• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

দুঃসময়ে দ্যুতি ছড়াচ্ছেন আসাদ উদ্দিন

bijoy71news
প্রকাশিত এপ্রিল ২৪, ২০২০

নুরুল হক শিপু ::
ছাত্রলীগেই হাতেখড়ি। ছাত্র থাকাকালে নেতৃত্বগুণে পদের স্বাদগ্রহণ করেছেন বার বার। এরপর আওয়ামী লীগ। শীর্ষ দুই পদের একটি ছিল তাঁর ভাগে। তবে পদের লোভী তিনি কখনই ছিলেন না। আর এখনতো তিনি পদহীন নেতা! বলা যায় সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ এখন ‘ঢাল নেই তলোয়ার নেই নিধিরাম সর্দার।’ মুখে এককথা বললেও এ নেতার ক্ষেত্রে বাস্তবতা কিন্তু ভিন্ন।
কঠিন সময় এখন। করোনা ভাইরাসের থাবায় পুরো বিশ্ব এখন বিধস্ত। দেশেও দিনদিন বাড়ছে আক্রান্ত ও মৃতের সংখ্যা। চলছে সাধারণ ছুটি। কর্মজীবী মানুষ গৃহবন্দি। বেকায়দায় পড়েছেন প্রতিদিন আয় করা সাধারণ মানুষ। বিত্তবানরা ভালো থাকলেও, বেশি ভালো নেই মধ্যবিত্ত পরিবারগুলো। করোনার ভয়ে মানুষ হাসপাতলে যাচ্ছেন না চিকিৎসাসেবা নিতে। এমন পরিস্থিতিতে থেমে নেই নগর আওয়ামী লীগের সাবেক সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ কার্যক্রম। ব্যক্তিগত উদ্যোগে অসহায় হাজারো পরিবারকে খাদ্য সহায়তা দিয়েছেন তিনি। তাঁর আহ্বানে সাড়া দিয়েছেন অনেক বিত্তবানও। এছাড়া তাঁর শুভাকাঙ্ক্ষিরা যখন তাঁর মাধ্যমে খাদ্য সহায়তা দিতে চেয়েছেন-তিনি তা গ্রহণ না করে ওইসব নেতাদের নিজ নিজ ওয়ার্ডে তা বিতরণের পরামর্শ দিয়েছেন। আসাদ উদ্দিন তাঁর একান্ত কিছু মানুষকে নিয়ে মধ্যবিত্তদের জন্য চালু করেছেন বিকল্প ব্যবস্থা। মধ্যবিত্তরা সাধারণত নিজের অসায়ত্বের কথা কারো কাছে প্রকাশ করেন না। তা-ই তিনি তাদের খবর নিচ্ছেন অতি গোপনে। এ জন্য নগরীর কালিঘাটের একটি বড় দোকানে নিরবে তাদের যেতে বলছেন এবং সেখান থেকে অনেকেই খাদ্য সহায়তা নিচ্ছেন। শুধু তা-ই নয়; নগরবাসীর চিকিৎসা সংক্রান্ত পরামর্শের জন্য মোবাইল ফোনে বিনামূল্যে টেলিমেডিসিন সেবা চালু করেছেন তিনি। সিলেটে কর্মরত ১০ জন চিকিৎসকের সমন্বয়ে এই সেবাটি চালু করা হয় বুধবার বিকালে। সিলেট রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটির কার্যালয়ে দায়িত্বরত চিকিৎসকদের সাথে পরামর্শ করে আসাদ উদ্দিন আহমদ এই সেবাটি চালু করেন। বিষয়টি নগরের ২৭টি ওয়ার্ডের মানুষকে জানাতে চিকিৎসকদের মোবাইল নম্বর সম্বলিত লিফলেট বিতরণ করেছেন আসাদ উদ্দিনের অনুসারিরা।
আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘এখন আমরা খুবই দুঃসময় অতিবাহিত করছি। এ সময় বিত্তবানরা অসহায়দের পাশে দাঁড়ানো প্রয়োজন। জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর অবস্থান থেকে সর্বোচ্চটাই করছেন। তাঁর পাশে আমরা দাঁড়ালে এ দুর্যোগ আমরা সহজে কাঠিয়ে উঠতে পারব। পাশাপাশি কয়েকটা দিন বাসা-বাড়িতেই কষ্ট করে আমাদের আবস্থান করতে হবে।’
মহানগর যুবলীগের সভাপতি আলম খান মুক্তি বলেন, ‘রাজনীতি হলো মানুষের জন্য। আসাদ উদ্দিন আহমদকে দেখছি অনেক দিন থেকেই। তিনি প্রচারবিমুখ নেতা। তাঁর কর্ম আমাদের অনুপ্রাণিত করে। এমন নেতা সমাজে বিরল।’
মহানগর ছাত্রলীগের প্রতিষ্ঠাতা সদস্য ও মহানগর যুবলীগের সাবেক সিনিয়র সদস্য জাকিরুল আলম জাকির বলেন, ‘আসাদ উদ্দিন আহমদ আমাদের সুন্দর রাজনীতির পথ দেখান। বর্তমান সময়ে তিনি যে মানবসেবার দৃষ্টান্ত সৃষ্টি করছেন-তা নগরের মানুষ হৃদয়ে রাখবে। তিনি বলেন, আসাদ উদ্দিনকে আমি আমার রাজনৈতিক অভিভাবক হিসেবেই মানি। বর্তমান এ কঠিন সময়ে আমরা তাঁর কাছ থেকে মানবসেবা শিখছি।’
প্রসঙ্গত, গত সিটি সির্বাচন ও মহানগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে কেন্দ্র থেকে সিলেট সবখানেই আলোচিত ছিলেন আসাদ উদ্দিন আহমদ। ধারণা ছিল-তিনিই সিসিক নির্বাচনে হবেন নৌকার কান্ডারি। কিন্তু তা আর হয়ে ওঠেনি। এরপর নগর আওয়ামী লীগের সম্মেলনে তিনিই সভাপতি হচ্ছেন-এমন আলোচনায় মুখরিত ছিল সর্বত্র। কিন্তু শেষ পর্যন্ত পদহীন হন এ নেতা।
১৯৭৭ সালে তিনি মদনমোহন কলেজে ভর্তি হওয়ার পর সক্রিয়ভাবে ছাত্রলীগের রাজনীতিতে জড়িত হন। পরবর্তীকালে কলেজ ছাত্রসংসদ নির্বাচনে ছাত্রলীগের প্রার্থী হিসেবে অংশ নেন। ছাত্রছাত্রীদের ভোটে ১৯৭৮ সালে প্রথমেই খেলাধুলা সম্পাদক, ১৯৭৯ সালে ছাত্র মিলনায়তন সম্পাদক, ১৯৮০ সালে সাধারণ সম্পাদক ও ১৯৮২ সালে সহসভাপতি (ভিপি) নির্বাচিত হন। ১৯৮৪ সালে বাংলাদেশ ছাত্রলীগের জাতীয় পরিষদ সদস্য নির্বাচিত হওয়ার পর ১৯৮২ সাল থেকে ১৯৯০ সাল পর্যন্ত ছাত্রসংসদের অন্যতম নেতা হিসেবে তাঁর উপর কারণে-অকারণে ১৯টি মামলা দেওয়া হয়। ১৯৮৬ সালে সিলেট জেলা ছাত্রলীগের সভাপতি হওয়ার পাশাপাশি কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সদস্য নির্বাচিত হন। এভাবেই তিনি আওয়ামী লীগের দায়িত্বে আসেন। ১৯৯১ সালে প্রথম জেলা আওয়ামী লীগের তথ্য ও গবেষণা সম্পাদক, ২০০৩ সালে মহানগর গঠনের পরই মহানগর আওয়ামী লীগের ১ম যুগ্ম সম্পাদক এবং ২০১১ সালে মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।