আওয়ামী দোসরদের সঙ্গে আপস হলে জুলাই বিপ্লবের শহীদদের সঙ্গে বেঈমানি করা হবে বলে মন্তব্য করেছেন সিনিয়র সচিব পদমর্যাদার বিশেষ ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা এম মুশফিকুল ফজল আনসারী।
তিনি বলেন, এদেশের ছাত্র-জনতা কোনোভাবেই আপস মেনে নেবে না। বাংলাদেশের মাটিতে আর কোনো ফ্যাসিবাদের জায়গা হবে না বলেও তিনি মন্তব্য করেন।
রোববার (২৯ ডিসেম্বর) সিলেট সার্কিট হাউজে মতবিনিময় সভায় এসব কথা বলেন তিনি। সিলেট জেলা প্রশাসনের আয়োজনে মতবিনিময় সভায় সিলেটের বিভিন্ন প্রশাসন, রাজনৈতিক, পেশাজীবী সংগঠনের নেতারা উপস্থিত ছিলেন।
সিলেটের জেলা প্রশাসক মোহাম্মদ শের মাহবুব মুরাদের সভাপতিত্বে বক্তব্যে মুশফিকুল ফজল আনসারী আরও বলেন, অনেকে অভিযোগ করেন, অনেক গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় এখনো ফ্যাসিবাদের দোসররা ঘাপটি মেরে বসে আছে। তবে অসংখ্য মীর মদন এবং মোহনলালের মধ্যে কিছু জগতশেট ও মীর জাফরের আনাগোনা কোনো প্রভাব ফেলতে পারবে না। সচিবালয়ে আগুনের ঘটনায় কারা জড়িত সে ব্যাপারে সুচারুরূপে তদন্ত করে দৃষ্টান্তমূলক ব্যবস্থা নিতে হবে।
তিনি বলেন, সচিবালয়ের মতো একটি গুরুত্বপূর্ণ জায়গা। যেখানে সর্বোচ্চ নিরাপত্তা থাকার কথা। সেখানে আগুনে সবকিছু পুড়ে যাবে, তাতে মানুষের মধ্যে প্রশ্ন জাগা স্বাভাবিক। বিষয়গুলো যথাযথভাবে চিহ্নিত করতে হবে।
বাংলাদেশের সরকার প্রধান হয়ে ড. মুহাম্মদ ইউনূসের বাড়তি পাওনা কিছু নেই বলে উল্লেখ করে তিনি বলেন, সমগ্র দুনিয়ার কেন্দ্রবিন্দুতে প্রফেসর মুহাম্মদ ইউনূস। জাতির প্রয়োজনে তিনি সামনে এসে দেশের সরকার প্রধানের দায়িত্ব নিয়েছেন।
ইউনুসের থ্রি-জিরো থিওরি সারা দুনিয়া গ্রহণ করেছে উল্লেখ করে মুশফিকুল ফজল বলেন, জাতিসংঘে তার বক্তৃতা সারা পৃথিবীর নেতারা মনোযোগ দিয়ে শোনেন। জাতিসংঘের সাস্টেইনেবল ডেভেলপমেন্ট গোল এই থ্রি-জিরো থিওরি গ্রহণ করেছে। দক্ষিণ কোরিয়া, ফ্রান্স এই পদ্ধতিকে নিজেদের উন্নয়নের রূপরেখায় যুক্ত করেছে। কিন্তু অতীতের ফ্যাসিবাদী সরকার তাতে পাত্তা না দিয়ে বিদেশের মিশনগুলোকে বঙ্গমাতা-বঙ্গভ্রাতা দিবস পালনে ব্যস্ত রেখেছিলো।
ড. মুহাম্মদ ইউনুসের মতো মানুষকে বাংলাদেশের সব রাজনৈতিক দল এবং সর্বস্তরের মানুষ যেভাবে সহযোগিতা করেছেন সে ধারা অব্যাহত রাখতে হবে বলে উল্লেখ করেন তিনি।
জুলাই বিপ্লবে শহীদদের স্মরণ করে তিনি বলেন, ‘বৈষম্যবিরোধী ছাত্র আন্দোলন এবং শিক্ষার্থী ও সাধারণ মানুষের ঐক্যবদ্ধ প্রয়াসের ফলে বিপ্লব পরবর্তী সময়ে মুক্ত বাতাসে নিশ্বাস নিতে পারছেন। সুতরাং তাদেরকে স্মরণ করতে হবে, মূল্যায়ন করতে হবে।’
নির্বাচন প্রসঙ্গে তিনি বলেন, সবাই জানেন এটা অন্তর্বর্তীকালীন সরকার। জনগণের তুলে দেওয়া পবিত্র দায়িত্ব তারা কাঁধে নিয়েছেন। ১৫ বছরের জঞ্জাল এবং পচাগলা নির্বাচনী ব্যবস্থা থেকে তুলে আনতে যে সময়টুকু প্রয়োজন সে সময় সরকারকে দেওয়া উচিত।
সভায় সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার খান মোহাম্মদ রেজাউন নবী, মেট্রোপলিটন পুলিশের কমিশনার মোহাম্মদ রেজাউল করিম, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি মো. মুশফেকুর রহমান, বিএনপির কেন্দ্রীয় সহ-সাংগঠনিক সম্পাদক মিফতাহ সিদ্দিকী, শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসর সাইফুল, সিলেট মহানগরের বিএনপির ভারপ্রাপ্ত সভাপতি রেজাউল হাসান কয়েস লোদী, জেলা বিএনপির সাধারণ সম্পাদক অ্যাডভোকেট এমরান আহমদ চৌধুরী, মহানগর বিএনপির সাধারণ সম্পাদক এমদাদ হোসেন চৌধুরী, জেলা জামায়াতের সাধারণ সম্পাদক জয়নাল আবেদীন, মহানগর নায়েবে আমির ড. নুরুল ইসলাম বাবুল, সিলেটের অন্যতম ছাত্র সমন্বয়কারী দেলওয়ার হোসেন শিশির প্রমুখ বক্তব্য দেন।