ওয়েছ খছরু ::
আর পারছি না। ভেবেছিলাম- করোনাকালীন সময়ে যতটুকু সম্ভব ‘চুপ’ থাকবো। করোনার সঙ্গে সবাই মিলে যুদ্ধ করবো। কিন্তু পারলাম কই। সিলেটের পরিস্থিতি দেখে চিৎকার করে কাঁদতে ইচ্ছে করছে। পরিস্থিতি এমন- আমরা যেনো দলে দলে মৃত্যুর অপেক্ষা করছি। দেখার কেউ নেই। কথা বলার কেউ। শোনারও কেউ নেই। সিলেটে যে যার মতো ছুটছে। করোনার খামখেয়ালিপনায় সবাই গা ভাসিয়ে দিয়েছে। ভয়ঙ্কর তথ্য দিচ্ছেন সিলেটের স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। সিলেটের সব ধারনা পাল্টে দিচ্ছে করোনা। গত এক সপ্তাহে গড়ে প্রতিদিন ৪০-৪৫ জন করে করোনায় আক্রান্ত হয়েছেন। রোগী বাড়ার গ্রাফ উর্ধ্বমুখি। জেলায় ৩শ’ ছুই ছুই। সিলেট বিভাগে আক্রান্ত মোট ৬০৮ জন। কমিউনিটি ট্রান্সমিশন হয়ে গেছে। গ্রামে-গঞ্জে দলে দলে মিলছে করোনা রোগী। সিলেট শহর পরিনত হয়েছে ‘রেড জোনে’। পরিচিত জন একে একে করোনায় আক্রান্ত হচ্ছেন। জানি না, আমরা কতটুকু নিরাপদ আছি। আশ্চর্যজনক তথ্য হচ্ছে- সিলেটে করোনার চিকিৎসাও পাওয়া যাবে না। আইসোলেশন সেন্টার শহীদ শামসুদ্দিন হাসপাতালে রোগি ইতিমধ্যে ৫০ ছাড়িয়েছে। আর হয়তো ১০ জনের মতো রোগী ভর্তি করা যাবে। এরপর কী হবে? কোথায় ভর্তি হবে রোগী কোনো প্রস্তুতি নেই। স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা এখন এড়িয়ে চলতে শুরু করেছেন। তাদেরও কিছুই করার নেই। তারাও হতাশ। লকডাউন মানা হচ্ছে না। পুরো শহর ঈদ মার্কেট। যেনো স্বাভাবিক সিলেট শহর। ঢাকা সহ করোনা প্রবণ এলাকা থেকে ঈদ পালনে দলে দলে সিলেট আসছেন লোকজন। আইন শৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনী ক্লান্ত। তারাও যেনো দিশা হারাতে বসেছেন। তাদের মধ্যে আক্রান্ত হচ্ছেন বেশি। এক বিশ^নাথ থানাতেই ২৬ জন পুলিশ সদস্য আক্রান্ত। কেউ রক্ষা পাচ্ছে না। সবাই যার যার প্রাণ বাচাতে ব্যস্ত। আর ওদিকে সবকিছু স্বাভাবিক। ইশারায় সিলেটের কারফিউ জারির ইঙ্গিত দিচ্ছেন স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তারা। কিন্তু এ নিয়ে কে দেবে সিদ্বান্ত। কোনো কার্যকর উদ্যোগ পরিলক্ষিত হচ্ছে না। ভাব এমন- দেখি কী হয়। দেখি দেখি করে যেনো সব শেষ হয়ে যায়। সিলেট আউলিয়ার শহর। সিলেট পুণ্যভুমি। সিলেটের মানুষ শান্তিপ্রিয়। আইনকে মান্য করে সবাই। এই সিলেটকে রক্ষা করতে উদ্যোগও কম হয়নি। জনপ্রনিধিরা চেষ্টা করেছেন সিলেটকে আইসোলেটেড করতে। প্রশাসনের সহযোগিতা চেয়েছেন। কিন্তু করা যায়নি। হাসান মার্কেট ইতিমধ্যে ‘করোনা মার্কেটে’ আখ্যায়িত পেয়েছে। দিনের বেলা হাসান মার্কেটের দিকে তাকালেই আতঁকে উঠেন সবাই। ফুটপাতও দখল হয়ে গেছে। কেউ কিছু দেখছে না। কেউ কিছু বলছে না। সবাই নিরব। এই নিরবতা রহস্যময়। এই নিরবতা আত্মঘাতীও। আপসোস অন্য জায়গায়। সিলেটকে নেতৃত্ব দিয়ে গেছেন জাদরেল রাজনীতিবিদ ও বরণ্য ব্যক্তিরা। সিলেটকে নিয়ে তারা স্বপ্নের বীজ বুনেছিলেন। তাদের দেখা স্বপ্নে সিলেট এখন উন্নত জনপদ। প্রয়াত স্পিকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরী, এম সাইফুর রহমান ও সর্বশেষ আবুল মাল আব্দুল মুহিতের হাত ধরে গড়ে উঠা উন্নত জনপদ সিলেটে মানুষ স্বপ্ন দেখা শুরু করেছে। করোনায় যেনো সেই স্বপ্ন আবার ফিকে হতে শুরু করেছে। সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের উপ পরিচালক ডা. হিমাংশু লাল রায় সিলেটের করোনা পরিস্থিতি দেখে বিচলিত। নিজ থেকে স্বাস্থ্য বিভাগের কর্মকর্তাদের পরামর্শ দিয়েছেন। কিন্তু প্রতিফলন হচ্ছে না। বলতে বাধ্য হচ্ছেন- ‘সিলেটের যেনো কোনো অভিভাবক নেই।’ আমরা তাকিয়ে আছি- পররাস্ট্রমন্ত্রী ও সিলেট-১ আসনের এমপি বরণ্য কুটনীবিদ ড. একে আব্দুল মোমেন ও মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী দিকে। তাদের নেতৃত্বের সময়েই প্রিয় সিলেট আজ বড়ই কঠিন বাস্তবতার মুখোমুখি। সিলেটের মানুষের জীবন নিয়ে প্রশ্ন এখন। সুতরাং রাজনীতির ময়দানে যতই দুরত্ব থাক- এখনই প্রয়োজন সিলেটে সব জনপ্রতিনিধি, রাজনীতিবিদ, পেশাজীবি সংগঠনের মানুষকে এক কাতারে আসা। এখনই সময় সঠিক সিদ্বান্ত নেওয়ার। নতুবা- লাশের মিছিল কতোটা দীর্ঘ হবে- আমরা জানি না।-(লেখক : ব্যুরো প্রধান, সিলেট : দৈনিক মানবজমিন)।