• ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ছয় ঘন্টার বৃষ্টিতে ডুবছে নগরী, হাসপাতালেও জলাবদ্ধতা

bijoy71news
প্রকাশিত জুন ৩, ২০২৪
ছয় ঘন্টার বৃষ্টিতে ডুবছে নগরী, হাসপাতালেও জলাবদ্ধতা

মাত্র ৬ ঘন্টার বৃষ্টিতে পুনরায় দুর্ভোগে পড়েছেন সিলেট নগরবাসী। বাদ যায়নি সিলেট বিভাগের প্রধানতম চিকিৎসা সেবা দানকারী প্রতিষ্ঠান সিলেট ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালও। সুরমা উপচে পানিতে ডুবেছে হাসপাতালের বিভিন্ন ভবনের নিচতলা। নগরীর বিভিন্ন এলাকায় ঘরবাড়িতে পানি ঢুকে নষ্ট হয়ে গেছে মালামাল।

রোববার (২জুন) দিবাগত রাত ১২টার দিকে সিলেট শুরু হয় অতি বৃষ্টি। টানা ৬ ঘণ্টা বৃষ্টিপাতের কারণে এই পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে। সোমবার (৩ জুন) সকাল ১০টা পর্যন্ত থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছিল। নিদ্রাহীন রাত কেটেছে সিলেটবাসীর। বিশেষ করে বন্যা প্লাবিত উপজেলাগুলো ও নগরীর নিম্নাঞ্চলের বাসিন্দাদের।

পানি উন্নয়ন বোর্ড সূত্র জানিয়েছে, টানা ৬ ঘণ্টার বৃষ্টিপাত ও পাহাড়ি ঢলে সিলেটের ৮টি উপজেলা ফের পানি বাড়ছে ও সিলেট সিটি করপোরেশনের নতুন নতুন এলাকা প্লাবিত হয়েছে। রাস্তাঘাট উপচে পানি ঢুকে পড়েছে বাসা বাড়িতে।

সরেজমিনে দেখা যায়, সিলেট নগরীর মিরের ময়দান পায়রা, দরগাহ, মিরাবাজার, তালতলা, মাছুদিঘীরপার, জামতলা, তোপখানা, কাজির বাজার, যতপুর, তেররতন, উপশহর, সোবহানীঘাট, শেখঘাট, লালদীঘির পাড়সহ অনেক এলাকা পানির নিচে তলিয়ে গেছে।

সিলেট আবহাওয়া অফিসের আবহাওয়াবিদ সজিব হোসাইন জানিয়েছেন, সোমবার সকাল ৬টা থেকে ৯টার মধ্যে ২৮ মিলিমিটার বৃষ্টিপাত হয়েছে। যে কারণে এমন পরিস্থিতি সৃষ্টি হয়েছে। এখনো থেমে থেমে বৃষ্টি হচ্ছে।

ওসমানী হাসপাতালে গিয়ে দেখা যায়, হাসপাতালের নিচতলায় প্রশাসনিক ভবন, ২৬, ২৭ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ডে পানিতে প্লাবিত হয়েছে। চিকিৎসা নিতে আসা রোগী ও আত্মীয় স্বজনদের ভোগান্তিতে পড়তে হচ্ছে। বিভিন্ন কক্ষে পানি প্রবেশ করার ফলে অনেক মালামাল ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে। চিকিৎসকরা সেবা দিতে বিপাকে পড়েছেন।

সেবা নিতে আসা রোগীর স্বজনরা জানান, ভোর থেকে হাসপাতালে পানি প্রবেশ করেছে। মেঝেতে যারা চিকিৎসা নিচ্ছিলেন তড়িঘড়ি করে তাদেরকে একজনের বিছানায় দুই রোগীকে জায়গা দেওয়া হয়।

ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের সূত্রে জানা যায়, ওসমানী মেডিক্যাল কলেজের উত্তরপাশ ঘেঁষে প্রবাহিত ছড়ার আশপাশে বিভিন্ন ভবন ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান নির্মিত হয়েছে। এ কারণে ছড়া দিয়ে পানিপ্রবাহ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে। অনেক বাসিন্দা পানির প্রবাহ ওসমানী মেডিক্যালের একমাত্র ড্রেনের সাথে সংযুক্ত করেছেন। ফলে ড্রেন উপচে বৃষ্টির পানি ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের বৈদ্যুতিক উপকেন্দ্রে পানি প্রবেশ করে। এছাড়া প্যাথলজি বিভাগ, ২৬, ২৭ ও ৩১ নম্বর ওয়ার্ড হাঁটু সমান পানি রয়েছে।

এ বিষয়ে ওসমানী মেডিক্যাল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল ড. মাহবুবুর রহমান ভূঁইয়া বলেন, হাসপাতাল ও মেডিক্যাল কলেজের নিচতলা পুরোটাতেই পানি ঢুকেছে। গত বছর বন্যার সময় পানি ঢুকে যায়। সংশ্লিষ্টদের বারবার জানানো হলেও কোনো ধরনের ব্যবস্থা না নেওয়ায় বৃষ্টি হলে পানিতে প্লাবিত হয়েছে যায়।

অপরদিকে নগরীতে বন্যার পানিতে জলাবদ্ধতা তৈরি হওয়া ও নির্ঘুম রাত কাটানো নিয়ে অনেকেই সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম ফেসবুকে সিলেট সিটি করপোরেশনের মেয়র ও সিলেটের স্থানীয় সংসদ সদস্যদের প্রতি দাবি জানিয়েছেন সিলেটের সুরমা নদী এবং নদীর পাশের ছড়া ও খাল খননের।

সিলেট নগরীর মিরের ময়দান পায়রা এলাকার বাসিন্দা মো. আজমল আলী তার ফেসবুক আইডিতে লিখেছেন, ‘মাননীয় মেয়র মহোদয় ও এমপি মহোদয়। নগরবাসীর দাবি একটাই সুরমা নদী খনন চাই। সুরমা নদী খনন করুন, বন্যা থেকে নগর বাসীকে রক্ষা করুন।’

নগরীর তালতলার বাসিন্দা রজত কান্তি গুপ্ত বলেন, ২০২২ সালের পরে ঘরে আবারও পানি ঢুকল। পরিবার নিয়ে ভোগান্তিতে পড়েছি। বন্যার আগে যদি নদী, ছড়া, খাল, বিল খনন করা হতো তাহলে নগরীতে পানি ঢুকত না।

এর আগে রোববার সিলেটের বন্যা পরিস্থিতি কিছুটা উন্নতি হয়েছিল। বেশকিছু স্থানে কমে এসেছিল পানি। কিন্তু রাতে বৃষ্টিতে ফের নগরীতে পানি বেড়েছে।

সিলেট সিটি কর্পোরেশনের ভারপ্রাপ্ত মেয়র মখলিছুর রহমান কামরান বলেন, বৃষ্টি আর পানি সুরমা ধারন করতে পারছে না। যে কারণে এমন পরিস্থিতির সৃষ্টি হয়েছে।

তিনি জানান, সিসিক কর্মচারীরা ছাড়া নালা পরিষ্কারে নিয়োজিত রয়েছে। এটা প্রাকৃতিক কারণে হয়েছে। আমরা নগরবাসীর পাশে রয়েছি।