• ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

শারপিন টিলা এখন মরা কঙ্কাল : নেপথ্যে বাপবেটা

bijoy71news
প্রকাশিত আগস্ট ১৯, ২০১৮

নুরুল হক শিপু ::
কোম্পানিগঞ্জের এক সময়ের পাথুরে শারপিন টিলা (শারপিন) এখন যেন মরা কঙ্কাল। এক কালের সুদৃশ্য টিলাটি কেটে, খনন করে বানানো হয়েছে ৬০টির ওপরে বিশাল গর্ত। ধ্বংস করা হয়েছে সেখানকার পরিবেশ-প্রতিবেশ। আর এর নেপথ্যে রয়েছেন জিহাদ আলী ও তার ছেলে মোহাম্মদ আলী। ২০০৪ সালের লিজ গ্রহীতা বশির কোম্পানির প্রোপাইটার মোহাম্মদ আলী। তার বাবা জিহাদ আলী। জিহাদ আলীর মৃত পিতা বশির আলীর নামে খোলা হয় বশির কোম্পানি। ছেলে মোহম্মদ আলী ও বাবা জিহাদ আলীই বশির কোম্পানির হর্তাকর্তা।

সূত্র মতে, ১৬ বছর আগে শারপিন টিলার পাশে পাথর মহাল হিসেবে পাথর উত্তোলনের জন্য ২৫ হেক্টর জায়গা ইজারা নেয় জিহাদ আলীর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান বশির কোম্পানি। ইজারা নেয়ার পর এলাকায় পাথর উত্তোলনের মহোৎসব শুরু হয়। ২৫ হেক্টর জায়গা থেকে পাথর উত্তোলন করতে করতে এক সময় জিহাদ ও তাঁর ছেলে মোহাম্মদ আলী নজর দেন শারপিন টিলার দিকে। ধীরে ধীরে টিলা থেকে পাথর উত্তোলন করা শুরু করেন তারা। পাথর উত্তোলনের জন্য ২৫ হেক্টর জায়গা ইজারা নেয়া হলেও এক সময় দেখা যায় ১৩৭ দশমিক ৫০ একর জুড়ে অবস্থিত সম্পূর্ণ টিলা থেকে পাথর উত্তোলন করা শুরু করেন বাপবেটা। ২০০৯ সালে জেলা প্রশাসনের তদন্ত কমিটির রিপোর্ট অনুযায়ী সরকারের ক্ষতি হয় ২৫১ কোটি টাকার মতো। এতে সরকারের ব্যাপক ক্ষতি সাধিত হয়। ওই তদন্ত প্রতিবেদনে এই সম্পদ লুটের নেপথ্যে মেসার্স বশির কোম্পানি নাম ওঠে আসে।

অনুসন্ধানে জানা গেছে, শারপিন টিলা কেটে অবৈধভাবে পাথর উত্তোলন শুরু হয় প্রায় ১৬ বছর আগে থেকে। একপর্যায়ে ২০০৯ সালে ক্ষয়ক্ষতি নির্ধারণে একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে জেলা প্রশাসন। ওই তদন্তে শারপিন টিলার ক্ষতির পরিমাণ নির্ধারণ করা হয় ২৫১ কোটি টাকা। বিপুল অঙ্কের এ সরকারি সম্পদ লুটের জন্য মেসার্স বশির কোম্পানি নামের একটি কোম্পানিকে অভিযুক্ত করা হলেও আজ অবধি সেই ক্ষতিপূরণ আদায় হয়নি।

সূত্র জানায়, শারপিন টিলার বর্তমান ক্ষতির পরিমাণ হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে গেছে। নিষেধাজ্ঞা অমান্য করে পাথর তুলে শারপিন টিলার ১৩৭ দশমিক ৫০ একর ধ্বংস করা হয়েছে। এখন আর টিলা বলতে কিছু অবশিষ্ট নেই। কঙ্কালটুকু পড়ে আছে। সেখানকার ক্ষয়ক্ষতি হাজার কোটি টাকা ছাড়িয়ে যাবে।

জানা যায়, অপরিকল্পিত পাথর উত্তোলনের ফলে পাথর কোয়ারিগুলোর পরিবেশ ও আশপাশের জনবসতি হুমকির মুখে পড়ায় ২০১৬ সালের ১ সেপ্টেম্বর শারপিন টিলাসহ সিলেটের পাঁচ কোয়ারি থেকে পাথর উত্তোলন নিষিদ্ধ করে খনিজসম্পদ মন্ত্রণালয়। এর আগে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতির (বেলা) দায়ের করা একটি রিটের পরিপ্রেক্ষিতে সিলেটের পাথর কোয়ারিগুলোয় সব ধরনের যন্ত্রের ব্যবহার নিষিদ্ধ করেন উচ্চ আদালত। এরপর শাহ আরফিন টিলা কাটা বন্ধে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ গ্রহণ ও আদালতের আদেশ পালন করতে আদালত অবমাননার নোটিশ পাঠিয়েছে বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা)। এছাড়া, পরিবেশগত ছাড়পত্র না নিয়েই চিকাডোরা মৌজায় অবস্থিত আরফিন টিলা কাটার বিরুদ্ধে বেলা ২০০৯ সালে হাইকোর্টে জনস্বার্থমূলক মামলা দায়ের করে। ওই সময় আদালত টিলা কাটার বিষয়ে নিষেধাজ্ঞা প্রদান করেন, যা এখনও বলবৎ আছে।

এ ব্যাপরে জিহাদ আলী বলেন, ‘আমাদের ইজারার মেয়াদ শেষ হওয়ার পর আমরা আর পাথর উত্তোলন করিনা। কে বা কারা পাথর উত্তোলন করে তাও আমরা জানি না। তিনি তাঁর এবং তাঁর ছেলের বিরুদ্ধে সকল অভিযোগ সঠিক নয় বলে দাবি করেন।’

কোম্পানিগঞ্জের উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা আবুল লাইছ বলেন, ‘শারপিন টিলার ইজারার মেয়াদ এখন নেই। যদি কেউ পাথর উত্তোলন করে থাকে তাহলে সেটা সম্পূর্ণ অবৈধভাবে করছে। তিনি বলেন, আমরা নিয়মিতই অভিযান দেই। অভিযান অব্যাহত থাকবে এবং যারা ঘটনার সাথে জড়িত তাদের বিরুদ্ধেও ব্যবস্থা নেওয়া হবে।’

সিলেটের জেলা প্রশাসক নুমেরী জামান বলেন, ‘শারপিন টিলাসহ কোনো কোয়ারিতে বৈধ ইজারা নেই। দুই একটি কোয়ারি রয়েছে ইজারাভুক্ত যেগুলোতে পাথর উত্তোলন করা হয় কোনো ধরণের মেশিন ছাড়া। বাকিগুলোতে ইজারা ছাড়াই পাথর উত্তোলন করা হচ্ছে। এগুলোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণ করা হবে।’