কুড়িগ্রামের রৌমারী উপজেলার দাঁতভাঙ্গা বাজারের প্রায় ১০ কোটি টাকা মূল্যের ৪০ শতাংশ জমি ভুয়া দলিল করে দখলে নেওয়ার অভিযোগ উঠেছে বিএনপি নেতা সফিয়ার রহমানের বিরুদ্ধে। ওই জমিতে গড়ে ওঠা ১৮টি দোকান মালিকদের বিতাড়িত করে জমি ও দোকান দখলে নেন তিনি।
দোকানদারদের অভিযোগ, আওয়ামী লীগের স্থানীয় ক্যাডার ও হেলমেট বাহিনীর সহযোগিতায় দোকানগুলো দখল করা হয়। তবে এসব অভিযোগ অস্বীকার করেন সফিয়ার রহমান।
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন মামলা পরিচালনার পর আদালতের রায় পেয়েই জমি দখলে নিয়েছি আমি। আদালতের রায় থাকলে উচ্ছেদ মামলা করছেন না কেন? সাংবাদিকরা এমন প্রশ্ন করলে বিষয়টি এড়িয়ে যান তিনি।
মামলার কাগজপত্র ঘেঁটে জানা গেছে, দাঁতভাঙ্গা বাজারের ২৬৩ ও ২৬৪ দাগের ৪০ শতাংশ জমি ২০০২ সালের ২ মে রৌমারী সাবরেজিস্ট্রার অফিসে দলিল সম্পাদন হয়; যার দাতা ছিলেন সুভাষ চন্দ্র সরকার ও গ্রহীতা ছিলেন সফিয়ার রহমান। এই সুভাষ চন্দ্র সরকারের বাবার নাম শচীন চন্দ্র সরকার।
দাবি করা হয়, দাতা সুভাষ চন্দ্র সরকার পূর্বপুরুষ শুধাংসু শেখর সরকার ও অমরেশ চন্দ্র সরকারের ওয়ারিশ।
১৯৬৫ সালের প্রথম দিকে শুধাংসু শেখর সরকার আততায়ীর হাতে খুন হন। ওই বছরের শেষের দিকে তার পুরো পরিবার ভয়ে ভারতে পাড়ি জমালে উক্ত ৪০ শতাংশ জমি অর্পিত সম্পত্তি হিসেবে খতিয়ানভুক্ত হয়। এর কিছুদিন পর ওই জমি দাঁতভাঙ্গা হাইস্কুলের প্রধান শিক্ষক আব্দুল গফুরের নামে লিজ বন্দোবস্ত হয়; যা দীর্ঘদিন স্কুলটির দখলে ছিল। পরে ২০০২ সাল থেকে জমিটি দাঁতভাঙ্গা হাটবাজারের আওতায় এলে সেখানে দোকানপাট নির্মাণ করে ইজারা পদ্ধতি চালু করা হয়। এরই ধারাবাহিকতায় ২০০৭ সালের ফেব্রুয়ারি মাসে ইউনুস আলী ভুঁইয়া, গোলাম মোস্তফা ও জাহিদুল ইসলামের নামে নতুন করে লিজ দেওয়া হয়।
এদিকে ২০০২ সালের ২ মে সফিয়ার রহমান ওই জমি দলিল মূলে দখলে নিতে চাইলে লিজ গ্রহীতাদের সঙ্গে বিরোধ তৈরি হয়। এ বিরোধের জেরে মামলা পালটা মামলা চলে দীর্ঘদিন। শেষে হাইকোর্ট থেকে সব মামলার স্থগিতাদেশ নিয়ে আসেন সফিয়ার রহমান।
