ইমরান আহমদ
গোলাপগঞ্জে বৈষম্যবিরোধী আন্দোলনে নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় ও আদালতে করা ৬ টি মামলা নিয়ে বিব্রত সয়ং থানার অফিসার ইনচার্জ (ওসি) আব্দুন নাসের।
নিরিহ মানুষষের নাম অন্তর্ভুক্ত করায় প্রতিদিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হচ্ছে তাকে। অপরদিকে মামলা রুজু করা হলেও কেন আসামী ধরতে অভিযান চালানো হচ্ছে না তা নিয়েও প্রতিদিন থানায় লোকজনের আনাগোনা চলছে।
তবে, মামলাগুলোতে গণহারে মানুষের নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়ায় নিরপেক্ষভাবে তদন্ত করে এবং ঘটনার ভিডিও চিত্র থেকে সনাক্ত করে আসামী ধরা হবে, এতে কোন নিরিহ লোককে অহেতুক হয়রানী করা হবে না বলে জানিয়েছেন অফিসার ইনচার্জ আব্দুন নাসের।
জানা গেছে, বৈষম্যবিরোধী আন্দোলন চলাকালে গত ৪ আগস্ট গোলাপগঞ্জে পুলিশ, বিজিবি, আওয়ামীলীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগের গুলিতে ৬ জন নিহত হন। নিহতদের পরিবারের পক্ষ থেকে থানায় ৫ টি ও আদালতে ১ টি মামলা করা হয়। এসব মামলার প্রতিটিতে ৫০ জন থেকে ১৫০ জনের নাম এবং অজ্ঞাত আরও ২০০/২৫০ জন করে আসামী করা হয়। নথিভুক্ত মামলাগুলো প্রকাশ হওয়ার পর অভিযোগ উঠে অনেক নিরিহ লোককে আসামী করা হয়েছে। এমনকি দীর্ঘদিন থেকে হাসপাতালে ভর্তি রোগী, সাংবাদিক, সমাজে খেটে খাওয়া মানুষেরও নাম রয়েছে। ঘটনার সাথে জড়িত না থাকার পরও মামলা নথিভুক্ত হওয়ায় ভয়ে অনেকে ঘরবাড়ি ছেড়ে পালিয়ে বেড়াচ্ছেন। আবার অনেককে মামলায় নাম রয়েছে বলে ভূয়া কাগজ দেখিয়ে হয়রানী করা হচ্ছে বলেও অভিযোগ রয়েছে। ভূূয়া কাগজ দেখিয়ে এমন হয়রানীর শিকার একজনের আত্মীয় জানান, গত দুদিন পূর্বে পরিচিত একজন হোয়াটসআপে মামলার মাত্র এক পৃষ্টা কপি পাঠান। যেখানে হয়রানীর শিকার ঐ ব্যক্তির নাম, পিতার নাম ও গ্রাম উল্লেখ রয়েছে। কিন্তু রেকর্ডকৃত সকল মামলা খুঁজে কোথাও তার নাম পাওয়া যায়নি। তবে, রেকর্ড হওয়ার পূর্বে সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে প্রকাশ হওয়া একটি মামলার পৃষ্টার সাথে তার হোয়াটসআপে দেয়া কপির হুবহু মিল রয়েছে। কিন্তু পাঠানো কাগজে তার নামের সিরিয়ালের জায়গায় সামাজিক যোগাযোগে প্রকাশিত কপির সিরিয়ালে অন্য আরেকজনের নাম লিপিবদ্ধ। হোয়াটসআপে কপি পাওয়ার পর থেকে গ্রেফতার ভয়ে তিনি বাড়ি ছাড়া।
