• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

করোনা থেকে বাঁচতে যে অভ্যাসগুলো অবশ্যই করবেন

bijoy71news
প্রকাশিত জুন ৯, ২০২০

সজীব চক্রবর্তী ::
করনার দামামা বাজছে আজ গোটা বিশ্ব জুড়ে। উন্নত থেকে অনুন্নত সকল দেশই আজ বিপর্যয়ের শিকার। সতর্কতার অংশ হিসেবে সকল দেশই লকডাউন প্রসেস গ্রহণ করলেও তা যে স্থায়ী সমাধান নয়; তা ধীরে ধীরে প্রতিয়মান হয়ে উঠলে প্রায় সকল দেশই এখন লকডাউন তুলে নেয়ার পথে হাটছে।
বিশ্ব সাস্থ সংস্থার মতে, করনা অন্যান্য রোগের মতোই হয়তো স্থায়ীভাবে থেকে যেতে পারে আমাদের মাঝে। বর্তমানে আক্রান্তের সংখ্যার সাথে বাড়ছে লাশের মিছিল , সেই সাথে বাড়ছে আতঙ্ক। আজ হোক, আর কালই হোক আমাদের সকলকেই মেনে নিতে হবে এ সমস্যার সমাধান সহসাই হচ্ছে না তবে এটাও ভুললে চলবে না সকলের সচেতনতাই পারে এই সমস্যা থেকে যথেষ্ট পরিমাণ পরিত্রাণ দিয়ে আমাদের সুস্থ রাখতে। একজন সচেতন নাগরিক হিসেবে আপনাকে বুঝতে হবে লকডাউন কোন স্থায়ী সমাধান ছিল না বা আগামীতেও হবে না বরং এটি ছিল আমাদের ব্যক্তিগত অভ্যাস পরিবর্তনের সময় তদুপরি কি ভাবে আমরা করোনাকে জয় করতে পারি তার প্রস্তুতি গ্রহণের সুযোগ। কোনো সরকার বা কোনো সংগঠনের একার পক্ষে এই মহামারি ঠেকানো সম্ভব নয়, যদি আমরা সচেতন না হই।
বিষেজ্ঞদের মতে, করোনা থেকে নিজেকে সুরক্ষিত রাখতে সব সময়ের জন্য কিছু নিয়ম মেনে চলার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে সকলের। তাহলে হয়তো করোনার সঙ্গে বসবাস করেও আক্রান্ত হওয়া থেকে নিজেকে এবং অন্যকে বাঁচিয়ে রাখা মানুষের জন্য সহজ হবে।
আসুন জেনে নিই করনাকে হারাতে ব্যাক্তিগত ভাবে আমরা কি কি ভাবে সচেতন হয়ে ঊঠতে পারিঃ
১. করোনা থেকে বাঁচতে হাত ধোয়ার অভ্যাসটি অবশ্যই ধরে রাখতে হবে। গণপরিবহনে উঠলে, ভিড় পথে চলাফেরার পর, লিফটের বোতাম, দরজার হাতল বা সিঁড়ির রেলিং ধরলে, অনেকে ব্যবহার করে এমন কিছুতে হাত দিলে, টাকা দেওয়া-নেওয়া করলে সেই হাত নাকে-মুখে-চোখে বা অন্য কোথাও লাগার আগেই ভালো করে ধুয়ে নিতে হবে।
২. চোখ, নাক ও মুখ হচ্ছে করনার প্রবেশদ্বার এবং হাত হচ্ছে সবচে বেশি ব্যবহৃত অংগ৷ যা করনার বাহক হিসেবে কাজ করে। তাই অপরিস্কার হাত মুখ মন্ডলে ছোয়ানোর ক্ষেত্রে অত্যধিক সতর্ক হতে হবে।
৩. বাইরে বের হওয়ার সময় সঙ্গে ছোট একটা সাবান ও ৭০ শতাংশ অ্যালকোহল আছে এমন স্যানিটাইজার বা লিকুইড হ্যান্ড ওয়াশ সাথে নেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলতে হবে।
৪. রাস্তায় বের হলে এখনকার মতো সবসময় মাস্ক ব্যবহার করতে হবে। অফিসেও মাস্ক পরে থাকতে হবে। কাপড়ের ট্রিপল লেয়ার মাস্কও ভালো কাজ করে। বাড়ি ফিরে সাবান পানি দিয়ে মাস্ক ধুয়ে শুকিয়ে নিন।
৫. মাস্ক পরলেও সর্বক্ষেত্রে অন্যদের সঙ্গে নূনতম ৩ ফুট দূরত্ব বজায় চলাফেরা করতে হবে। যেখানে সেখানে কফ, থুতু ফেলা বন্ধ করতে হবে এবং হাঁচি দিতে হবে শিসঠাচার মেনে।
