নিজস্ব প্রতিবেদক ::
শুক্রবার রাত। ঘড়িতে তখন দেড়টা বাজে। শাওনের মোবাইল ফোনে এক ছাত্রলীগ নেতার ফোন আসল। সিলেটের দক্ষিণ সুরমার কুচাইয়ে একজন করোনা পজিটিভ নারীর অক্সিজেন লেভেল কমে গেছে। হাসপাতালে সিট নেই। জরুরি ভিত্তিতে ওই রোগীকে অক্সিজেন দিতে হবে। শহর থেকে কুচাই গ্রামে অক্সিজেন নিয়ে ছুটলেন শাওন। পিপিই ও মাস্ক পরে ওই নারীকে অক্সিজেন লাগিয়ে দিলেন নিজ হাতে। বাসায় ফিরলেন রাত ৩টায়। আবার ফোন আসলো নগরীর নয়াসড়কস্থ একটি বেসরকারি হাসপাতালের সামন থেকে। শাওনকে ওই মুমূর্ষু রোগীর পরিবার কান্না করে জানালেন তারা মৌলভীবাজারের রাজনগর থেকে সিলেট নগরীতে এসে কোনো হাসপাতালে সিট পাননি। তাদের রোগীকে অক্সিজেন না দিলে বাঁচান যাবে না। রোগীর অক্সিজেন লেভেল ৪০-এ নেমে এসেছে। না খেয়ে এবার নিজের প্রাইভেট কার নিয়ে নয়াসড়ক ছুটলেন শাওন। নিজ হাতে গাড়িতেই অক্সিজেন লাগিয়ে দিলেন ওই রোগীকে। হাসপাতালে সিট না পাওয়া এই রোগীকে নিয়ে স্বজনরা ফিরলেন বাড়ি। গত একমাস থেকে এভাবেই দিন ও রাত কাটছে শাওনের। এখন পর্যন্ত একশ ১০ জন করোনা আক্রান্ত রোগীকে অক্সিজেন সাপোর্ট দিয়েছেন তিনি। তার পুরো নাম শাহ আলম শাওন। সম্ভ্রান্ত পরিবারের ছেলে। নগরীর উপশহরের এ বাসিন্দা কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সাবেক সদস্য।
জানা গেছে, করোনাকালীন সময়ে এ ছাত্রলীগ নেতা প্রায় ছয় লাখ টাকার খাদ্য সামগ্রী অসহায় মানুষের মাঝে বিতরণ করেছেন। বিতরণকালে সিলেট শহরতলীর ধোপাগুল এলাকার এক অসহায় বৃদ্ধা নারীকেও খাদ্য সামগ্রী দিয়েছিলেন শাওন। বৃদ্ধা দীর্ঘদিন থেকে শ্বাসকষ্টে ভুগছিলেন। তার শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়ায় তিনি সিলেট ওসমানী মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসকেরা শ্বাসকষ্ট দেখে তাকে করোনা ইউনিটে পাঠান। বৃদ্ধা নারী ভয়ে হাসপাতাল থেকে বাড়ি চলে যান। বৃদ্ধাকে খাবার দেওয়ার সুবাদে শাওনের মোবাইল নাম্বার তার কাছে ছিলো। তিনি শাওনকে ফোন করলে শাওন তাকে দেখতে যান। শ্বাসকষ্ট বেশি হওয়ায় শাওন নিজের টাকায় ওই বৃদ্ধাকে ১৫ হাজার টাকা খরচ করে সিলিন্ডার কিনে অক্সিজেন সাপোর্ট দেন। এক সপ্তাহ পর ওই নারী মারা যান। এরই মধ্যে সিলেটে করোনায় আক্রান্ত রোগীর সংখ্যাও বাড়তে থাকে। দেখা দেয় সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে সিনিইউ, আইসিইউ এমনকি শয্যা সংকট। শাওন সিদ্ধান্ত নেন মানুষের পাশে দাঁড়ানোর। ৪ লাখ টাকা ব্যয় করে কিনেন ২১ টি অক্সিজেন সিলিন্ডার ও অন্যান্য সামগ্রী। এরপর থেকে মানুষের ফেইসবুকের ওয়ালে ওয়ালে ঘুরছে শাওনের ছবি। কেউ লিখছেন, মানবতার ফেরিওয়ালা আবার কেউ লিখছেন ‘স্যালোট’ শাওন। শুধু তাই নয়; শাওনের এমন মানবিকতা দেখে কেন্দ্রীয় ছাত্রলীগের সভাপিত আল নাহিয়ান খান জয় তার প্রশংসা করে ফেইসবুকে নিউজ শেয়ার করেছেন।।
এ ব্যাপারে শাওন জানান, করোনার ভয়াবহ তাবায় মানুষ কতোটা অসহায় তা যার পরিবারের সদস্যের হচ্ছে তারা ছাড়া কেউই বলতে পারবেন না। মানুষ অক্সিজেনের জন্য কতোটা অসহায় তা আমি নিজ চোখে দেখছি। কম বেশি সবার কাছেই টাকা আছে, কিন্ত হাসপাতালে সিট নেই, অক্সিজেন সংকট। সিদ্ধান্ত নিলাম মানুষের পাশে দাঁড়াই। তিনি বলেন, যতক্ষণ সামর্থ থাকবে আমি মানুষের পাশে থাকতে চাই।