• ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা হিরন সিলেট আ.লীগের দাপুটে চেয়ারম্যান!

bijoy71news
প্রকাশিত নভেম্বর ২১, ২০২২
যুক্তরাজ্য বিএনপি নেতা হিরন সিলেট আ.লীগের দাপুটে চেয়ারম্যান!

নুরুল হক শিপু ::

সিলেটের রাজনীতিতে আলোচিত-সমালোচিত এক নাম হিরন মিয়া। তিনি সদর উপজেলার মোগলগাঁও ইউনিয়ন পরিষদের চেয়ারম্যান। ক্ষমতাসীন দল আওয়ামী লীগের নৌকা প্রতীক নিয়ে পরপর দু’বারই চেয়ারম্যান নির্বাচিত হয়েছেন ব্রিটেনে বিএনপির রাজনীতি করা এ ব্যক্তি। দায়িত্ব পালন করছেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদকেরও। আওয়ামী লীগের দলীয় সম্মেলন কিংবা ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচন সবখানেই আলোচিত হয় হিরনের নাম।

সূত্রমতে, হিরন মিয়া যুক্তরাজ্যের একজন প্রভাবশালী ব্যবসায়ী এবং এদেশে জাতীয়তাবাদী দল বিএনপির আদর্শ লালন করতেন। অঢেল অর্থ সম্পদের মালিকও তিনি। যুক্তরাজ্যের ছারি শহর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় আসলে দল পাল্টান তিনি। দেশে দলীয় পদ এবং আওয়ামী লীগের প্রতীক পাওয়ার জন্য নিজের টাকাকে ম্যাজিক হিসেবে কাজে লাগিয়ে নির্বাচনে নৌকা প্রতীকের পাশাপাশি পান পদ-পদবি। বর্তমান সময়ে যা সোনার হরিণ! টাকার জোরে পরপর দুবার নির্বাচিত হওয়ার পাশাপাশি ভাগিয়ে নিয়েছেন দলের শীর্ষ দু’পদের একটি।

সূত্র জানায়, গত ২৫ অক্টোবর মঙ্গলবার দলীয় গঠনতন্ত্র না মেনে সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নতুন কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অভিযোগ ওঠে। ওইদিন সিলেট জেলা প্রেসক্লাবে সংবাদ সম্মেলনে সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের নেতা-কর্মীদের একাংশ এমন অভিযোগ করেন।

লিখিত বক্তব্য পাঠ করেন সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সাবেক সাংগঠনিক সম্পাদক আমির উদ্দিন। তিনি বক্তব্যে জানান, যুক্তরাজ্য বিএনপির সাবেক নেতা মো. হিরন মিয়াকে কমিটির সাধারণ সম্পাদক করা হয়েছে। এ কমিটি বাতিল করা না হলে তৃণমূলের ত্যাগী নেতা-কর্মীরা লাগাতার আন্দোলন করবে।

সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের সর্বশেষ সম্মেলন হয়েছে ২০০৫ সালে। ওই সম্মেলনে মফিজুর রহমান বাদশা সভাপতি ও মো. নিজাম উদ্দিন সাধারণ সম্পাদক নির্বাচিত হন। পরে ২০১৯ সালের ২৪ নভেম্বর সম্মেলন হলেও কাউন্সিল হয়নি। সম্মেলনের এক দিন পর নিজামকে সভাপতি ও হিরনকে সাধারণ সম্পাদক করে নতুন কমিটি গঠন করা হয়। তবে সে সময় হিরন যুক্তরাজ্যের একটি শহর বিএনপির যুগ্ম আহ্বায়ক ছিলেন অভিযোগ উঠলে ওই কমিটি ঘোষণার দুই দিনের মাথায় বাতিল হয়।

আগের কমিটি বাতিলের পর মফিজুর রহমানকে আবার সভাপতি ও নিজাম উদ্দিনকে সাধারণ সম্পাদকের পদ দেওয়া হয়। এরপর হঠাৎ করেই মো. নিজাম উদ্দিনকে সভাপতি ও মো. হিরন মিয়াকে সাধারণ সম্পাদক করে জেলা আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শফিকুর রহমান চৌধুরী ও সাধারণ সম্পাদক নাসির উদ্দিন খান দুই সদস্যবিশিষ্ট কমিটি গঠন করেন।

সংবাদ সম্মেলনে বলা হয়, হিরন মিয়া যুক্তরাজ্যে অবস্থানকালে ২০১৫ থেকে ২০১৬ সালে বিএনপির রাজনীতির সঙ্গে জড়িত ছিলেন। যুক্তরাজ্যে তিনি পদধারী নেতাও ছিলেন। সিলেট সদর উপজেলা আওয়ামী লীগের কোনো পর্যায়ের সদস্যও ছিলেন না হিরন মিয়া। হঠাৎ করেই তিনি সাধারণ সম্পাদক হয়েছেন। অবিলম্বে এ কমিটি বাতিল ঘোষণা না হলে কঠোর আন্দোলনের ডাক দেওয়া হবে বলে হুমকি দিয়েছেন একপক্ষের নেতাকর্মীরা।

এদিকে বিভিন্ন গণমাধ্যমে হিরন মিয়া তাঁর বিরুদ্ধে আনা বিএনপির রাজনীতি করার অভিযোগ অস্বীকার করেছেন। তিনি বলেছেন, ‘শুধু মুখ দিয়ে অভিযোগ করলেই হয় না, তথ্যপ্রমাণও লাগে। আমাকে হেয়প্রতিপন্ন করতে একটা মহল উদ্দেশ্যপ্রণোদিতভাবে অপচেষ্টা করছে। তাঁর দাবি তিনি আওয়ামী লীগের মানুষ।’

যুক্তরাজ্যের উস্টার ওরসেস্টার সিটির সাবেক কাউন্সিলর ও ডেপুটি মেয়র, লেবার পার্টির নেতা ড. নজরুল ইসলাম বলেন, ‘যুক্তরাজ্যে হিরন মিয়া বিএনপি করতেন। তা সবাই জানে। আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর তিনি এখন আওয়ামী লীগের বড় নেতা। নজরুল বলেন, মোগলগাঁও ইউনিয়নের সাবেক চেয়ারম্যান প্রয়াত আকরম উদ্দিন, মদরিছ আলী, জমসিদ আলী, ছরকুম আলী, আব্দুর রউফ, সাবেক চেয়ারম্যান একেএম আব্দুল্লাহ, শামসুল ইসলাম টুনুসহ সবাই জনবান্ধব ছিলেন। তারা জনগণের কাছাকাছি থেকে উন্নয়ন করেছেন। সেক্ষেত্রে হিরন মিয়া ব্যতিক্রম।

নজরুল বলেন, যদি গত নির্বাচনের কথা বলি-তাহলে তার প্রতিদ্বন্দ্বী চেয়ারম্যান প্রার্থীর কর্মী-সমর্থকদের তিনি অহেতুক হয়রানীমূলক মামলায় ফাঁসিয়ে দিয়েছেন। এই মামলায় এলাকার অনেক বৃদ্ধ লোকও আসামি। নজরুল বলেন, মামলা না করিয়ে এবং কালো টাকা না ছাড়লে তিনি কখনই চেয়ারম্যান হতে পারতেন না। এলাকার মানুষের পাশে থাকার জন্যই একজন জনপ্রতিনিধি। মামলা-হামলায় জনগণকে অহেতুক হয়রানীকে অত্যাচার ছাড়া কী বলবেন?-প্রশ্ন নজরুলের।