বিজয় ৭১ ডেস্ক
পাঁচ বছরের ব্যবধানে সিলেটের ছয়টি সংসদীয় আসনের সাংসদদের সম্পদের পরিমাণ বৃদ্ধি পেয়েছে। একাদশ জাতীয় সংসদ নির্বাচনে প্রার্থী হতে যে হলফনামা তাঁরা নির্বাচন কমিশনে জমা দিয়েছেন, তা বিশ্লেষণ করে পাঁচ সাংসদের সম্পদ বৃদ্ধির তথ্য পাওয়া গেছে। অপর সাংসদ, সিলেট-১ আসনের আবুল মাল আব্দুল মুহিত এবার নির্বাচনে অংশগ্রহণ করছেন না। যার ফলে তাঁর হলফনামা ছিল না।
তবে গত ২৬ নভেম্বর ঢাকায় সচিবালয়ে অনলাইনে ট্যাক্স রিটার্ন জমা দেন অর্থমন্ত্রী মুহিত। তাতে দেখা যায়, গেল দশ বছরে তাঁর সম্পদ বেড়েছে এক কোটি ১৩ লাখ ৩২ হাজার ৪৬১ টাকা।
২০০৮ সালে দেশে নবম জাতীয় সংসদ নির্বাচন হয়। তখন মুহিতের সম্পদের পরিমাণ ছিল এক কোটি ১৪ লাখ ৮৩ হাজার ৩৬ টাকা। দশ বছরের ব্যবধানে তাঁর সম্পদ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ কোটি ২৮ লাখ ১৫ হাজার ৪৯৭ টাকায়।
হলফনামা অনুসারে, সিলেট-২ আসনের সাংসদ জাতীয় পার্টির ইয়াহইয়া চৌধুরী এহিয়ার অস্থাবর সম্পদ পাঁচ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৮৩ লাখ ৩৮ হাজার ৪৪৪ টাকা। এছাড়া তাঁর আয় বেড়েছে ১১ লাখ ৫ হাজার টাকা।
২০১৪ সালে দশম জাতীয় নির্বাচনে এহিয়ার হলফনামা অনুসারে, তখন তাঁর বার্ষিক আয় ছিল ১ লাখ ৮০ হাজার টাকা। ওই সময় তাঁর অস্থাবর সম্পদ ছিল ১ লাখ ৩০ হাজার টাকা। এবার একাদশ জাতীয় নির্বাচনে হলফনামা অনুসারে, এহিয়ার বার্ষিক আয় ১২ লাখ ৯৫ হাজার টাকা এবং অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ ৮৪ লাখ ৬৮ হাজার ৪৪৪ টাকার। তবে গেলবারের মতো এবারও এহিয়া কোনো স্থাবর সম্পদ দেখাননি।
সিলেট-৩ আসনের সাংসদ মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েস দশম জাতীয় নির্বাচনে (২০১৪) বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১১ লাখ ১৬ হাজার টাকা। ওই সময় তাঁর অস্থাবর সম্পদ ছিল ৮ কোটি ৮১ লাখ ৮৫ হাজার ৭১৪ টাকার এবং স্থাবর সম্পদ ছিল ১ কোটি ৪৬ লাখ ৫৫ হাজার ২০০ টাকার।
এবার একাদশ জাতীয় নির্বাচনের হলফনামা অনুসারে, মাহমুদ উস সামাদ চৌধুরী কয়েসের বার্ষিক আয় ৪৮ লাখ ৬৬ হাজার টাকা। তাঁ অস্থাবর সম্পদ ৯ কোটি ১৭ লাখ ১২ হাজার ২৯৮ টাকার এবং স্থাবর সম্পদ ২ কোটি ৯৪ লাখ ৩৭ হাজার ৯৮৬ টাকার। এ হিসাবে পাঁচ বছরের ব্যবধানে কয়েসের বার্ষিক আয় বেড়েছে সাড়ে ৩৭ লাখ টাকা। আর তাঁর অস্থাবর সম্পদ বৃদ্ধি পেয়েছে ৩৫ লাখ ২৬ হাজার ৫৮৪ টাকার এবং স্থাবর সম্পদ বেড়েছে এক কোটি ৪৭ লাখ ৮২ হাজার ৭৮৬ টাকার।
