ফোজায়েল ইসলাম মুহিত, ফেঞ্চুগঞ্জ :
মরহুম মো:আরফান আলী (চেয়ারম্যান) প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ ফেঞ্চুগঞ্জ তথা সিলেট বিভাগের এই জাঁদরেল রাজনৈতিক ব্যক্তিত্বের জন্ম ১৯১৮ সালে ঘিলাছড়ার যুধীস্টিপুর গ্রামে এক সম্ভ্রান্ত মুসলিম পরিবারে।উনার বাবার নাম আহমদ উল্লাহ মাতার নাম তৈমুছা বিবি।
মরহুম আরফান আলী ছোট বেলা থেকেই খুব মেধাবী ছিলেন আর ছিলেন খুব বিচক্ষণ। উনি উনার শৈশবের বেশিরভাগ সময় কাটিয়েছেন উনার নানার বাড়িতে
উনি ভাদেশ্বর কোন এক প্রতিষ্ঠান থেকে এন্ট্রান্স পাস করেন ( প্রতিষ্ঠান এর নাম জানা সম্ভব হয় নি)। এর পরে তিনি কর্ম জীবনে প্রথমে কলকাতায় জাহাজ কোম্পানিতে দীর্ঘ দিন চাকুরী করেন এবং রাজনীতির সাথে নিজেকে জড়িত রাখেন। তখন প্রথমে মুসলিম লীগ এবং পরে আওয়ামী মুসলিম লীগ করেন। এর পরে যখন আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা হয় তখন তিনি জাতির জনকের আদর্শে উজ্জীবিত হয়ে উনার নেতাকর্মী দের নিয়ে আওয়ামীলীগ এ যোগদান করেন এবং ফেঞ্চুগঞ্জ এ আওয়ামীলীগ প্রতিষ্ঠা করেন। উনি তখন প্রতিষ্টা আওয়ামীলীগ কমিটির সভাপতি এবং উনার অত্যন্ত ঘনিষ্ঠ সহচর উনার অনুজ মরহুম আব্দুল লতিফ সাহেব সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন।
তখনকার সময় উনার ঘনিষ্ঠ সহচর ছিলেন মরহুম আব্দুল লতিফ,মরহুম মইজউদ্দিন আহমদ, স্বর্গীয় ডা: আর কে দাস,মরহুম ডা:দেওয়ান নুরুল হোসেন চঞ্চল, মরহুম হাজি তজম্মুল আলী(ঘিলাছড়া), মরহুম তজমুল আলী চেয়ারম্যান (পালবাড়ি), মরহুম আব্দুল মছব্বির মগই মিয়া,মরহুম মো:আব্দুল আলী, মরহুম বশির আলী, মরহুম মো:ফিরু মিয়া, মরহুম আব্দার মিয়া, শাহ আজিজ আহমদ (মৌলভীবাজার), এডভোকেট লুতফুর রহমান (চেয়ারম্যান সিলেট জেলা পরিষদ) সহ নাম না জানা অনেকে।
মরহুম আরফান আলী চেয়ারম্যান সিলেট জেলা আওয়ামীলীগ এর প্রতিষ্ঠাকালীন সিনিয়র সহ সভাপতি ছিলেন।উনি ছিলেন একজন সৎ সাহসী এবং নির্লোভ , নিরহংকারী ব্যক্তি,উনি ছিলেন অত্যন্ত স্পষ্টবাদী, ন্যায় বিচারক।
উনি উনার সময়ে অনেক বিদ্যালয় এবং মাদ্রাসা ঘড়ে তুলেন, অনেক রাস্তাঘাট উনার আমলেই তৈরি হয় কিন্তু একটিতেও উনার নাম ফলক নেই, আওয়ামী সরকারের আমলেও এই মহান নেতার নামে একটিও রাস্তার নাম করন করা হয় নি। জানা যায়, জাতির জনক যখন আগরতলা ষড়যন্ত্র মামলার আসামী ছিলেন তখন মরহুম আরফান আলী সাহেবের নেতৃত্বে ফেঞ্চুগঞ্জ থেকে চাঁদা কালেকশন হত মামলার খরচের জন্য।
স্বাধীনতার পূর্বেকার সময় তিনি গোবিনপুর এ বর্ডার আনসারের কমান্ডার এর দায়িত্ব পালন করেন এবং পরে ফেঞ্চুগঞ্জ এর কমান্ডারের দায়িত্ব পালন করেন। উনি ছিলেন মহান মুক্তিযুদ্ধের অন্যতম সংঘটক, মুক্তিযুদ্ধের সময় তিনি দলিয় নেতাকর্মীর নির্দেশে ভারতে অবস্থান করেন এবং ফেঞ্চুগঞ্জ, বালাগঞ্জ এবং গোলাপগঞ্জ থানার কো অর্ডিনেটারের দায়িত্ব পালন করেন, ট্রেনিং শেষে উক্ত এলাকা গুলার মুক্তিযোদ্ধাদের পরিচয় পত্র দান করতেন মরহুম আরফান আলী সাহেব। এই সময় উনার সাথে ছিলেন উনার ছেলে পাকিস্তান আর্মী থেকে যুদ্ধের সময় পালিয়ে আসা ফখরুল ইসলাম ফখন সাহেব, তখন উনার সাথে ছিলেন দলিয় অনেক নেতাকর্মী যাদের নাম জানা যায় নি শুধু এডভোকেট লুতফুর রহমান ব্যতীত।
