদ্ধেও প্রশাসন কঠোর ছিল। ভাসমান ব্যবসায়ী থেকে কিছুদিন ফুটপাত দখলমুক্ত থাকলেও নাম্বার বিহীন সিএনজি-অটোরিক্সা বন্ধ রাখতে পারেননি। তবে, রাস্তার উপর গাড়ি পার্কিং ও সিএনজি-অটোরিক্সার জটলা কমেছিল।
কিন্তু গত ৫ আগস্ট সরকার পতনের পর থেকে পূর্বের রূপে ফিরেছে গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীর অবস্থা। ফুটপাতগুলো দখল নিয়েছে ভাসমান দোকানিরা। যত্রতত্র সিএনজি-অটোরিক্সা ও ব্যটারী চালিত রিক্সার কারণে পূর্বের চেয়ে আরও বেশি জঞ্জালে পরিণত হয়েছে। আর গাড়ির হর্ণতো চৌমুহনীর মানুষের নিত্যসঙ্গী হয়ে উঠেছে। বিশেষ করে নামাযের সময় উচ্চ স্বরে হর্ণের ফলে মারাত্মক ব্যাঘাত ঘটছে মুসল্লিদের। সংশ্লিষ্টদের বারবার বলার পরও কর্ণপাৎ করছেন না চালকরা।
গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীর বিভিন্ন ব্যবসায়ীরা বলেন, গত ৩/৪ বছর খুব শান্তিতে ব্যবসা কিরেছিলাম। কিন্তু গত ৫ আগস্টের পর থেকে পূর্বের মতো আবার দোকানের সামন দখল করে ভাসমান ব্যবসা শুরু হয়েছে। এছাড়া সিএনজি অটোরিক্সা ও ব্যাটারী চালিত রিক্সার কারণে ক্রেতারা ঠিকমতো বাজার করতে পারছেন না।
গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীর প্রচীনতম ব্যবসাপ্রতিষ্ঠান আলী স্টোরের ম্যানেজার এনাম আহমদ বলেন, আমরা দীর্ঘদিন অভিযোগ করে পৌর মেয়রের মাধ্যমে দোকানের সামন পরিস্কার করিয়েছিলাম। কিন্তু এখন মেয়রও নেই আর কেউ তদরকিও করেনা, এজন্য যে যেভাবে পারছে ফুটপাত দখল করে বসছে। এতে করে দোকানের ব্যবসায়ীরা ক্ষতিগ্রস্থ হচ্ছেন।
রুবিনা হোটেলের সত্ত¡াধিকারী সুলতান আহমদ জানান, আমাদের হোটেলের সামন সিএনজিÑঅটোরিক্সা দিয়ে সবসময় ব্যরিকেড দেয়া থাকে। মানুষ চলাচল করতে পারছে না। বিশেষ করে নারীরা গোলাপগঞ্জে মার্কেটে এসে ভাসমান ব্যবসায়ী ও সিএনজি ও ব্যাটারী চালিত রিক্সার কারণে হাটাচলা করতে নানা সমস্যায় পড়তে হচ্ছে।
ফুলবাড়ি থেকে আসা ছোটন মিয়া নামে এক ক্রেতা বলেন, পরিবার-পরিজন নিয়ে মার্কেট করতে এসেছি, এক মার্কেট থেকে অন্য মার্কেটে যেতে হলে হাটাচলা সম্ভব হয় না। হাটাচলার রাস্তা দখর করে বসে আছে ভাসমান দোকান ও গাড়ি। এভাবে চললে মানুষজন মার্কেটে আসবে কেমনে।
এব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ মোহাম্মদ মনিরুজ্জামান মোল্ল্যাহ বলেন, মানুষ চলাচলের রাস্তা বন্ধ করে ব্যবসা করা ও গাড়ি রাখা বেআইনী। ফুটপাত দখলমুক্ত করা প্রশাসনের পক্ষে একা সম্ভব হয়। বাজার কমিটি, ব্যবসায়ী, প্রশাসনসহ সকলে সম্মিলিতভাবে মানুষ চলাচলের রাস্তা ও ফুটপাত দখলমুক্ত করতে হবে। তিনি বলেন, স্থায়ী ব্যবসায়ীরা চাইলে তারা তাদের প্রতিষ্ঠানের সামন পরিস্কার করতে পারেন। প্রয়োজনে আমরা সহযোগিতা করব।
গোলাপগঞ্জ উপজেলা নির্বাহী অফিসার মিলটন চন্দ্র পাল বলেন, গোলাপগঞ্জ চৌমুহনীসহ আশপাশের ফুটপাত দখলমুক্ত করতে শীঘ্রই আমরা ব্যবসস্থা নেব। আমি জেনেছি, চৌমুহনী থেকে ফুটপাত উচ্ছেদ করা হয়েছিল, ইদানিং কিছু কিছু স্থানে আবার আগের মতো দখল হয়ে গেছে। আগামীকাল বিজয় দিবস। বিজয় দিবসের পর পরই আমরা বাজার বণিক সমিতি, ব্যবসায়ীসহ সকলকে নিয়ে বসে সিদ্ধান্ত নেয়া হবে। আগের মতো ফুটপাত দখলমুক্ত করা হবে।