এদিকে শুধাংসু শেখর সরকার আততায়ীর হাতে খুন হওয়ার পর তার পুরো পরিবার যখন ভারতে চলে যান তখন প্রশ্ন ওঠে, কার কাছ থেকে কবলা নিলেন সফিয়ার রহমান? এ বিষয়ে এলাকায় চাউর আছে যে আবু বকর ওরফে মক্কার নামের জনৈক ব্যক্তিকে সুভাষ চন্দ্র সাজিয়ে তার কাছ থেকে কবলা নেন তিনি। এখানে একজন সাক্ষীর নাম আজাদ মিয়া। ২০০২ সালে যার বয়স ছিল ৮ থেকে ১০ বছরের মধ্যে।
এখানে আরও উল্লেখ্য, সফিয়ার রহমান প্রমাণ করতে চেয়েছেন, পাবনা জেলার বেড়া উপজেলার দাসপাড়া গ্রামে এখনো স্থায়ীভাবে বসবাস করেন সুভাষ চন্দ্র সরকার।
এ ব্যাপারে বেড়া পৌরসভার একটি প্রত্যয়নপত্র ও নোটারি পাবলিকের একটি এফিডেভিটও সংগ্রহ করেন তিনি; কিন্তু আদালতের এক আদেশের পরিপ্রেক্ষিতে বেড়া উপজেলা নির্বাচন অফিসার মোজাম্মেল হক আদালতকে লিখিতভাবে জানান, উল্লিখিত সুভাষ চন্দ্র সরকারের নাম বেড়া উপজেলার ভোটার তালিকায় অন্তর্ভুক্ত নাই।
এতে প্রতীয়মান হয় যে, প্রত্যয়নপত্র ও এফিডেভিট ভুয়া এবং সুভাষ চন্দ্র সরকারের কোনো অস্তিত্ব নেই। যেহেতু সুভাষ চন্দ্রের কোনো অস্তিত্ব নেই সেহেতু সম্পাদিত ওই দলিলটিও ভুয়া।
এছাড়া দলিলটি ভুয়া প্রমাণিত হওয়ার আরও একটি কারণ হলো- ১৯৮৩ সালের যে দলিলমূলে দলিলটি সম্পাদিত হয় তার ভলিয়ম নম্বর দেখানো হয় ২৯, পৃষ্ঠা ৩ থেকে ৫।
কুড়িগ্রাম সদর সাবরেজিস্ট্রার ও মহাফেজখানার কর্মকর্তা রৌমারী সহকারী ভূমি কমিশনারকে লিখিতভাবে জানান, চিলমারী সাবরেজিস্ট্রার অফিসে ১৯৮৩ সালে সম্পাদিত ওই দলিলটি মহাফেজখানায় খুঁজে পাওয়া যায়নি। তাই সফিয়ার রহমানের সংগৃহীত ১৯৮৩ সালের ওই দলিলটিও ভুয়া প্রমাণিত হয়।
অন্যদিকে আওয়ামী লীগ আমলে হেলমেট বাহিনী দ্বারা সুবিধাভোগেী জমি দখলদারিত্বের একটি অডিও রেকর্ড ফাঁস হলে বাদশা মিয়া নামের এক যুবদল নেতাকে দায়ী করেন সফিয়ার রহমান।
পরে তাকে উঠিয়ে নিয়ে নির্যাতন করেন। নির্যাতনের বিষয়টি বিএনপির ঊর্ধ্বতন কর্তৃপক্ষকে জানানো হলেও কোনো প্রতিকার পাননি তিনি। একজন বিএনপি নেতা দ্বারা যুবদল নেতা নির্যাতিত হওয়ার বিষয়টি নিয়ে এলাকায় তোলপাড় সৃষ্টি হয়েছে।
এলাকাবাসী জানান, দখলকৃত ১৮টি দোকানের অধিকাংশ মালিকই বিএনপি ঘরানার। বিগত ১৬ বছর সফিয়ার রহমান আওয়ামী লীগের হেলমেট বাহিনী দ্বারা নির্যাতন করেছেন। এখন প্রেতাত্মা সেজে নিজেই দখল মিশনে নেমেছেন। তাই তারা বিএনপির হাইকমান্ডসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সাহায্য কামনা করেছেন।