• ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

“প্রবাসী তুমি স্বার্থপর”

bijoy71news
প্রকাশিত এপ্রিল ২, ২০২০

সাইদুল ইসলাম অপু  ::

প্রবাসীদের নিয়ে ২০১৪ সালে লেখা আমার এই স্ট্যাটাসটি ২০২০ সালের এই করোনা ভাইরাসের সময়ও কতো সুন্দর করে চালিয়ে দেয়া যাবে, প্রবাসীরা বলির পাঁঠা আগেও ছিলেন, এখনো আছেন, ভবিষ্যতেও থাকবেন।
তা না হলে কি ২০২০ সালে এসে ফেসবুকে ভাইরাল হয়…
* টাকা তো পাঠান মিয়া (প্রবাসীরা) আপনাদের পরিবারের জন্য, দেশের জন্য কি কোনো দিন আলাদে করে টাকা পাঠাইছেন??? আবার কথায় কথায় কন রেমিটেন্স যোদ্ধা***
এখন যে প্রবাসীরা দলে দলে বাংলাদেশের অসহায় মানুষের জন্য সাহায্যের হাত এগিয়ে দিচ্ছেন তাহলে এখন কেন বলচ্ছেন না যে, “প্রবাসীর দান করা নিষেধ” আজব,,,,,,,,,,,,,
” প্রবাসী তুমি স্বার্থপর “
প্রবাস নিয়ে একটা কথা প্রচলিত আছে, সেটা হচ্ছে ” মানুষ প্রবাসে আসে বিমানে আর দেশে ফিরে কফিনে ” সত্য কথাটা বলার জন্য ক্ষমা চাচ্ছি লক্ষ-কোটি প্রবাসী ভাইবোনদের কাছে, আমার পরিচিত আব্দুল হাই ভাইকে আমি চিন্তাম প্যারিসে আসার পর থেকেই, বয়স ছিল ৪২-এর কাছাকাছি, দেশে শিক্ষকতা করতেন, বিয়ে-শাদি করেননি, বাবা-মাও মারা গেছেন সে অনেক আগে, পরিবার বলতে ভাইবোন ও তাদের সন্তানাদি, সবসময় পেরেশান থাকতেন দেশে টাকা পাঠানোর জন্য, দেখা হলেই বলতেন আমার ভাতিজা মাদ্রাসায় পড়ে ওরে অনেক বড় আলেম বানাবো, পরেরবার অন্য কাউকে নিয়ে স্বপ্নের কথা গল্প করতেন, কিন্তু নিজের জন্য কোনো স্বপ্ন নেই, কাজ কিংবা ভ্রাম্যমাণ ব্যবসা করে যা আয় করতেন নিজের থাকা-খাওয়ার খরচ বাদে বাকি সব পাঠিয়ে দিতেন বাংলাদেশে, বছর ২ আগে হটাৎ হৃদযন্ত্রের ক্রিয়া বন্দ হয়ে মারা গেলেন, মারা যাওয়ার পর উনার লাশ আমরা দেশে পাঠানোর ব্যবস্তা করি, কিন্তু সে জন্য অনেক টাকার দরকার, উনার নিজের কাছে কোনো জমানো টাকা ছিল না, প্যারিসে কোনো একজন বাংলাদেশিকে অল্প কিছু টাকা ধার দিয়েছিলেন, এতটুকুই, পরে আমরা প্যারিসে বসবাসরত বাংলাদেশিদের কাছে সাহায্যের জন্য আবেদন করি, আমাদের আবেদনের প্রেক্ষিতে প্রবাসীদের কাছ থেকে বিপুল সাড়া পাই, সবার সম্মিলিত প্রচেষ্টায় উনার লাশ দেশে পাঠানো হয় এবং অবশিষ্ট বিশাল অঙ্কের টাকা উনার পরিবার-পরিজনের কাছে হস্তান্তর করা হয়, সব প্রবাসীর ক্ষেত্রে এমন সুভাগ্য হয় না, আমি নিজে ২০১১ সালে একজন বাংলাদেশি প্রবাসী নিখিল কর্মকারের লাশ নিয়ে পত্রিকায় সংবাদ লিখেছিলাম, দেশে পাঠানোর মতো টাকা নেই বলে যার লাশ দীর্ঘ একমাস প্যারিসের হিমাগরে পরে ছিল, বাংলাদেশ দূতাবাসও যার সাহায্যে এগিয়ে আসেনি, পরিহাসের বিষয় বেঁচে থাকতে ঐ নিখিল কর্মকারই দেশে রেমিটেন্স পাঠিয়ে দেশের অর্থনীতি সচল রাখতে অবদান রেখেছিল, অতচ প্রবাসীরা সবসময় অনেকের কাছে স্বার্থপর, হারামি, উন্নত জীবনযাপন কারি, অঢেল সম্পদের মালিক,অতীত ভুলে যাওয়া একজন মানুষ হিসেবে পরিচিত, একজন প্রবাসীকে নিরান্তর যুদ্ধ করে যেতে হয় পৃথিবীর বিভিন্ন দেশের মানুষ, ভাষা ও প্রতিকূল পরিবেশের সাথে, দূর থেকে কেউ বুজতে চাইনা আমাদের ঐ ভাইটি, বন্ধুটি কতটুকু ভালো আছে প্রবাস বিভূঁইয়ে, আমরা শুধু নিজের চাওয়া-পাওয়ার হিসাব কষি একজন প্রবাসীর কাছে, চাহিদা মতো পেলে খুশি হই আর না পেলে মনক্ষূন্ন হই এবং উপরের গালি গুলো দিয়ে থাকি কিন্তু আমরা একবারও খবর রাখি না আব্দুল হাই কিংবা নিখিল কর্মকারদের মতো প্রবাসীদের যারা শেষ নিঃশ্বাস অব্দি চেষ্টা করে অন্যকে খুশি রাখার, তাই অনেকের মতো আমিও বলি ” প্রবাসী তুমি স্বার্থপর ” তবে অন্যের জন্য নয়, নিজের জন্য,,,,,,,,,,,,,,,
বিঃ দ্রঃ – (আমার এ লেখাটি কাউকে আহত করার জন্য নয়, শুধু প্রবাসীদের বাস্তবতাটি তুলে ধরার জন্য )
…লেখক : সাংবাদিক, ফ্রান্স।