এদিকে, নিরপরাধ হয়েও হত্যা মামলায় নাম অন্তর্ভুক্ত হওয়া তা কাটাতে বাদীসহ বিভিন্ন জনের কাছে ছুটছেন তারা। মামলা থেকে নাম কাটাতে মোটা অংকের টাকা দাবি করছে কিছু সুযোগ সন্ধানী লোক। এমন অভিযোগও চাউর উপজেলা জুড়ে। তবে, কে বা কারা টাকা দাবি করছেন তা গোপন রাখছেন হয়রানীর শিকার লোকজন।
এদিকে, মামলায় গণহারে মানুষের নামের তালিকা নিয়ে শুধু অবাক নয়, এসব হত্যা মামলার ভবিষ্যত নিয়েও প্রশ্ন উঠছে রাজনৈতিক ও সচেতন মহলে। প্রকাশ্যে দিবালোকে গুলি করে হত্যার ঘটনাকে ভিন্নখাতে প্রভাবিত করতে কিছু অসাধু চক্র এমন খেলা শুরু করেছে, অবিলম্বে নিরিহ লোকদের মামলা থেকে অব্যাহতি দিয়ে প্রকৃতদের দ্রুত গ্রেফতারের দাবি জানিয়েছেন তারা।
সার্বিক বিষয় নিয়ে শনিবার (৩১ আগস্ট) সন্ধ্যায় গোলাপগঞ্জ মডেল থানার অফিসার ইনচার্জ আব্দুন নাসেরের সাথে প্রতিবেদকের কথা হলে তিনি জানান, আমরা চাইনা কোন নিরিহ লোক হয়রানীর শিকার হউক। এজন্য আমরা তদন্ত করছি, ঘটনার ভিডিও ফুটেজ দেখে প্রকৃতদের সনাক্ত করা হচ্ছে। প্রকৃতপক্ষে ঘটনার সাথে যারা জড়িত তাদের গ্রেফতার করা হবে। তবে আমাদের সময় দিতে হবে।
মামলায় অন্তর্ভুক্ত অনেকের নাম বাদ দিতে মোটা অংকের টাকার লেনদেন হচ্ছে, এমন প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, এ বিষয়টি নিয়ে এখনও কোন অভিযোগ পাইনি। নির্দিষ্ট কোন অভিযোগ পেলে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
গোলাপগঞ্জের বৈধ জমা এবং অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারের বিষয় জানতে চাইলে তিনি বলেন, আগামী ৩ সেপ্টেম্বর পর্যন্ত বৈধ অস্ত্র জমা দেয়ার সময় রয়েছে। এর পর বৈধ অস্ত্রগুলোও অবৈধ হয়ে যাবে। ৩ তারিখ পর সকল অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে অভিযান চলবে।
৪ আগস্টের ঘটনার মূল হোতাদের গ্রেফতার ও অবৈধ অস্ত্র উদ্ধারে গোলাপগঞ্জের সর্বমহলের সহযোগিতা কামনা করেছেন অফিসার ইনচার্জ আব্দুন নাসের।
উল্লেখ্য, গত ৪ আগস্ট বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলনে গোলাপগঞ্জে পুলিশ, বিজিবি, আওয়ামীলীগ, যুবলীগ, ছাত্রলীগের গুলিতে নিহত হন বারকোট গ্রামের ব্যবসায়ী তাজ উদ্দিন, নিশ্চিত গ্রামের ব্যবসায়ী নাজমুল ইসলাম, দত্তরাইল গ্রামের ইঞ্জিনিয়ার মিনহাজ উদ্দিন, দক্ষিণ রায়গড় গ্রামের টেইলার্স জয় আহমদ, শীলঘাট গ্রামের রাজমিস্ত্রি সানি আহমদ ও ঘোষাগাঁও গ্রামের সিএনজি চালক গৌছ উদ্দিন। এছাড়া ৫ আগস্ট সিলেট নগরীর ক্বীন ব্রীজের পাশে পুলিশের গুলিতে নিহত হন দক্ষিণ কানিশাইল গ্রামের হাফিজ কামরুল ইসলাম পাবেল।