নিজস্ব প্রতিবেদক ::
‘শো অফ’ করা আমাদের রন্ধ্রে রন্ধ্রে ছড়িয়ে পড়েছে। নিজের বিষয় অন্যের কাছে জাহির করতে ব্যস্ত আমরা। যা মোটেও শোভনীয় নয়। আমার শ্রম ঘামে যা করেছি, তা অন্যের কাছে কখনই জাহির করার চেষ্টা করিনি। জীবনে কিছু অর্জন করতে হলে, নিজের মধ্যে সেই গুণ সৃষ্টি করতে হবে, দেখবেন আপনি সফলতার দিকে এগুচ্ছেন আর তখন মানুষ এমনিতেই মান্য করা শুরু করবে। পরিশ্রম করলে সফলতা আসবেই। আর সেজন্য আত্মবিনিয়োগ করতে হবে।’’-কথাগুলো ব্রিটেনের চেস্টার সিটির সাবেক কাউন্সিলর ড. নজরুল ইসলামের।
একান্ত আলাপকালে ব্রিটেনের সর্বকনিষ্ঠ সাবেক কাউন্সিলর নজরুল ইসলাম জানান, বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত সিলেট বিভাগের ছাতক উপজেলার বিলপাড় গ্রামের হাজী বাড়ির ব্রিটিশ নাগরিক মরহুম হারুনুর রশীদের বড় ছেলে তিনি। দ্বিতীয় শ্রেণি পর্যন্ত সিলেটের ব্লু বার্ড স্কুলে পড়ালেখা করেন। এরপর ১১ বছর বয়সে আসেন যুক্তরাজ্যে। দিন ছিলো ১৯৮৫ সালের ২০ আগস্ট। ছোটকাল থেকেই স্বপ্নবাজ ছিলেন নজরুল। জীবনে অগ্রসর হওয়ার জন্য স্বপ্ন দেখতেন। লেখাপড়ার প্রতিও ছিলো তাঁর ব্যাপক আগ্রহ। ১৯৯২ সালে জিসিএসই (এসএসসি)-তে ভালো ফলাফল করে সবাইকে অবাক করে দেন। এরপর ১৯৯২ সালে ওরসেস্টার কলেজ অব টেকনোলজিতে ভর্তি হন। ১৯৯৪ সালে ভালো ফলাফল নিয়ে ওই কলেজ থেকে মাধ্যমিক পাস করেন। ১৯৯৫ সালে বিএসসি অনার্স পড়তে ব্রুনেল ইউনিভার্সিটি ইন আস্কব্রিজে ভর্তি হন। সেখানেও ভালো ফলাফল অর্জন করেন। তিনি ১৯৯৬ সাল থেকে ১৯৯৮ সাল পর্যন্ত ওয়ারউইকশায়ার ইউনিভার্সিটি থেকে ইকোয়ালিটি অ্যান্ড ডাইভারসিটিতে এমএ করেন। ১৯৯৮, ১৯৯৯ এবং ২০০০ সালে সোস্যাল পলিসি অ্যান্ড সোস্যাল ওয়েলফেয়ারে ডক্টরেট ডিগ্রি (পিএইচডি) অর্জন করেন। ১৯৯৭ সালে তিনি ওরসেস্টার সিটির কাউন্সিলর প্রার্থী হিসেবে লেবার পার্টি থেকে মনোনয়ন পান। জীবনের প্রথম অংশগ্রহণ করা এই নির্বাচনে তিনি বিপুল ভোটে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। ১১ বছর বয়সে ব্রিটেনে আসা কিশোর নজরুল মাত্র ২২ বছর বয়সে কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়ে সবাইকে অবাক করে দেন। তিনি ছিলেন ব্রিটেনের সর্বকনিষ্ঠ কাউন্সিলর। এখন পর্যন্ত ব্রিটেনে এতো অল্প বয়সে কোনো বাংলাদেশি নাগরিক কাউন্সিলর হতে পারেননি। তিনি একজন সফল কাউন্সিলর হয়েও দ্বিতীয়বার আর নির্বাচনে অংশগ্রহণ করেননি। ব্রিটেনের অসংখ্য গণমাধ্যমে ওঠে আসে তাঁর অল্প বয়সে কাউন্সিলর হওয়ার গল্প। কোনো কোনো ইংরেজি পত্রিকায় শিরোনামে তাঁকে বেবি কাউন্সিলর হিসেবেও অখ্যায়িত করা হয়েছে। শুধু তা-ই নয়; অল্প বয়সী ড. নজরুল ইসলাম কাউন্সিলর নির্বাচিত হয়েই ডেপুটি মেয়রও নির্বাচিত হন। দায়িত্ব পালনকালে সততা ও নিষ্ঠা তাঁকে সর্বমহলে প্রসংসিত করে।
জনপ্রতিনিধিত্বের পাশাপাশি ২০০০ সালে কর্মময় জীবনে পা রাখেন ড. নজরুল ইসলাম। তিনি মাইনোরিটি প্রজেক্টের চিফ এক্সিকিউটিভের দায়িত্ব পান। ৫ বছর এ দায়িত্ব পালন করে ২০০৬ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত ইকোয়ালিটি ও ডাইভারসিটি ডিপার্টমেন্টে ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। ২০০৯ সাল থেকে ২০১২ সাল পর্যন্ত তিনি জব সেন্টার প্লাসের প্রজেক্ট ডিরেক্টর হিসেবে দায়িত্ব পালন করেন। তিনি নিজেকে মানবসেবায় নিয়োজিত করতে ২০১২ সালে নিজে ব্রিটেন সরকার নিবন্ধিত একটি প্রতিষ্ঠান প্রতিষ্ঠা করেন। প্রতিষ্ঠানের নাম দেন কনসালটেন্সি ইন ইকোয়ালিটি অ্যান্ড ডায়ভারসিটি। তিনি ফ্রিলান্স কনসালটেন্স হিসেবে দীর্ঘ ১০ বছর থেকে এ প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে মানবসেবা করে যাচ্ছেন। দিল্লি স্পাইস নামে একটি রেস্তোরাঁরও মালিক তিনি। রেস্তোরাঁ এই ব্যবসায়ও তিনি অল্প সময়ে সফল ব্যবসায়ীর খ্যাতাব অর্জন করেছেন। তিনি একজন সফল এপার্টমেন্ট ব্যবসায়ীও।
ছাতকের বাসিন্ধা ব্রিটিশ নাগরীক ড. নজরুল ইসলামের বাবাও ছিলেন একজন ব্রিটিশ নাগরিক। দুইভাই একবোনের মধ্যে নজরুল সবার বড়। ব্যক্তিগত জীবনে তিনি বিবাহিত। তাঁর এক ছেলে ও এক কন্যা সন্তান রয়েছে। তিনি ব্রিটেন ও তাঁর জনম মাটি সিলেটের অসংখ্য সামাজিক ও সেবামূলক প্রতিষ্ঠানে যুক্ত রয়েছেন। এসব প্রতিষ্ঠান ও ব্যক্তি উদ্যোগে তিনি মানবসেবায় নিজেকে নিয়োজিত রখেছেন। অল্প বয়সে রাজনীতি ও ব্যক্তিগত জীবনে সফল এই বাংলাদেশী বংশোদ্ভূত আমৃত্যু মানুষের কল্যাণে কাজ করে যেতে চান।