• ২২শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৭ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২০শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

নৌকাকে বিজয়ী করতে মরিয়া আওয়ামী লীগ

bijoy71news
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৩, ২০২১

নুরুল হক শিপু ::

রাত পোহালেই সিলেট-৩ আসনের উপনির্বাচনে ভোট গ্রহণ করা হবে। এই নির্বাচনে আওয়ামী লীগের তরুণ প্রার্থী হাবিবুর রহমান হাবিবকে নির্বাচিত করতে মরিয়া হয়ে ওঠেছে আওয়ামী লীগ। শীর্ষ থেকে তৃণমূল- সব নেতা দিন-রাত মাঠে কাজ করেছেন। দলটির শীর্ষ নেতারা শতভাগ আশাবাদী আসনটি আওয়ামী লীগেরই থাকবে।

অপরদিকে অতীতের দুর্গ হিসেবে পরিচিত এ আসনটি পুনরুদ্ধার করতে চায় জাতীয় পার্টি (জাপা)। দলটির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিক নির্বাচনে দাঁড়ানোর পর থেকেই নানা অভিযোগ করে আসছেন। শুরু থেকেই তিনি সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কা প্রকাশ অব্যাহত রেখেছিলেন। অবশ্য এ প্রার্থী সর্বশেষ প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ও নির্বাচন কমিশনের ওপর ভরসা রেখে সুষ্ঠু নির্বাচন হওয়ার প্রত্যাশায় মাঠ ছাড়েননি।

হাবিবকে বিজয়ী করতে আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা সিলেটে অবস্থান করে একের পর এক নির্বাচনী এলাকায় ভোটের প্রচারে অংশ নিয়েছেন। জাপারও ১৫ শীর্ষ নেতা অবস্থান করছেন সিলেটে। হাবিবের পক্ষে আওয়ামী লীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য জাহাঙ্গীর কবির নানক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মাহবুবুল আলম হানিফসহ প্রায় ১২ নেতা প্রচারে অংশ নেন। আরও অংশ নেন কেন্দ্রীয় যুবলীগ, ছাত্রলীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদক। স্বেচ্ছাসেবক লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ একটি বড়

দলও সিলেট-৩ আসনে নৌকাকে বিজয়ী করতে কাজ করে।

জাতীয় পার্টির মহাসচিব জিয়া উদ্দিন বাবলু আমাদের সময়কে বলেন, আমি নানা কারণে সুষ্ঠু নির্বাচন নিয়ে শঙ্কায় ছিলাম। এখন কিছুটা শঙ্কা কেটেছে। কারণ নির্বাচন সংশ্লিষ্ট উচ্চ পর্যায়ের সবার সঙ্গে কথা হয়েছে। কথা হয়েছে সিলেটে যারা দায়িত্বে রয়েছেন তাদের সঙ্গেও। সবাই আশ্বস্ত করেছেন সুষ্ঠু নির্বাচন হবে।

ডাকসুর সাবেক এই সাধারণ সম্পাদক বলেন, তারপরও যদি নির্বাচন নিয়ে কাল প্রশ্ন ওঠে, তবে জনগণের পরাজয় ঘটবে। মানুষ তার অধিকার আদায়ের ভোট দিতে না পারলে এ পরাজয় জনতারই হবে। তিনি বলেন, অবাধ, সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচন হলে জাপার প্রার্থীর জয় নিশ্চিত। দলের শীর্ষ ১৫ নেতা এখন সিলেট আছেন। তারা আগামীকাল ফলাফলের পর সিলেট ত্যাগ করবেন।

আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক শফিউল আলম চৌধুরী নাদেল বলেন, দলের শীর্ষ নেতা থেকে তৃণমূল কেউই ঘরে বসে ছিলেন না। নৌকাকে বিজয়ী করতে ঐক্যবদ্ধ আওয়ামী লীগ যে শ্রম দিয়েছে, তা প্রমাণ করে নৌকা বিপুল ভোটে জয়ী হবে। নিরপেক্ষ নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, যারা নিরপেক্ষ নির্বাচন নিয়ে প্রশ্ন তুলছেন তারা বুঝতে পেরেছেন তারা পরাজিত হবেন। কারণ সরকার ইভিএম পদ্ধতিই করেছে সুষ্ঠু নির্বাচন দেওয়ার লক্ষ্যে। তারা হয়তো জানেন না ভোটার আইটি কার্ড নম্বর দেওয়ার পর ফিঙ্গার মেচ করার পর প্রতীকে টিপ দিতে হয়। এখানে অস্বচ্ছতার কী কোনো সুযোগ আছে? প্রশ্ন রাখেন নাদেল।

এই আসনে উপনির্বাচন হওয়ার কথা ছিল গত ২৮ জুলাই। শুরুতে ভালোই ছিল জাতীয় পার্টির প্রার্থী আতিকুর রহমান আতিকের নির্বাচনী মাঠ। কিন্তু করোনা সংক্রমণের প্রেক্ষাপটে নির্বাচনের নতুন তারিখ ৪ সেপ্টেম্বর নির্ধারণ হওয়ায় পাল্টে গেছে প্রেক্ষাপট। নবীন-প্রবীণের লড়াইয়ে বেশ কৌশলী ভূমিকা নিয়েছিলেন আওয়ামী লীগ প্রার্থী হাবিব। তবে বিএনপি থেকে বহিষ্কৃত স্বতন্ত্র প্রার্থী সাবেক এমপি শফি আহমদ চৌধুরীরও নীরব ভোট রয়েছে।

করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে চলতি বছর ১১ মার্চ আসনটির সাংসদ আওয়ামী লীগ নেতা মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী মারা যান।

ইলেকশন কমিশনের (ইসি) নির্দেশনা অনুযায়ী গতকাল সকাল ৮টা থেকে বন্ধ হয়ে যায় প্রার্থীদের পক্ষে প্রচার। ভোটগ্রহণ সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণভাবে সম্পন্ন করতে গতকাল রাত থেকে মাঠে নামেন আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর সদস্যরা। ভোটের পর রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) পর্যন্ত তারা দায়িত্ব পালন করবেন। সিলেট আঞ্চলিক নির্বাচন কর্মকর্তা ফয়সল কাদের এ তথ্যগুলো জানান।

এই কর্মকর্তা আরও জানান, দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা নিয়ে গঠিত সিলেট-৩ আসনের নির্বাচনকালীন সময়ে সব অনিয়ম প্রতিরোধ ও নিয়ন্ত্রণের লক্ষ্যে ইতোমধ্যে বিচার বিভাগীয় কর্মকর্তাদের সমন্বয়ে দুই সদস্যের একটি ‘নির্বাচনী তদন্ত কমিটি’ গঠন করেছে নির্বাচন কমিশন। কমিটিতে রয়েছেন সিলেটের যুগ্ম জেলা ও দায়রা জজ তাসলিমা শারমিন ও সিনিয়র সহকারী জজ নির্জন কুমার মিত্র।

এ ছাড়া ভোট গ্রহণ উপলক্ষে ৩ জন ম্যাজিস্ট্রেট নিয়োগ দিয়েছে ইসি। এর মধ্যে সিলেটের সিনিয়র জুডিশিয়াল ম্যাজিস্ট্রেট মো. মাহবুবুর রহমান ভূঁঞাকে দক্ষিণ সুরমা উপজেলায়, অঞ্জন কান্তি দাসকে বালাগঞ্জ উপজেলায় এবং সিলেট মেট্রোপলিটন ম্যাজিস্ট্রেট মো. সুমন ভূঁইয়াকে ফেঞ্চুগঞ্জ উপজেলায় দায়িত্ব দেওয়া হয়েছে। তারা নির্বাচনের আগে দুই দিন, পরে দুই দিন ও নির্বাচনের দিন অর্থাৎ ২ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত মোট পাঁচ দিন নির্বাচনী মাঠে দায়িত্ব পালন করবেন।

ফয়সল কাদের জানান, ভোট গ্রহণের দিন কড়া নিরাপত্তার চাদরে ঢাকা থাকবে দক্ষিণ সুরমা, ফেঞ্চুগঞ্জ ও বালাগঞ্জ উপজেলা। সাধারণ ভোটকেন্দ্রে থাকবেন পুলিশ, আনসার ও গ্রাম পুলিশের ১৭ থেকে ১৮ সদস্য। আর ঝুঁঁকিপূর্ণ কেন্দ্রে নিয়োজিত থাকবেন ১৮ থেকে ১৯ সদস্য। তাদের মধ্যে পুলিশ আর অঙ্গীভূত আনসার সদস্যের কাছে অস্ত্র থাকবে। তারা সার্বক্ষণিক ভোটকেন্দ্রের নিরাপত্তা দেবেন।

পুলিশ, এপিবিএন ও ব্যাটালিয়ন আনসারের সমন্বয়ে গঠিত মোবাইল ফোর্স ২১টি, স্ট্রাইকিং ফোর্স ১২টি, র‌্যাবের ১২টি টিম ও ১২ প্লাটুন বিজিবি মোতায়েন থাকবে ২ থেকে ৬ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত। বিজিবির সঙ্গে নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট দায়িত্ব পালন করবেন যে কোনো অনাকাক্সিক্ষত ঘটনা মোকাবিলায়।

ভোট গ্রহণের দিন নির্বাচনী আচরণবিধি প্রতিপালন নিশ্চিতকরণ ও আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে নিয়োজিত রাখা হবে ২১ জন নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেট। অন্যদিকে রিটার্নিং অফিসার ও প্রিসাইডিং অফিসারের চাহিদার পরিপ্রেক্ষিতে কেন্দ্রের অভ্যন্তরে কিংবা ভোট গণনা কক্ষের শান্তিশৃঙ্খলা রক্ষার্থে দায়িত্ব পালন করবে।

উপনির্বাচনে চার প্রার্থী। তারা হলেন- আওয়ামী লীগের হাবিবুর রহমান হাবিব (নৌকা), জাতীয় পার্টির আতিকুর রহমান আতিক (লাঙ্গল), স্বতন্ত্র প্রার্থী ও সাবেক বিএনপি নেতা শফি আহমদ চৌধুরী (মোটরগাড়ি-কার) এবং বাংলাদেশ কংগ্রেসের জুনায়েদ মোহাম্মদ মিয়া (ডাব)।