কুমিল্লায় উচ্চ আদালতের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় তোলপাড় চলছে। ১২ নভেম্বর সানাউল্লাহ ও রহিম মিয়া নামে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে ছেড়ে দেয় কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারের জেলার আব্দুল্লাহিল আল আমিন। পরে তাদেরকে পুনরায় গ্রেফতার করতে লক্ষ্মীপুরের আদালত পরোয়ানা জারি করে।
এদিকে মুক্তি পেয়েই গণধর্ষণ মামলায় দণ্ডপ্রাপ্ত ওই দুই আসামি লাপাত্তা। ঘটনার ২০ দিন পেরিয়ে গেলেও তাদেরকে গ্রেফতার করতে পারেনি পুলিশ। অপরদিকে এ দুই আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনার তদন্ত চলছে। জড়িত জেলারের বিরুদ্ধে বিভাগীয় ব্যবস্থা নেওয়া হতে পারে।
কারা সূত্রে জানা গেছে, রাষ্ট্রপক্ষের স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত আসামি লক্ষ্মীপুরের কমলনগর উপজেলার মনা ব্যাপারীর ছেলে সানাউল্লাহ এবং নোয়াখালীর সুধারাম উপজেলার আব্দুল গনির ছেলে রহিম মিয়াকে ছেড়ে দেয় কুমিল্লা কারাগারের জেলার আব্দুল্লাহিল আল আমিন। মুক্তি পেয়েই ওই দুই আসামি আত্মগোপনে চলে যান।
দুই আসামিকে ছেড়ে দেওয়ার ঘটনায় কারাভ্যন্তরে ব্যাপক তোলপাড় সৃষ্টি হয়। কিভাবে কাগজপত্র অসম্পূর্ণ থাকার পরও ওই দুই আসামিকে ছেড়ে দিলেন জেলার এ নিয়ে চলছে নানা সমালোচনা। একাধিক সূত্রের দাবি, আলোচিত ওই দুই আসামিকে মুক্ত করার নেপথ্যে বড় ধরনের লেনদেন হয়ে থাকতে পারে। এদিকে দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে পুনরায় গ্রেফতার করতে লক্ষ্মীপুরের আদালত থেকে পরোয়ানা জারি করা হয়েছে। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী ওই দুই আসামির ছবি সংগ্রহ করেছে। এরইমধ্যে গোয়েন্দা সংস্থার সদস্যরা আসামিদের ছবি ও তথ্য সংগ্রহ করে তাদের তৎপরতা চালাচ্ছে। এদিকে ওই ঘটনায় কুমিল্লা কারাগারের জেলার আব্দুল্লাহিল আল আমিনের কর্মকাণ্ড খতিয়ে দেখছে কারা অধিদপ্তর।
কারা সূত্রের দাবি, এ ঘটনায় জেলার আব্দুল্লাহিল আল আমিনকে বিভাগীয় ব্যবস্থার আওতায় আনা হতে পারে। অনুসন্ধানে জানা গেছে, ২০১৫ সালে গণধর্ষণের একটি মামলায় লক্ষ্মীপুর জেলা আদালতে সানাউল্লাহ, রহিম মিয়াসহ চার আসামিকে ফাঁসির দণ্ডাদেশ দেওয়া হয়। সব আইনি প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে রায় কার্যকরের জন্য সানাউল্লাহ ও রহিম মিয়াকে কুমিল্লা কেন্দ্রীয় কারাগারে পাঠানো হয়। আর বাকি দুই আসামিকে গাজীপুরের কাশিমপুর কারাগারে পাঠানো হয়। এরই মাঝে আসামিপক্ষ লক্ষ্মীপুরের সংশ্লিষ্ট আদালতে খালাস চেয়ে আপিল করে। এতে চার আসামিকে খালাস দেওয়া হয়। বিষয়টি বিধি অনুযায়ী শুনানির জন্য রাষ্ট্রপক্ষ আবেদন করলে উচ্চ আদালত স্থগিতাদেশ প্রদান করেন। কিন্তু ওই স্থগিতাদেশ উপেক্ষা করে কুমিল্লা কারাগারের জেলার সানাউল্লাহ ও রহিম মিয়াকে দ্রুত মুক্ত করে দেন।
এদিকে কুমিল্লা কারাগার থেকে দুই আসামিকে ছেড়ে দেওয়া হলেও যথাযথ আইন অনুসরণ করে মামলার অন্য দুই আসামিকে কাশিমপুর কারাগারে আটকে দেয় কর্তৃপক্ষ। বিষয়টি এখন ধামাচাপা দিতে চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছেন জেলার।
কুমিল্লা কারাগারের একটি সূত্র জানায়, দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে অবমুক্ত করার ক্ষেত্রে জেলার খুব তৎপর ছিলেন। ওইদিন জেল সুপার ছুটিতে থাকায় জেলার সব দায়দায়িত্ব নিয়েই তাদেরকে ছেড়ে দিয়েছেন। কি কারণে তিনি এত তাড়াহুড়া করেছেন এ নিয়ে কারাগারের অভ্যন্তরেই ব্যাপক আলোচনা-সমালোচনা চলছে। বিষয়টি নিয়ে যেন কোনো ধরনের জটিলতা সৃষ্টি না হয় সেজন্য জেলার ব্যাপক দৌড়ঝাঁপ চালিয়ে যাচ্ছেন।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে জেলার আব্দুল্লাহিল আল আমিন বলেন, লক্ষ্মীপুরের সংশ্লিষ্ট আদালতের নির্দেশে তাদেরকে মুক্তি দেওয়া হয়েছে। রাষ্ট্রপক্ষের স্থগিতাদেশের বিষয়টি তার জানা ছিল না। তিনি জানান, পুনরায় আসামিদের গ্রেফতার করতে আদালত পরোয়ানা জারি করেছে। তাই তাদের গ্রেফতারে পুলিশসহ আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর সঙ্গে সার্বক্ষণিক যোগাযোগ রাখছেন তিনি। ডিআইজি প্রিজন টিপু সুলতান বলেন, ফাঁসির দণ্ডপ্রাপ্ত দুই আসামিকে খালাস দেওয়ার বিষয়টি আমরা গুরুত্ব দিয়ে তদন্ত করছি। এক্ষেত্রে কারও গাফিলতি থাকলে বিধি অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। তাছাড়া দুই আসামির বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট জেলার আদালত থেকে পুনরায় গ্রেফতারি পরোয়ানা জারি করা হয়েছে।