সিলেট-৪ আসনের সাংসদ ইমরান আহমদ। গেল নির্বাচনে হলফনামায় তিনি বার্ষিক আয় ৫ লাখ ৮২ হাজার ৫০০ টাকা দেখিয়েছিলেন। ওই সময় তাঁর অস্থাবর সম্পদ ছিল ৫২ লাখ ৯২ হাজার ৩৮২ টাকার এবং স্থাবর সম্পদের মধ্যে ছিল ৫৫ হাজার টাকা মূল্যের কৃষি জমি ও একটি চা-বাগানের ০.১৫৪ অংশের মালিকানা।
এবার একাদশ জাতীয় নির্বাচনের হলফনামা অনুসারে, ইমরান আহমদের বার্ষিক আয় ২৯ লাখ ৫১ হাজার ৬২৩ টাকা। তাঁর অস্থাবর সম্পদ এক কোটি ৫২ লাখ ৩৮ হাজার ৯৯৭ টাকার এবং স্থাবর সম্পদের মধ্যে ২৪.২৭ একর কৃষি জমি, ৪.৫০ একর অকৃষি জমি এবং শ্রীপুর চা-বাগানের ০.১৫৪ অংশের মালিকানা আছে। এ হিসাবে ইমরানের আয় বেড়েছে ২৩ লাখ ৬৯ হাজার ১২৩ টাকা। তাঁর অস্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৯৯ লাখ ৪৬ হাজার ৬১৫ টাকার। একইসাথে স্থাবর সম্পদের পরিমাণও বেড়েছে।
সিলেট-৫ আসনের সাংসদ সেলিম উদ্দিনের অস্থাবর সম্পদ পাঁচ বছরের ব্যবধানে বেড়েছে ৩৭ লাখ ৭৬ হাজার ৩৬৭ টাকার। দশম জাতীয় নির্বাচনে তিনি অস্থাবর সম্পদ দেখিয়েছিলেন এক কোটি ২০ লাখ ৮৩ হাজার ৬৫২ টাকার। এবার দেখিয়েছেন এক কোটি ৫৮ লাখ ৬০ হাজার ১৯ টাকার। গেলবার কোনো বার্ষিক আয় না দেখালেও এবার তিনি এ আয়ের পরিমাণ ২৫ লাখ ২৯ হাজার ৯০৪ টাকা উল্লেখ করেছেন। গেলবার তাঁর স্থাবর সম্পদের পরিমাণ ছিল এক এক কোটি ৬৮ লাখ ৯৯ হাজার ৭০ টাকার। এবার তা ২২ লাখ ৩৯ হাজার ৫৭০ টাকা কমে দাঁড়িয়েছে এক কোটি ৪৬ লাখ ৯৪ হাজার ৫০০ টাকার।
সিলেট-৬ আসনের সাংসদ নুরুল ইসলাম নাহিদ এবার অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখিয়েছেণ এক কোটি ৫৮ লাখ ১৬ হাজার ৯ টাকার। ২০১৪ সালে অনুষ্ঠিত দশম জাতীয় সংসদ নির্বাচনের পরিসংখ্যান অনুসারে, তখন নাহিদের অস্থাবর সম্পদ ছিল ৯৮ লাখ ৩০ হাজার ৫৫০ টাকার। এ হিসেবে গেল পাঁচ বছরে তাঁর অস্থাবর সম্পদ ৫৯ লাখ ৮৫ হাজার ৪৫৯ টাকা।
শিক্ষামন্ত্রীর দায়িত্বে থাকা নুরুল ইসলাম নাহিদের স্থাবর সম্পদের পরিমাণও বেড়েছে। ২০০৮ সালে নবম জাতীয় নির্বাচনে নাহিদ তাঁর স্থাবর সম্পদের তালিকায় যৌথ মালিকানায় থাকা ৫ একর জমি ও ২ একরের বাড়ি দেখিয়েছিলেন। তখন তাঁর নামে পাঁচ লাখ টাকা মূল্যের অকৃষি জমি ছিল। এরপর ২০১৪ সালে দশম জাতীয় নির্বাচনে নাহিদ স্থাবর সম্পদের পরিমাণ দেখান ৬৯ লাখ ১৮ হাজার টাকা। এবার একাদশ জাতীয় নির্বাচনে নাহিদ স্থাবর সম্পদ দেখিয়েছেন ৭২ লাখ ৭৮ হাজার ৪৩৮ টাকা। এ হিসেবে গত পাঁচ বছরে তাঁর স্থাবর সম্পদ বেড়েছে ৩ লাখ ৬০ হাজার ৪৩৮ টাকা। তাঁর স্থাবর ও অস্থাবর সম্পদের পরিমাণ বাড়লেও আয় কমেছে। গত জাতীয় নির্বাচনে নাহিদ তাঁর বার্ষিক আয় দেখিয়েছিলেন ১৭ লাখ ৭২ হাজার ৩০০ টাকা। এবার তিনি আয় দেখিয়েছেন ১৬ লাখ ৩০ হাজার ২০৫ টাকা। পাঁচ বছরের ব্যবধানে তাঁর আয় কমেছে এক লাখ ৪২ হাজার ৯৫ টাকা।
mayazsyed888@gmail.com