• ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

আল হারামাইন হাসপাতাল অবিলম্বে করোনা হাসপাতালের জন্য কমিশন করা হোক

bijoy71news
প্রকাশিত মার্চ ৩০, ২০২০

মোহাম্মদ তাজ উদ্দিন :

মাহতাবুর রহমান নাসির সিলেটে শীর্ষ ধনীদের একজন। আল হারামাইন গ্রুপের চেয়ারম্যান। দেশে বিদেশে বিশাল সম্পদের মালিক। বাংলাদেশ সরকারের একজন সিআইপি। একাধিক ব্যাংকের মালিক। আল হারামাইন পারফিউমের স্বত্বাধিকারী। মধ্যপ্রাচ্যে তার বিশাল ব্যবসা। মধ্যপ্রাচ্যের একটি দেশের সম্মানিত নাগরিক ও সেদেশের গোল্ডকার্ড হোল্ডার আয়কর দাতা। সিলেটে বাড়ি করেছেন প্রায় ৫শ’ কোটি টাকা খরচ করে। তিনি কত কোটি টাকার মালিক তা এই নিবন্ধের আলোচ্য নয়। আলোচ্য হল- বিশ্বের চরম র্দুদিনে সিলেটবাসীর পাশে কী তিনি আছেন?
মানব ইতিহাসের অভূতপূর্ব এই দুর্যোগের দিনে ইতোমধ্যে দেশের শীর্ষ ধনীরা নিজ নিজ অবস্থান থেকে এগিয়ে এসেছেন। দেশের অন্যতম শীর্ষ শিল্পগ্রুপ আকিজ গ্রুপ ইতোমধ্যে করোনা হাসপাতাল তৈরীর কাজ শুরু করেছে। বসুন্ধরা গ্রুপ ৫ হাজার বেডের করোনা হাসপাতাল তৈরীর ঘোষণা দিয়েছে। দেশের শীর্ষ শিল্পপতিরা ইতোমধ্যে দান অনুদান শুরু করেছেন। কিন্তু, কোথায় মাহতাবুর রহমান নাসির? তার কাছ থেকে কোন ঘোষণা এখনো শুনতে পাইনি।
এই মুহূর্তে বিশ্বেও ইতিহাসে একটি উদাহরণ তৈরীর একটি সুবর্ণ সুযোগ রয়েছে শিল্পপতি মাহতাবুর রহমান নাসিরের সামনে। তার একক অর্থায়নে শত কোটি টাকা ব্যয়ে বিশ্বমানের একটি হাসপাতাল রয়েছে সিলেটে- যার নাম আল হারামইন হাসপাতাল। তিনি এই হাসপাতালটি সিলেটের প্রথম করোনা হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য অবিলম্বে সরকারের কাছে হস্তান্তর করতে পারেন।
্আল হারামাইন হাসপাতাল কেন? অন্য কোন হাসপাতাল কেন নয়? আমার মতে, অতি সহজে এই হাসপাতালটিকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলা সম্ভব। আর তাই সরকার এই হাসপাতালটি কমিশন বা রিকউজিশন করলে দ্রুত ও স্বল্পতম সময়ে সিলেটবাসী একটি মান সম্পন্ন বিশেষায়িত করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র পেতে পারেন।
আল হারমাইন হাসপাতাল একক মালিকানায় পরিচালিত একটি প্রতিষ্ঠান। এ কারণে এই প্রতিষ্ঠানটির কর্তৃপক্ষ দ্রুত ও স্বল্প সময়ে সিদ্ধান্ত নিতে পারেন। করোনা হাসপাতাল নির্মাণের জন্য রাগীব রাবেয়া বা ইবনে সিনার মত প্রতিষ্ঠানকে কমিশন করতে হলে এভাবে কোন একক সিদ্ধান্তের সুযোগ পাওয়া যাবেনা।
