বাংলাদেশ দলে আমরা যাঁদের তরুণ খেলোয়াড় বলি, তাঁরা এখন আর তরুণ নেই মনে করিয়ে দিলেন মাশরাফি বিন মুর্তজা। এশিয়া কাপে তাঁদের ভালো পারফরম্যান্সের আশা করছেন বাংলাদেশ অধিনায়ক
বাংলাদেশের বর্তমান দলটির জন্য সংযুক্ত আরব আমিরাতের কন্ডিশন প্রায় অচেনা। দল হিসেবে ১৯৯৫ সালের পর সে দেশে আর খেলা হয়নি বাংলাদেশের। পাকিস্তান সুপার লিগের (পিএসএল) বদৌলতে দলের দু-তিনজন সিনিয়রের খেলার অভিজ্ঞতা থাকলেও বেশির ভাগ ক্রিকেটারের জন্যই ‘আমিরাত’ নতুন অভিজ্ঞতা। আর দীর্ঘ ২৩ বছর পর এবার এশিয়া কাপ ফিরছে সেখানকার মাটিতে। আমিরাতের উইকেট আর কন্ডিশন নিয়ে তাই দলের ভাবনা থাকাই স্বাভাবিক। মাশরাফি বিন মুর্তজা কিন্তু বুঝিয়ে দিলেন, ভাবনাটা আসলে দুশ্চিন্তা নয়, দায়িত্ব প্রমাণের চ্যালেঞ্জ।
সেই দায়িত্ব অবশ্যই দলের সবাইকে প্রমাণ করতে হবে। চাপটা শুধু সিনিয়রদের ছেড়ে দিলে হবে না। তরুণদেরও শক্ত হাতে হাল ধরতে হবে দলের। একটু ভুল হলো। আর ভুলটা ধরিয়ে দিলেন স্বয়ং বাংলাদেশ অধিনায়ক মাশরাফি বিন মুর্তজা। সংবাদ সম্মেলনে আমিরাতের কন্ডিশন ব্যাখ্যার এক ফাঁকে মাশরাফি যেন নিজেই বোঝালেন নিজেকে, ‘আমাদের যারা তরুণ প্লেয়ার, আসলে তারা এখন আর তরুণ প্লেয়ার নয়।’
বাংলাদেশ দল বহুদিন ধরেই ‘ফ্যাব ফাইভ’-এর ওপর নির্ভরশীল। ‘ফ্যাব ফাইভ’ বলতে তামিম ইকবাল, সাকিব আল হাসান, মাশরাফি বিন মুর্তজা, মুশফিকুর রহিম ও মাহমুদউল্লাহ। ওয়েস্ট ইন্ডিজের মাটিতে সর্বশেষ ওয়ানডে সিরিজ এই নির্ভরশীলতার সাম্প্রতিকতম উদাহরণ। রানে তামিমের ধারেকাছেও কেউ ছিলেন না। সেই সিরিজে বাংলাদেশের হয়ে শীর্ষ পাঁচ রান সংগ্রাহকই ‘ফ্যাব ফাইভ’।
আর বোলিংয়ে সর্বোচ্চ উইকেট ছিল মাশরাফির। শীর্ষে থাকা তিন বোলারের দুজনই পোড় খাওয়া—মাশরাফি ও রুবেল। কথিত ‘তরুণ’দের মধ্যে ছিলেন শুধু মোস্তাফিজুর রহমান। তবে বহুদিন ধরেই এই তরুণেরা খেলে যাচ্ছেন তাঁদের মতো করেই। সেই সিরিজে ব্যাট হাতে আমাদের ‘ত্রি-তরুণ’ সাব্বির রহমান (২৭), মোসাদ্দেক হোসেন (১৪) ও এনামুল (৩৩) ব্যর্থ।
এশিয়া কাপের টুর্নামেন্টও হবে ওয়ানডে সংস্করণে। সাব্বির ও এনামুল জায়গা হারালেও আছেন মোসাদ্দেক। সঙ্গে মোহাম্মদ মিঠুন, লিটন দাস, মোসাদ্দেকদের মতো ‘অভিজ্ঞ’ তরুণ। অভিজ্ঞ কথাটা বলতে হচ্ছে মাশরাফির উক্তির পরিপ্রেক্ষিতে। যাঁদের আমরা ‘তরুণ’ তকমা দিচ্ছি আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে তাঁরা কি সত্যিই তরুণ? মাশরাফির আপত্তিটা এখানেই, ‘তিন, চার, পাঁচ বছর ধরে খেলছে অনেকে, তাঁদের আপনারা তরুণ প্লেয়ার বলছেন? তিন বছর আন্তর্জাতিক ক্রিকেট খেলার পরও তাঁদের তরুণ প্লেয়ার বলতে একটু বাধা লাগা উচিত।’
আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে মিঠুনের অভিজ্ঞতা চার বছরের। লিটনের তিন বছর ও মোসাদ্দেকের দুই বছর। সিনিয়রদের সঙ্গে এই কথিত ‘তরুণ’দেরও যে পারফর্ম করতে হবে, কথাটা মনে করিয়ে দিয়ে মাশরাফি আস্থাও রাখলেন, ‘আমার বিশ্বাস যে তারাও পারফর্ম করবে।’
তবে কন্ডিশন ও মাঠ নিয়ে ভাবার চেয়ে নিজেদের সামর্থ্যে বিশ্বাস রাখছেন অধিনায়ক, ‘অস্ট্রেলিয়ায় যখন ২০১৫ বিশ্বকাপের কোয়ার্টার ফাইনাল খেলি, তার আগে কিন্তু অস্ট্রেলিয়ার মাটিতে আমাদের স্মৃতি খুব ভালো ছিল না। যদি মাঠ বা আউটফিল্ড আমাদের পক্ষে না থাকে, তাহলে পারফর্ম করতে পারব না, সেই বিশ্বাস নিয়ে যাওয়া ঠিক হবে না। আমাদের মনে হয়, আমাদের সামর্থ্য আছে, তার সঙ্গে রিয়াদ, সাকিব, মুশফিকও খেলেছিল সেখানে।’
এশিয়া কাপে নির্দিষ্ট কোনো দলকে হুমকি বলে মনে করছেন না মাশরাফি। তাঁর মতে, ‘আমাদের জন্য সবাই হুমকি।’ তবে প্রথম ম্যাচ জেতা যে ভীষণ গুরুত্বপূর্ণ, সে কথাও মনে করিয়ে দিলেন তিনি, ‘পরিস্থিতি অবশ্যই কঠিন হবে। সেখানে আমরা দল হিসেবে খেলিনি, এটাও একটা পয়েন্ট। অনেক ভালো–খারাপের মধ্যে দিয়েও আমরা সফল হয়েছি। এগুলো আমার কাছে খুব বড় ইস্যু মনে হয় না। ইস্যু হচ্ছে, আমরা শুরুটা কেমন করছি, আমরা শ্রীলঙ্কার সঙ্গে কেমন খেলছি। আমার কাছে মনে হয় ১৫ তারিখটা খুব গুরুত্বপূর্ণ।’
১৫ সেপ্টেম্বর শ্রীলঙ্কার মুখোমুখি হয়ে এশিয়া কাপ অভিযান শুরু করবে বাংলাদেশ।