• ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

আশা-নৈরাশার একটি নিম্নমাধ্যমিক বিদ্যালয়: পিযুষ চক্রবর্তী

bijoy71news
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২৪, ২০১৮

দুর্গম হাওর এলাকার পশ্চাদপদ একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। সুনামগঞ্জ জেলার দিরাই উপজেলার রফিনগর ইউনিয়নের ৭,৮ ও ৯নং ওয়ার্ডের ১৪টি গ্রামের ছাত্র-ছাত্রীদের সুবিধার কথা চিন্তা করে এলাকার জগন্নাথপুর গ্রামের বাসিন্দা বামাচরণ তালুকদারের নামানুসারে একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় ২ একর ৯ শতক জায়গার উপর নোয়াগাঁও সমীপুরে প্রতিষ্ঠা করা হয় ১৯৯৫ সালে। (Well began is half done) বিদ্যালয়টির ইন নাম্বার- ১২৯৮৭৭, বিদ্যালয়টির নাম বামাচরণ তালুকদার নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়। এলাকার কিছু সংখ্যক লোক বিদ্যালয়ের উক্ত নাম স্বাভাবিকভাবে মেনে নিতে নারাজ। কেউ কেউ বলছেন বিদ্যালয়টির যাবতীয় খরচের টাকা যাবে এলাকার সবার আর নাম হবে একজনের এটা কি করে হয়? তাই তারা উক্ত নামের সাথে চৌদ্দ গ্রাম বামাচরণ তালুকদার নিম্ন মাধ্যমিক পাবলিক বিদ্যালয় নাম অনুসারে বিদ্যালয় করতে চান। কিন্তু বিদ্যালয়ের প্রসেসিং অনেকটাই হয়েছিল বামাচরণ তালুকদার নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় নামে। নামের অন্তর্দ্বন্দ্বে দাতা পরিবার ও এলাকার কিছু সংখ্যক লোকের মতানৈক্যের কারণে একটি সামাজিক প্রতিষ্ঠান নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের কার্যক্রম প্রতিনিয়ত ব্যাহত হচ্ছে। এলাকার বেশিরভাগ লোকই বলছেন স্কুলটি যে নামেই হোক আমাদের ছেলেমেয়েদের পড়াশোনার সুবিধার জন্য স্কুল হওয়া চাই। বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক দেবব্রত চৌধুরীর কাছ থেকে জানা যায় যে, বর্তমানে বিদ্যালয়টিতে ৩ জন শিক্ষক-শিক্ষিকা এবং ১৫১ জন ছাত্র-ছাত্রী রয়েছে। বিদ্যালয়টির অফিস সহকারি দ্বীনেশ তালুকদার বলেন, বিদ্যালয় চালু হওয়ার শুরু থেকেই আমরা কয়েকজন স্টাফ আছি, কিন্তু আমরা ঠিকমত বেতন পাচ্ছি না। বিদ্যালয়টির ভৌত অবকাঠামো সহ যাবতীয় অব্যবস্থাপনার কারণে এলাকার ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হচ্ছে কম। বিদ্যালয়টির নামের দ্বন্দ্বসহ যাবতীয় সমস্যার সমাধান হলে বিদ্যালয়ে অনেক ছাত্র-ছাত্রী ভর্তি হবে। কারণ চৌদ্দটি গ্রামের অনেক লোকসংখ্যার বসবাস অত্র এলাকায়। বিদ্যালয়টি একদিন এমপিও হবে আমরা এ আশায় আছি। বিদ্যালয়ের ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি পুরন্দরপুরের কালিপ্রসন্ন দাস, তাদের কাছ থেকে জানা যায় বিদ্যালয়টির শ্রেণি কার্যক্রম যথাযথভাবে হচ্ছে না, শিক্ষক সংকটসহ যাবতীয় অব্যবস্থাপনার কারণে ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যালয়টিতে ভর্তি হচ্ছে না এমনকি যারা ভর্তি হয়েছে তারাও ঠিকমতো বিদ্যালয়ে উপস্থিত হচ্ছে না। হেমন্তে পাঁও বর্ষায় নাও বর্ষাকালে অথৈ পানি। বর্ষাকালে ছাত্র-ছাত্রী বিদ্যালয়টিতে আসার জন্য বিদ্যালয়ের নিজস্ব কোন নৌকা নেই এর জন্য ছাত্র-ছাত্রীর বিদ্যালয়ে উপস্থিতিও কম। অত্র এলাকার চারমাইলের ভিতরে কোনো নিম্ন মাধ্যমিক বা মাধ্যমিক বিদ্যালয় নেই। যার