মুহাম্মদ তাজ উদ্দিন ::
ফেসবুকে একটা স্ট্যাটাস দিয়েছিলাম- ‘একটি ফলস নেগেটিভ, এক শ’ ফসল পজেটিভের চেয়ে ভয়ঙ্কর’। আমার এই স্ট্যাটাস দেখে আমার এক বন্ধু, যিনি সরকারী দলের একজন বড় নেতা ফোন করে জিজ্ঞেস করলেন- সরকারকে বাঁশ দিতে আরাম লাগে, না? আমি বললাম, না, আমরা সরকারকে বাঁশ দেই না। বরং গণমাধ্যম কর্মী হিসেবে অসঙ্গতি তুলে ধরে সরকারের নজরে আনার চেষ্টা করি। বললাম, আমরা সাংবাদিকরা হাউকাউ না করলে এখনো সিলেটে করোনার টেস্ট-ই চালু হতো না। আমরা হাউকাউ না করলে করোনা রোগী ঢাকায় কেন গেল- তার ব্যাখ্যা জনগণ কোনদিন পেতনা। আমরা হাউকাউ না করলে, সিলেটে বেসরকারী ক্লিনিকগুলোকে করোনা চিকিৎসায় কাজে লাগানোর চিন্তা ভাবনা শুরু হতো না। আমি বাংলাদেশের উপর আস্থা রাখি। এদেশের মাটি ও মানুষের উপর আস্থা রাখি। অসম্ভবকে সম্ভব করার অপার্থিব এক ক্ষমতা নিয়ে জন্ম নিয়েছে বাংলাদেশের মানুষ। মাত্র নয় মাসে দেশ স্বাধীন করে ফেলা যাদের পক্ষে সম্ভব, একান্ত নিজের চেষ্টায় উঠে দাঁড়িয়ে যে দেশ তৈরী পোষাক শিল্প ক্ষেত্রে বিশ্বে দুই নম্বর অবস্থান নিতে পারে। যে দেশে বিশ্বের ১৯০টি দেশে ঔষধ বিক্রি করতে পারে। সেই দেশ ও দেশের মানুষের উপর আমার অগাধ আস্থা। আমি আস্থা রাখতে চাই। করোনা পরিস্থিতিতে বিশ্বময় একটি দাবী চলছে- বেশী বেশী পরীক্ষা করার। আমরা সিলেটের গণমাধ্যম কর্মীরাও এই দাবী জোরালো ভাবে তুলি। সিলেটে পরীক্ষার ব্যবস্থা কেন নেই- আমরা প্রশ্ন তুলি। পররাষ্ট্র মন্ত্রী জবাব দিতে বাধ্য হন- সিলেটে পরীক্ষার ব্যবস্থা হচ্ছে। চট্টগ্রাম ও নোয়াখালিতে করোনা পরীক্ষার কিট পৌছে গেল- সিলেটে কেন আসছেনা- আমরা প্রশ্ন তুলি। কর্তৃপক্ষ জবাব দিতে বাধ্য হন। কিট আসে। আমরা সাংবাদিকরা প্রশ্ন তুলি- সিলেটে আরটি-পিসিআর মেশিন কবে আসছে? স্থানীয় প্রশাসন জবাব দিতে বাধ্য হন- সিলেট ওসমানী হাসপাতালে দ্রুততম সময়ে মেশিন বসানো হচ্ছে। সিলেটের সাংবাদিকদের এটি পেশাদারিত্ব ও জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতা। সিলেটের এই চরম দুঃসময়ে সিলেটের গণমাধ্যম কর্মীরাই জনগণের প্রতিনিধিত্ব করছেন। গণামাধ্যম কর্মীরাই এখন পর্যন্ত জীবনের ঝুকি নিয়ে সরকারী কাজের অসঙ্গতি- অগ্রগতির কথা জানিয়ে চলেছেন সিলেটবাসীকে। প্রায় ৪ দিন হলো সিলেটে করোনা পরীক্ষা কেন্দ্র চালু হয়েছে। এখন পর্যন্ত একটি পরীক্ষাতেই পজেটিভ আসে নাই। অনেকেই সিলেটে করোনা পরীক্ষা যথাযথ হচ্ছে কি-না তা নিয়ে প্রশ্ন উত্থাপন করছেন। -করোনা পরীক্ষার যে মেশিন বসানো হয়েছে- তা মান সম্পন্ন কি-না? -যারা এই মেশিন চালান তাদের সে ধরনের সক্ষমতা আছে কি-না? -যে স্যাম্পল পরীক্ষা করা হচ্ছে, সেগুলো