• ২৭শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২৫শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ভয় হচ্ছে খুব!

bijoy71news
প্রকাশিত মে ২৩, ২০২০

নুরুল হক শিপু, অতিথি লেখক ::

প্রথম যখন গণমাধ্যমে কাজ শুরু করি, তখন লাশ দেখলে খুব ভয় হতো! অনেক রাত নির্ঘুম কেটেছে! বিশেষ করে কেউ খুন হলে কিংবা প্রতিহিংসায় ধারালো অস্ত্রের অাঘাতে গুরুতর আহত হলে-ছুটে যেতাম ঘটনাস্থ কিংবা ওসমানী হাসপাতালে। একটা পর্যায় এসব দেখে দেখে ভয় কেটে যায়। মৃত মানুষ, অজ্ঞাত লাশ, নদীতে ভেসে থাকা কয়েকদিনের পঁচেগলে যাওয়া নিথর দেহও দেখেছি! দেখেছি প্রশাসন কীভাবে তাদের উদ্ধার করে-তাও। সকল ভয় কাটে যখন হাসপাতালের লাশ কাটা ঘরে ঢুকি তখন; অবশ্য প্রথম কয়েক মিনিট নিজে নিজের মধ্যেই ছিলাম না। পরে স্বাভাবিক হয়েছি৷ যখন দুজন ডোমের জীবনের গল্প লিখলাম তখন লাশ কাটা ঘরে ছিলাম ১ ঘন্টা। আচ্ছা ডোম সম্পর্কে একটু বলি-কোনো মানুষের অপমৃত্যু হলে তাকে দাফনের আগে তার পোস্টমর্টেম করা হয়। যে স্থানে বা গৃহে পোস্টমর্টেম বা ময়নাতদন্ত করা হয় তাকে বলা হয় লাশ কাটা ঘর। ডাক্তারি পরীক্ষা এবং অন্য কাজ সম্পাদনের পর যিনি মৃতদেহকে ব্যবচ্ছেদ করেন তাকেই ডোম বলা হয়। দেশের সরকারি হাসপাতালগুলোর লাশ কাটা ঘরে বা মর্গে বছরে এক দিনও ছুটি না নিয়ে যে মানুষটি লাশের কাটা ছেড়া কাজে নিজেকে সর্বক্ষণ নিয়োজিত রাখেন তিনিই ডোম। লাশ কাটা ঘরে ডোম ছাড়া হাসপাতালের মর্গ অচল। অনেকবারই সে ঘরে যাওয়া হয়েছে। এর মানে ভয় পুরোপুরিই কেটে গেছে। এভাবেই বিভিন্ন ঘটনা-দুর্ঘটনা নিয়ে কেটে গেল ১১ বছর। কিন্তু বর্তমানে করোনা ভাইরাস আমাকে নতুন করে আতঙ্কিত করেছে। ভয় কিসের জানেন? অজানায় ভয় নয়; জানা শোনা ভয়, সে ভয় আবারো চোখের ঘুম কেড়ে নিয়েছে! ঠিক সাংবাদিকতার শুরুর গল্পেরমতো। কারণ যারা করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা যাচ্ছেন-তাদের কথা চিন্তা করে। আক্রান্ত থেকে মৃত্যু! নিজের প্রিয়জনও পাশে পায় না। আক্রান্তদের সেবা দিচ্ছেন সম্মুখযোদ্ধা চিকিৎসকেরা, আর মৃত ব্যক্তির দাফন-কাফনের দায়িত্বটা নিচ্ছেন আরেক সম্মুখযোদ্ধা প্রশাসনের লোকেরা। শেষ বিদায়ে বাবা ছেলে থেকে দূরে, ছেলে বাবা থেকে! মায়ের লাশ ফেল সন্তানদের পালিয়ে যাওয়ার ঘটনাও ঘটেছে দেশে। কি নির্মম! চিন্তা করেন বর্তমানে বাস্তবতা এমনই সিনেমার শেষ দৃশ্য থেকেও নির্মম, কতো কঠিন। যেসকল মরদেহ লাশ কাটা ঘরে নেওয়া হয়, সেগুলোর কিন্তু দাফন-কাফন সবই হয়েছে। কতোশত লোক সমাগম ঘটেছে জানাজায়-তাতো সবারই দেখা। কিন্তু করোনার মৃত্যু এতোই ভয়ঙ্কর কবরে নামাতে স্বজনদেরও পাশে মিলে না। দয়া করে কয়েকটা দিন ঘরে থাকুন। বেঁচে থাকলে সব স্বাদইতো পুরো করতে পারবেন। একবার ভাবুন নিজের কথা, নিজের সংসারের কথা, নিজের শহর আর দেশের কথা।  সবার জন্যই ভয় হচ্ছে, ভয় হচ্ছে খুব!

(লেখক-সিলেট প্রতিনিধি, দৈনিক অামাদেরসময়)।