কারণে এলাকার ছাত্র-ছাত্রীদের শিক্ষার প্রতি অনগ্রসরতা ও সুবিধা থেকে বঞ্চিত হচ্ছে শত শত ছাত্র-ছাত্রী। সাধারণ অভিভাবক শ্রেণি ও ছাত্র-ছাত্রীরা চাচ্ছে এলাকায় একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয় কিংবা মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা হোক, যার মাধ্যমে এলাকায় শিক্ষার আলো ছড়িয়ে পড়–ক। ঘরে ঘরে ছাত্র-ছাত্রী তৈরি হোক এবং উদ্যমের সহিত প্রতিনিয়ত নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে জ্ঞান অর্জনের জন্য যাক। শিক্ষা জাতির মেরুদন্ড। দেশ দিন দিন উন্নতির দিকে এগিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু দুর্গম হাওর এলাকার অত্র অঞ্চলটি সব ক্ষেত্রেই পিছিয়ে আর শিক্ষা ক্ষেত্রে তো কথাই নেই। মাধ্যমিক বিদ্যালয় রফিনগর ইউনিয়নের বাংলা বাজারে অবস্থিত এছাড়া প্রায় ২০ মাইল দূরে উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষার জন্য উপজেলা সদর দিরাইয়ে যেতে হয়। যা অভাবগ্রস্থ এলাকার মানুষের পক্ষে সম্ভব হয়ে উঠে না। উন্নয়নের অন্যতম পূর্বশর্ত হচ্ছে যোগাযোগ। অত্র এলাকা যোগাযোগের জন্য খুবই নাজুক। বিদ্যালয়টি সামাজিক প্রতিষ্ঠান। বিদ্যা+আলয়= বিদ্যালয়, যে আলয়ে শিক্ষার্থীরা জ্ঞান অর্জন করে সমাজে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করে নিবে এবং সম্ভাবনাময় স্থান করে নিবে, সাথে সাথে নিজের জীবন মান উন্নত করবে পরিবারকে সঙ্গে নিয়ে, এছাড়া সমাজ বিনির্মাণে তথা জাতীয় অগ্রগতির ক্ষেত্রে নিজেকে তৈরি করে নিবে। কথায় আছে আজকের শিশু আগামী দিনের ভবিষৎ ও সম্ভাবনাময় কর্ণধার। দুঃখজনক হলেও সত্য যে বিদ্যালয়টির নামের দ্বন্দের জন্য এলাকার প্রজন্মের পর প্রজন্ম আলোকিত পরিবেশ ও সম্ভাবনাময় দ্বার প্রান্তে স্থান করে নিতে পারছে না অসংখ্য কোমলমতি ছাত্র-ছাত্রী। নাম দিয়ে কাম কি? সুবিধাভোগ ও সুযোগ্য করে প্রজন্মকে গড়তে পারাটাই তো সফল কাম। বংশ পরমপরা মানবজাতি আপন সন্তান-সন্ততির কল্যাণ চান অপেক্ষকৃত সচেতন ব্যক্তিগণ তথা দায়িত্বশীল মা-বাবা। একটি প্রদীপ জ্বললে লক্ষ প্রদীপ জ্বলে উঠে। একটি প্রদীপ স্বরুপ ব্যক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠান উভয়ই হতে পারে। (Necessity knows no law. Industry is the mother of key to success) অত্র এলাকায় একটি নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যাপীঠ প্রতিষ্ঠিত হলে এলাকায় শিক্ষার হার বৃদ্ধি পাবে। একজন ব্যক্তি শুধু তার নিজের, পরিবারের, সমাজের কিংবা শুধু তার নিজ দেশের জন্য নয়, যোগ্য হয়ে হতে পারে গোটা বিশ্বের মানবজাতির জন্য। যে জাতি যত বেশি শিক্ষিত ও পরিশ্রমী সে জাতি তত বেশি উন্নত। স্থানীয় প্রজন্ম ও জাতীয় উন্নতির কথা বিবেচনা করে অত্র বামাচারণ তালুকদার নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টির প্রতি স্থানীয় জনপ্রতিনিধি ও শিক্ষামন্ত্রীর সচেতন দৃষ্টি ও কার্যকর পদক্ষেপে বিদ্যালয়টির গতিশীলতা আসতে পারে। মাননীয় শিক্ষামন্ত্রী অবহেলিত এলাকার বেহাল অবস্থা সম্পন্ন উক্ত নিম্ন মাধ্যমিক বিদ্যালয়টিকে এমপিওভুক্ত করা সহ যাবতীয় সমস্যার উত্তরণ ঘটিয়ে ত্বরান্বিত করার জন্য তরিৎ ব্যবস্থা নিবেন কি ?

লেখক- কলামিস্ট
মোবাইল ঃ ০১৭৫৪-৪০৩৮৫৩