করোনা হাসপাতাল স্থাপনের ক্ষেত্রে হাসপাতাল হিসেবে যে সব ফ্যাসিলিটিজ দরকার তার পুরোটাই রয়েছে আল হারামাইনে। এর ভবনটি তৈরী করা হয়েছে হাসপাতালের উপযোগী করে। এখানকার অভ্যন্তরীন সাজসজ্জাও বিশ্বমানের। এ কারণে এটিকে করোনা হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তুলতে নতুন করে আর কোন পরিবর্তনেরও হয়তো প্রয়োজন পড়বেনা। শুধুমাত্র করোনা চিকিৎসায় বিশেষজ্ঞ ডাক্তারদের হাতে একটি হস্তান্তর করা হলেই চলবে। আর প্রয়োজন হবে ভ্যান্টিলেশনসহ আরো কিছু মেডিক্যাল ইকুইপমেন্ট স্থাপন করা। এটি করা সময় বা ব্যয় সাপেক্ষ হবেনা।
করোনা চিকিৎসায় হয়তো আমাদের বিদেশী সহায়তার প্রয়োজন হতে পারে। বিদেশ থেকে হয়তো ডাক্তার বা এক্সপার্ট নিয়ে আসার প্রয়োজন হতে পারে। আল হারামাইন হাসপাতালের সেটআপ পশ্চিমা বিশ্বের হাসপাতালের আদলে হওয়ায় বিদেশী চিকিৎসকরা আসলেও এখানে স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।
প্রবাসী অধ্যুষিত অঞ্চল হওয়ায় বিদেশ থেকে আসা লোকজনের বা প্রবাসীদের করোনা ঝুঁকির মাত্রা অনেক বেশী। আল হারামাইন হাসপাতালের অভ্যন্তরীন সাজ সজ্জা সিলেটের অন্য বেসরকারী হাসপাতালগুলোর তুলনায় উন্নত হওয়ায় এখানে চিকিৎসা নিতে প্রবাসীরাও স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করবেন।
সবচেয়ে বড় বিষয় হলো- আর্থিক ক্ষতির বিষয়। সিলেটের অন্য বেসরকারী হাসপাতাল বা প্রাইভেট ক্লিনিকগুলোর বেশীরভাগই যৌথ মালিকানাধীন। এগুলোর সাথে মালিকদের রুটি রুজির প্রশ্ন জড়িত। কিন্তু, আল হারামাইনের সাথে মাহতাবুর রহমান নাসিরের রুজি রুজি জড়িত নয়। এখান থেকে যে আয় হচ্ছে- তা মাহতাবুর রহমান নাসিরের মোট আয়ের তুলনায় নগন্য। সুতরাং, মাহতাবুর রহমান নাসির এই হাসপাতালের আয় থেকে বঞ্চিত হলে তার খুব বেশী ক্ষতির আশঙ্কা নেই। ফলে, সরকার চাইলেই আল হারামাইন হাসাপাতালটিকে করোনা চিকিৎসা কেন্দ্র হিসেবে গড়ে তোলার পদক্ষেপ নিতে পারে।
অর্ন্তবর্তীকালীন বা এড-ইন্টারিম সময়ের জন্য বা দুর্যোগকালীন সময়ে বেসরকারী সম্পত্তি রিকউজিশন বা কমিশন করায় আইনগতঃ কোন বাধা নেই। সিলেটে বাংলাদেশ সেনাবাহিনীর একটি বিশাল মেডিক্যাল সেট আপ রয়েছে। জনবলও রয়েছে সেনাবাহিনীর। সুতরাং, আল হারামাইন হাসপাতালকে একটি বিশেষায়িত করোনা হাসপাতাল হিসেবে গড়ে তোলার জন্য সরকার একটি কমিশন করে সেনাবাহিনীর কাছে হস্তান্তর করতে পারে।
সিলেটবাসীর চরমতম এই দুর্যোগের মুহূর্তে অবিলম্বে আল হারামাইন হাসপাতাল কমিশন বা রিকুইজিশন করে করোনা হাসপাতাল গড়ে তোলা প্রয়োজন।