এর পরে যুদ্ধের পরে উনি আবার দেশে ফিরে আসেন এবং রাজনীতিতে সক্রিয় হোন,এবং উনার একাকার উন্নয়নে কাজ শুরু করেন,উনার মাধ্যমেই প্রতিষ্টা হয় ঘিলাছড়া দ্বিমুখী উচ্চ বিদ্যালয়, উনি ঘিলাছড়া উচ্চ বিদ্যালয় এর ম্যানেজিং কমিটির সভাপতি ছিলেন,ছিলেন ঘিলাছড়া হাফিজিয়া মাদ্রাসার সভাপতি। উনি সিলেট জেলা জুরিবোর্ড এর সম্মানিত সদস্য ছিলেন।জাতির জনক যখন কাসিম আলী মাটে আসেন তখন মরহুম আরফান আলী যাতায়াতের দুরবস্থার কারণে আসতে দেরি হলে জাতির জনক মঞ্চে উঠেন নি,তখন জাতির জনককে ঘিরে রেখে নিরাপত্তা দিয়েছিলেন মরহুম বশির আলী। জাতির জনকের নৃশংস হত্যার পরে উনি অনেকটা ভেঙ্গে পড়েন। উনি বাকশক্তি অনেক টা হারিয়ে ফেলেন। সারাদেশব্যপী ১৪৪ দ্বারা জারি থাকা অবস্থায় তিনি সারকারখানা বাজারে উনার সহযোগীদের নিয়ে তিনি জাতির জনকের শিরনি করেন। তখন উনার সাথে ছিলেন মরহুম আব্দুল লতিফ সাহেব, মরহুম ডা: দেওয়ান নুরুল হোসেন চঞ্চল, মরহুম তজমুল আলী,ডা: আর কে দাস। ১৯৮২ সালের ২ জুলাই এই মহান নেতা উনার ৮ ছেলে ৩ মেয়ে নাতি, নাতনি এবং অসংখ্য শুভাকাঙ্ক্ষী রেখে পরপারে পাড়ি জমান।
উনার বড় ছেলে মরহুম আরফান আলি ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সহ সভাপতি ছিলেন,উনার ছেলে ডা : ফখরুল ইসলাম ফখন ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা আওয়ামীলীগ এর সিনিয়র সহ সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন,উনার ছেলে বীর মুক্তিযোদ্ধা নজরুল ইসলাম উত্তর দামালকোট ক্যান্টনমেন্ট ইউনিট আওয়ামীলীগ এর সভাপতির দায়িত্বে রয়েছেন , উনার ছেলে নুরুল ইসলাম ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা যুবলীগ এর সাবেক সদস্য।
উনার ছোট ছেলে কামরুজ্জামান কামরুল ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমানে স্পেন আওয়ামীলীগ নেতা এবং জালালাবাদ এসোসিয়েশন স্পেন শাখার সভাপতি। মরহুম আরফান আলী সাহেবের নাতি ফয়সল ইসলাম লিটন ফেঞ্চুগঞ্জ ডিগ্রী কলেজের সাবেক ছাত্রনেতা বর্তমানে পরগনা বাজার বনিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক এবং বঙ্গবন্ধু ফাউন্ডেশন ঘিলাছড়া ইউনিয়নের সিনিয়র সহ সভাপতি, উনার নাতি ইফতেখার আহমেদ শিপলু ক্যান্টনমেন্ট ইউনিট ছাত্রলীগ এর সাবেক সভাপতি, উনার নাতি ইসলাহ উদ্দিন আহমেদ বাবলু ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ এর সাবেক দপ্তর সম্পাদক বর্তমানে ২২ নং ওয়ার্ড যুবলীগ উপশহর শাখার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, উনার নাতি ফোজায়েল ইসলাম মুহিত ফেঞ্চুগঞ্জ সরকারি কলেজ শেখ রাসেল পরিষদের সাবেক সাধারণ সম্পাদক, ফেঞ্চুগঞ্জ সরকারি কলেজ ছাত্রলীগ এর সাবেক সহ সভাপতি বর্তমানে সজীব ওয়াজেদ জয় পরিষদ ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা শাখার সভাপতি এবং ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ আহবায়ক কমিটির সাবেক সদস্য ,উনার নাতি নাজিমুল ইসলাম নিরব ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলা ছাত্রলীগ এর সাবেক সদস্য, ঘিলাছড়া ইউনিয়ন শেখ রাসেল পরিষদের সাবেক সভাপতি বর্তমানে ঘিলাছড়া ইউনিয়ন ছাত্রলীগ এর সভাপতি।
আপোষহীন নিরহংকারী মহান নেতার ব্যাক্তিগত এবং পারিবারিক রাজনৈতিক জীবন বর্ণাঢ্য কিন্তু আফসোস হল উনার নামে ফেঞ্চুগঞ্জ এ একটি রাস্তা পর্যন্ত নেই এমনকি ভুল বশত কোন দিন উনার নামে কোন দোয়া বা মিলাদ মাহফিল হয় না এমনকি উনার মৃত্যুবার্ষিকীতেও হয় না। এটাই কি ছিল এই বিপ্লবী নেতার রাজনৈতিক জীবনের প্রাপ্তি।