মুহাররম মাসের দশ তারিখ “আশুরা” নামে খ্যাত। আশুরা এর শাব্দিক অর্থ দশম। সাধারণত: আশুরা বলতে মুহাররমের দশম তারিখকেই বুঝানো হয় এদিনটি ঐতিহাসিকভাবে প্রণিধানযোগ্য।
বছরের মহান ঐতিহাসিক দিবস আশুরা সমাগত এ দিন মানবতাকে স্মরণ করিয়ে দেয় অনেক গুরুত্বপূর্ণ ঘটনার কথা। এসব ঘটনায় রয়েছে ইতিহাসের জোয়ার-ভাটা ও উত্থান-পতনে গুরুত্বপুর্ণ ভূমিকা। এ দিনটির তাৎপর্য পৃথিবীর সূচনা হতেই চলে আসছে। হাদিসে এসেছে রাসূল সা. মদীনায় হিজরত করার পর দেখলেন সেখানকার বনি ইসরাঈল তথা ইয়াহুদিরা মুহাররামের দশ তারিখ রোযা রাখে। তিনি জানতে চাইলেন তোমরা এই দিনে রোযা রাখ কেন? তারা বলল এই দিনে আল্লাহ তায়ালা তার কুদরতে মুসা আ. ও তার গোত্রকে সমুদ্র পার করে নিয়েছেন, আর ফেরাউন ও ফেরাউনের বাহিনীকে সমুদ্রে নিমজ্জিত করেছেন। এর শোকর আদায় করার জন্য মুসা আ. রোযা রেখেছেন, তাই আমরাও রোযা রাখি। রাসুল সা. তখন বললেন আমরা মুসা আ. এর অনুসরণ তোমাদের চেয়ে বেশী করবো। তাই রাসুল সা. রোযা রাখা শুরু করলেন এবং সাহাবায়ে কেরামকেও রোযা রাখতে বললেন (মুসলিম) এই হলো আশুরার তাৎপর্য। নেয়ামতের শোকর আদায় করার শিক্ষা গ্রহণ করাই হলো এই দিনের শিক্ষা।
আমাদের সমাজে অনেক ধারণা, আশুরা মানেই কারবালা। আশুরাকে তারা কারবালার দিবস হিসেবে পালন করে। হায় হুসাইন হায় হুসাইন বলে মাতব করে। রাস্তায় রাস্তায় র্যালী বের করে। এসব আজগুবী কাজ করবার মানেই আশুরা নয়। আশুরা দিবসে সংঘটিত বহু ঘটনার একটি হল কারবালার ট্রাজেডি এতে কোন সন্দেহ নেই। এই দিনে হযরত হুসাইন রা. কারবালার ময়দানে অত্যন্ত নির্মমভাবে শহীদ হয়েছিলেন। উম্মতের জন্য এই ঘটনার স্মৃতি বেদনায়ক, হুদয় বিদারক- একথা সত্য, কিন্তু এই বেদনার স্মৃতি স্মরণ করার মাধ্যমে আশুরা দিবস পালন করতে হবে, একথা নবী সা. শিক্ষা দিয়ে যাননি। একটা দিনে ইতিহাসে অনেক কিছু ঘটতে পারে, কিন্তু সব কিছুর মূল্যায়ন এভাবে করতে হবে যেভাবে নবী সা. করে গেছেন।
আশুরার দিনের ফযীলত: হযরত ইবনে আব্বাস রা. থেকে বর্ণিত তিনি বলেন; আমি নবী সা. কে আশুরার দিন এবং রামাযান মাস ব্যতীত কোন ফযীলতপূর্ণ দিনের রোযার এত গুরুত্ব দিতে দেখিনি। অর্থাৎ নফল রোযার যে পরিমাণ গুরুত্ব তিনি আশুরার রোযার ক্ষেত্রে দিতেন অন্য কোন রোযার ক্ষেত্রে এ পরিমাণ গুরুত্ব দিতেন না। (বুখারী, মুসলিম)
হযরত আবু কাতাদা রা. থেকে বর্ণিত রাসূর সা. বলেন; আমি আল্লাহর কাছে আশা রাখি যে, আশুরার দিনে রোযা রাখলে পূর্বে এক বছরের গুনাহ মাফ হয়ে যাবে। (মুসলিম, ইবনে মাজাহ)
আমল: হাদীসের আলোকে আশুরার দিনে করণীয় আমল হচ্ছে- নফল রোজা রাখা। তবে দুটি রোজা রাখা উত্তম। কেননা ইবাদতে ইয়াহুদীর সাথে সাদৃশ্য হওয়ার কারণে রাসুল সা. বলেছিলেন যে, আগামী বছর যদি আল্লাহ আমাকে জীবিত রাখেন তাহলে এর সাথে আরো একটি রোজা রাখব। কিন্তু পরবর্তী বছর আসার আগেই তিনি দুনিয়া ছেড়ে চলে যান। তবে যেহেতু তিনি আগ্রহ প্রকাশ করেছিলেন বিধায় ১০ তারিখের সাথে সাথে আরো একটি রোযা রাখা উত্তম। (মুসলিম)
এটি হলো করণীয়, এর বাইরে হযরত হুসাইন রা. এর কথা স্মরণ করে, কারবালার কথা স্মরণ করে যা কিছু করা হচ্ছে, যেমন: মাতম করা হচ্ছে, বুক চাপড়ানো হচ্ছে, হায় হুসাইন হায় হুসাইন, ইয়া আলী! বলে আবেগ জাহির করা হচ্ছে, শোক মিছিল করা হচ্ছে, তাযিয়া বের করা হচ্ছে, এগুলো মানুষের সৃষ্টি করা রছম ও কুসংস্কার। কুরআন ও হাদীসে এর কোন ভীত্তি নেই। শীয়া সম্প্রদায় এ সমস্ত শুরু করেছে, আর তাদের দেখাদেখি সাধারণ মুসলমানদের মধ্যে এগুলো চালু হয়েছে।
আল্লাহ তায়ালা আমাদেরকে এগুলো থেকে হেফাযত করে আশুরার ফযীলত অর্জন করার তাওফীক দান করুন। আমীন॥