৬. চোখ নিরাপদ রাখতে ক্লিয়ার চশমা না হয় সানগ্লাস ব্যবহার করুন। কারণ চোখ দিয়েও জীবাণু ঢুকতে পারে।
৭. নারীদের বড় চুল হলে বাইরে বেরুনোর আগে ভালো করে বেঁধে নেবেন। গণপরিবহন ব্যবহার করলে খোলা চুল অন্যের নাকে-মুখে উড়ে লাগতে পারে। সেই চুল পরে নিজের নাকে-মুখে লাগলে বিপদ হতে পারে।
৮. বাইরে বের হলে নিয়মিত ধোয়া যাবে এমন জুতা ব্যবহার করুন।
৯. বাইরে বের হবার সময় যে জিনিস গুলো অতি জরুরী শুধুমাত্র সে সকল জিনিসই সাথে নিয়ে বের হোন। কারন ঘরে ফিরে প্রত্যেকটি জিনিসই জীবানুমুক্ত করতে হবে।
১০. অফিসে নিজের জন্য আলাদা কাপ, প্লেট রেখে দিন। খাওয়ার আগে সেগুলো সাবান-পানি দিয়ে ধুয়ে ব্যবহার করুন।
১১. বাইরে খাওয়ার অভ্যাস থেকে বিরত থাকুন। বাসা থেকে নিয়মিত খাবার নিয়ে যান। এ সময় রাস্তার পাশের কোনো দোকান থেকে কিছু খাওয়া ঠিক নয়।
১২. জুতা বাইরে খুলে ঘরে ঢুকবেন। জুতায় জীবাণুনাশক স্প্রে করে প্রতিদিন রোদে দিন। না হয় ধুয়ে ফেলুন। সেই সাথে গাড়ির চাকা জীবানুমুক্ত করতে ভুলবেন না।
১৩. খেয়াল রাখতে হবে বাইরে থেকে ফিরে জীবানুমুক্ত হওয়ার আগে ঘরের কোন জিনিসকেই ধরা যাবেনা। অথবা ধরলেও তা জীবানু মুক্ত করে নিতে হবে। যেমন তালা, দরজার হ্যন্ডেল, পর্দা।বাইরে থেকে ফিরে জামাকাপড় অবশ্যই ধুয়ে ফেলবেন। প্রতিদিন সাবান ব্যবহার করে গোসল করুন।
১৪. মোবাইল,মানিব্যাগ, ভ্যানিটিব্যাগ জীবাণুমুক্ত করতে স্যানিটাইজার ব্যবহার করুন।
১৫. ঘরে বাজার করে আনা প্যাকেটজাত খাদ্য সামগ্রী যথা সম্ভব জীবানুমুক্ত করুন। প্যাকেটজাত ছাড়া খাদ্য সামগ্রী কমপক্ষে ২ দিন আলাদা করে রেখে দিন। মনে রাখবেন ঠান্ডা আবহাওয়ায় করনা ভাইরাস বেশি সময় বাচতে পারে তাই ফ্রিজে কিছু রাখার আগে ভালো করে জীবানুমুক্ত করে নিন।
১৬. বাড়িতে কেউ এলে ঘরে ঢোকার আগে হাত এবং পা ভালো করে সাবান পানি দিয়ে ধুতে উৎসাহিত করুন। চলে যাবার পর বসার স্থান জীবানুমুক্ত করুন।
১৭. খাওয়া-দাওয়ার দিকে বিশেষভাবে লক্ষ্য রাখতে হবে। এ সময় ভাজাপোড়া এবং ঠান্ডা জাতীয় খাবার কম খাওয়াই ভালো। এর পরিবর্তে খাদ্য তালিকায় রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বাড়ায় এমন খাবার রাখতে হবে। ভিটামিন সি জাতীয় খাবার যেমন লেবু, কমলা, আনারস ইত্যাদি খেতে হবে। দিনে অন্তত ২ বার আদা লবন দিয়ে চা খেতে পারলে খুব ভালো। কুসুম গরম পানি পান করুন এবং সেই সাথে গরম ভাপ নেয়ার অভ্যাস গড়ে তুলুন।
১৮. প্রতিদিন ১৫-৩০ মিনিট হাল্কা ব্যায়াম করার অভ্যাস গড়ে তুলুন। এটি শরীরে রোগ প্রতিরোধ ক্ষমতা বৃদ্ধি করে।
রোগ যেমন রয়েছে তেমনি তার প্রতিরোধ ব্যাবস্থা ও রয়েছে। আমাদের প্রত্যেকের এই সচেতনতা গুলো একত্রিত ভাবে সকলকেই নিরাপদ থাকতে সাহায্য করবে। আতংক থেকে বের হয়ে সকলের মিলিত সচেতনতাই পারে আমাদের জীবনযাত্রা আবার “নতুন সাভাবিক” করে তুলতে।