নুরুল হক শিপু ::::: সিলেট সিটি কর্পোরেশনের আওতাধীন সড়ক রয়েছে প্রায় ৩শতাধিক। দৈর্ঘের মাপে সিসিকের অধিনের রয়েছে ৫৬৮ কিলোমিটার পাকা সড়ক। তার মধ্যে ৬০ শতাংশ পাড়া-মহল্লায় এবং বাকি ৪০ শতাংশ নগরের প্রধান সড়ক। এসব সড়কের বেশিরভাগই এখন ভাঙাচোরা। শতাধিক সড়কের কার্পেটিং সরে যাওয়ার সাথে সাথে স্থানে স্থানে সৃষ্টি হয়েছে বড় বড় গর্তের। দীর্ঘদিন সংস্কার না হওয়ায় সড়কগুলোর এই দশা।
সাম্প্রতিক সময়ে সিসিক উদ্যোগ নেয় সড়ক সংস্কারের। কিছু সড়কের সংস্কারও চলছে। তবে নগরবাসী বলছেন, সিসিকের এই কাজ হচ্ছে একেবারেই দায়সারা।
২০ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আজাদুর রহমান আজাদ জানান, ‘ওয়ার্ডের অলিগলির সড়কগুলোতে কাজ করা হচ্ছে না। শিবগঞ্জ বাজার থেকে খরাদিপাড়া, আদিত্যপাড়া থেকে বালুচর পয়েন্ট, বাটাটিকর, সাদিপুর, মৌচাক আবাসিক এলাকা, লাখড়িপাড়া আবাসিক এলাকা, মজুমদারপাড়া আবাসিক এলাকা, গোপালটিলা ১, ২, ৩ নম্বর সড়কসহ ওয়ার্ডের প্রায় ১৭ থেকে ১৮টি সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে। তিনি বলেন, ওই সড়কগুলোর কাজ করানো হয়নি।’
২৬ নম্বর ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তৌফিক বকস্ লিপন জানান, ‘২৬ নম্বর ওয়ার্ডে সিসিকের যে পানির লাইন টানা হয়েছে ওই লাইনের কারণে প্রায় ১৫টি সড়ক ভেঙে গেছে। এছাড়া হুমায়ুন রশিদ চত্ত্বর থেকে মেইন রোডের পাশ দিয়ে যে লিংক রোড গেছে ওই সড়ক এবং মার্কাড মসজিদ সড়কের বেহাল দশা।’
২৭ নম্বর ওয়ার্ড কাউন্সিলর আব্দুল জলিল নজরুল জানান, ‘ওয়ার্ডের প্রায় ১৫টি সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে। বিশেষ করে হবিনন্দি ও পাঠানপাড়া সড়কের অবস্থা খুবই বেহাল।’
নগরী সড়কের মধ্যে প্রায় ১শ’ সড়কের অবস্থা একেবারেই বেহাল। বছরের পর বছর ধরে সংস্কার না হওয়ায় এ অবস্থার সৃষ্টি হচ্ছে বলে অভিযোগ ওঠেছে। গত কয়েকবছর কখনোই এসব সড়কে পুরোপুরি সংস্কার কাজ হয়নি। প্রতি বছরই উন্নয়নের নামে চলছে জোড়াতালির কাজ।
সম্প্রতি সিসিকের আওতাধিন নগরীর বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ সড়কে সিসিক কর্তৃপক্ষ শুরু করেছে কার্পেটিং এর কাজ।
ইতোমধ্যে জিন্দাবাজার, মির্জাজাঙ্গাল থেকে তালতলা, মীরের ময়দান (ব্লু-বার্ড স্কুলের সামন), রিকাবীবাজার, নয়াসড়ক ও মদিনা মার্কেট এলাকায় সৃষ্টি হওয়া গর্ত ভরাট করে কার্পেটিং করা হয়েছে।
সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত প্রধান নির্বাহী প্রকৌশলী নূর আজিজুল ইসলাম যুগভেরীকে জানান, ‘সিলেট সাধারণত বৃষ্টি একটু বেশি হয়। যার কারণে প্রায় ১০০ কিলোমিটার সড়কের কর্পেটিং উঠে গেছে। আমরা ওই ১শ’ কিলোমিটার সড়কে সৃষ্টি হওয়া গর্ত ভরাট করে কার্পেটিং কাজ করছি। ইতোমধ্যে ২৫ ভাগ কাজ সম্পন্ন হয়েছে। আগামী ১ মাসের মধ্যে পুরো ১শ’ কিলোমিটার সড়কের কাজ শেষ করা সম্ভব হবে।