যথাযথভাবে সংগ্রহ করা হয় কি-না? -পরীক্ষার যে ফলাফল আসছে, তা আবার ঢাকায় ক্রসচেক করা হচ্ছে কি-না? —-এ ধরনের অসংখ্য প্রশ্ন ঘুরপাক খাচ্ছে ফেসবুকের নিউজ ফিডে। ক্ষীণ সন্দেহ যে আমারো নেই- তা নয়। তবে, আমি আশাবাদী মানুষ। আমি আস্থা রাখতে ও বিশ্বাস করতে ভালবাসি। আশার কথাগুলো একটু বলি- -ওসমানী হাসপাতালের অধ্যক্ষ নিজেই একজন এক্সপার্ট ভাইরোলজিস্ট। ভদ্রলোককে আমি ব্যক্তিগতভাবে চিনি। তিনি এই সিলেটের মানুষ। তিনি ও আমি এক সাথে হজ্ব করেছি। মক্কা মদীনা সফর করেছি। অত্যন্ত মনখোলা মানুষ। নিজের পেশার প্রতি দায়বদ্ধ। আমি আশাবাদী- একজন ভাইরোলজিস্ট হিসেবে নিজের জ্ঞান ও মেধার সর্বোচ্চ ব্যবহার নিশ্চিত করে সিলেটে করোনার যথাযথ ফলাফল নিশ্চিত করতে কোনরূপ শৈথিল্য করবেনা তিনি। মানুষ তো মায়ের পেট থেকে কিছু শিখে আসেনা। সিলেটে যে মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা করোনা টেস্টে নেমেছে, এরা তো বেসিক জ্ঞান নিয়েই কাজে নেমেছে। আর ইন্টারনেটের এই যুগে যে কেউ ইচ্ছা করলেই তার নিজ ফিল্পে বিশেষজ্ঞ হয়ে যেতে পারে। সুতরাং, সিলেটের মেডিক্যাল টেকনোলজিস্টরা প্রথমে হয়তো ভুল করবে। ভুল করতে করতে এক সময় এরা শিখে যাবে। আমরা আশা করবো- তাদের হাত দিয়ে ভুল রিপোর্ট আসছে না, আসবেও না। প্রশাসন, সরকারী ও গণমাধ্যম এবং বর্তমানের সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম- সব খানে কি আমরা কেবল সমালোচনাই করি। সিলেটে ইতোমধ্যে যে টেস্টগুলো হলো, সেগুলোর মধ্যে নেগেটিভ আসা কারো কি অবস্থার অননতি হয়েছে- এ তথ্য খুঁজেছেন গণামধ্যম কর্মীরা। শেষ খবর পাওয়া পর্যন্ত, সিলেটে কোথাও এ ধরনের করোনা সন্দেহে মৃত্যুর খবর পাওয়া যায়নি গত ৩ দিনে। বা যাদের পরীক্ষা করা হয়েছে- তাদের কেউ এখনো আক্রান্ত হয়েছেন মর্মে নিশ্চিত হওয়া যায়নি। এসব খবর গণমাধ্যম ও সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে আমরাই জানাচ্ছি মানুষকে। ফলে, মানুষের আস্থা ও মনোবল এখনো অটুট আছে। আর তাই আমরা আস্থা রাখি। এদেশের মাটি ও মানুষের উপর। এদেশের মানুষ আর যাই হোক- এখন আর অন্ধ-অশিক্ষিত নয়। অন্ধ হলেই যে প্রলয় বন্ধ থাকেনা- এটা এদেশের মানুষ জানে। আমি আস্থা রাখি- করোনা চিকিৎসায় নিয়োজিত সিলেটের সকল ফ্রন্ট লাইন কর্মীর উপর। কারণ, আমার বিশ্বাস- তারা আত্ম প্রবঞ্চনাকে প্রশ্রয় দেবেন না। সিলেটে করোনা পরীক্ষার ভুল তথ্য দিয়ে নিজের সাথে তারা প্রতারণা করবেনা- এটি আমার দৃঢ় বিশ্বাস। আর তাই আসুন- আল্লাহর উপর বিশ্বাস রাখি। মানুষের উপর আস্থা রাখি। ইনশাআল্লাহ, দুর্যোগ কেটে যাবে। আসবে সোনালী ভোর।
(লেখক : সিনিয়র সাংবাদিক ও আইনজীবী)