প্রতিবছর গর্ত ভরাট করে কাজ করা হয়, কিন্তু পুরো সড়ক ব্যবস্থার সংস্কার করা হচ্ছেনা। এর কারণ প্রসঙ্গে তিনি বলেন, ‘সাধারণত কোনো সড়কের ৭০ ভাগ কার্পেটিং উঠে গেলে ওই সড়ক পুরোপুরি সংস্কার করতে হয়। অন্যথায় শুধু কার্পেটিং করলেই চলে।’
প্রধান প্রকৌশলী বলেন, ‘নগরীর নবাবরোড় সড়ক ৭০ ভাগের উপরে ভেঙে গেছে। ওই সড়কের টেন্ডার আহবান শেষে ওয়ার্ক অর্ডারও হয়েছে। আগামী ১০ দিনের মধ্যে ওই সড়কের পুরোপুরি সংস্কার কাজ শুরু হবে।’
তিনি বলেন, ‘বর্তমানে প্রায় ৩০টির মতো সড়ক কার্পেটিং এর উপযোগী বলে আমরা মনে করছি।’
কার্পেটিং করানোর আগে টেন্ডার আহবান করা হয়েছে কিনা এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, ‘গর্ত ভরাটের ব্যাপার, তাই টেন্ডার আহবান করার প্রয়োজন হয়নি। সিসিকের পক্ষ থেকে কাজ করানো ও তদারকি চলছে।’
এদিকে, সিসিকের ভারপ্রাপ্ত প্রধান প্রকৌশলী নূর আজিজুল ইসলাম বর্তমানে ২৭টি ওয়ার্ডে ৩০টির মত সড়ক ভাঙার তথ্য দিলেও কর্পোরেশনের একাধিক কাউন্সিলরের সাথে কথা বলে জানা যায়, সিসিকের প্রায় ১শ’ সড়কের কার্পেটিং উঠে গেছে। শুধু ২৬ ও ২৭ নম্বর ওয়ার্ডে প্রায় ৩০টি সড়কের কার্পেটিং প্রয়োজন।
নগরীর রাস্তাঘাট ঘুরে দেখা গেছে, ২৭টি ওয়ার্ডের পাড়া-মহল্লায় প্রায় ১শ’ সড়কের কার্পেটিং ও পাথরের খোয়া উঠে খানাখন্দের সৃষ্টি হয়েছে। কোথাও কোথাও বৃষ্টির কারণে সৃষ্টি হয়েছে বিশাল গর্তের। পুকুর সদৃশ এসব গর্তে বৃষ্টি হলেই জমে থাকে পানি। যা পথচারীদের জন্য অনেক সময় বিরক্তির কারণ হয়ে দাঁড়ায়। বিশেষ করে শিক্ষার্থীরা এসব স্থান সতর্কতার সাথে অতিক্রম করতে হয়। একটু অন্যমনস্ক হলেই রাস্তায় চলাচলকারী যানবাহন গর্তে পড়ে পানি ছিটকে নষ্ট করে দেয় তাদের পরিধেয় পোশাক। যা নিয়ে আর সংশ্লিষ্ট শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে যাওয়া অসম্ভব হয়ে পড়ে।
নগরীর বনকলাপাড়া, সুবিদবাজার, আম্বরখানার বিভিন্ন অলিগলি, ভাতালিয়া সেনপাড়া, শেখঘাট, নবাবরোড, আখালিয়া, বাগবাড়ি, নিহারিপাড়া, লেকসিটি, করেরপাড়া, রায়নগর, শাপলাবাগ, ভার্থখলা, শাহি ঈদগাহ, টিভিগেট, বালুচর, মীরাবাজার, উপশহর, কালীবাড়ি, হাওলাদারপাড়া, ছড়ারপাড়, কামালগড়, কালীঘাট, লালদিঘিরপাড়, আগপাড়া,
ধোপাদিঘিরপাড় আর দক্ষিণ সুরমার গোটাটিকর বিসিক শিল্পনগর এলাকার রাস্তাঘাট দীর্ঘদিন ধরে সংস্কার হয়নি।
সিসিক সংশ্লিষ্টরা বলছেন গত অর্থবছরে যেসব সড়কের সংস্কারকাজ শুরু হয়েছিল, বর্ষা শুরু হওয়ায় সেসব কাজ বন্ধ হয়ে যায়। যেসব সড়ক নতুন করে ভেঙে গেছে, সেগুলো আবারও সংস্কারে উদ্যোগ নেয়া হচ্ছে।