ডেস্ক রিপোর্ট::
আওয়ামী লীগকে যেকোনো সময়ের চেয়ে শক্তিশালী রাজনৈতিক দল অভিহিত করে আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেছেন, তিনি দুই দুইবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলেন। দলের সভানেত্রীর উপদেশে দলকে পরিচালনা করেছেন। এ সময় আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো ভাঙন ধরেনি, কোনো ইজম তৈরি হয়নি।
গতকাল শনিবার দুপুরে রাজধানীর সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে আওয়ামী লীগের ২০তম জাতীয় সম্মেলনে সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট পেশের সময় সৈয়দ আশরাফ এসব কথা বলেন। তিনি বক্তৃতা দিতে মঞ্চে দাঁড়ালে মুহুর্মুহু করতালি দিয়ে সম্মেলনে আগত কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও অতিথিরা স্বাগত জানান। সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম বলেন, গত দুইবার রাষ্ট্রীয় ক্ষমতায় আছে আওয়ামী লীগ। এই আওয়ামী লীগ গতানুগতিক কোনো রাজনৈতিক দল নয়। পৃথিবীতে অনেক দল আছে। কিন্তু আওয়ামী লীগের আত্মত্যাগের সঙ্গে তাদের তুলনা হয় না। এত বিপর্যয়ের মধ্যে আওয়ামী লীগ টিকে আছে এবং পৃথিবীর মধ্যে শ্রেষ্ঠ রাজনৈতিক দলে পরিণত হয়েছে। তিনি আরও বলেন, আমি দুই দুইবার আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ছিলাম। শেখ হাসিনার উপদেশে আমি দলকে পরিচালনা করেছি। আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো ভাঙন ধরেনি, কোনো ইজম তৈরি হয়নি। আমরা সবাই শেখ হাসিনার নেতৃত্বে, আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতা-কর্মী শেখ হাসিনার পক্ষে গত কয়েক বছর কাজ করেছি। আমাদের দল যেকোনো সময়ের থেকে এখন শক্তিশালী।
সৈয়দ আশরাফ বলেন, আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য এ দেশে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছে। বঙ্গবন্ধু, সৈয়দ নজরুল ইসলাম, ক্যাপ্টেন মনসুর আলী, তাজউদ্দীন, কামরুজ্জামানসহ হাজার হাজার নেতা-কর্মীকে হত্যা করা হয়েছে। তারপরও আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে পারেনি এবং কোনো দিনই পারবে না। জননেত্রী যত দিন আছেন, তিনিই নেতৃত্ব দেবেন। এই জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি না থাকেন, আওয়ামী লীগ কিন্তু মরবে না। আওয়ামী লীগ অজেয় রাজনৈতিক সংগঠন। জাতীয় চার নেতার অন্যতম সৈয়দ নজরুল ইসলামের সন্তান সৈয়দ আশরাফ আরও বলেন, আমি আওয়ামী লীগের সন্তান। আওয়ামী লীগের ঘরেই আমরা জন্ম। আওয়ামী লীগ যখন ব্যথা পায়, আমারও কিন্তু হৃদয়ে ব্যথা লাগে। আওয়ামী লীগের একটা কর্মী যদি ব্যথা পায়, সেই ব্যথা আমিও পাই। আপনারা এখানে এসেছেন, আপনাদের রক্ত আমার রক্ত, একই রক্তে কোনো পার্থক্য নেই। আজকের সম্মেলন ঐতিহাসিক সম্মেলন। শেখ হাসিনার নেতৃত্বে দেশ এগিয়ে যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ এগিয়ে যাচ্ছে। আসুন, আমরা সবাই ঐক্যবদ্ধ হই। বঙ্গবন্ধুর আদর্শ নিয়ে সবাই ঐক্যবদ্ধ হই।
সাধারণ সম্পাদক পদে আর না থাকার গুঞ্জনের মধ্েয আওয়ামী লীগের সম্মেলনে বক্তব্যে দল ও দলীয় প্রধান শেখ হাসিনার প্রতি নিজের আনুগত্যের কথা জানালেন সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম। সম্মেলনের উদ্বোধন অনুষ্ঠানে সাধারণ সম্পাদকের লিখিত বক্তব্য নির্দিষ্ট থাকলেও তা সবাইকে পড়ে নেওয়ার অনুরোধ জানিয়ে আবেগময় ভাষায় কিছু কথা বলেন দুই বারের সাধারণ সম্পাদক আশরাফ। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগের আমি সন্তান। আওয়ামী লীগের ঘরেই আমরা জন্ম। আওয়ামী লীগ যখন ব্যথা পায়, আমারও কিন্তু হৃদয়ে ব্যথা লাগে। আওয়ামী লীগের একটা কর্মী যদি ব্যথা পায় সেই ব্যথা আমিও পাই।
আশরাফ বলেন, আমি দুই দুই বার সম্পাদক ছিলাম। শেখ হাসিনার উপদেশে দলকে পরিচালনা করেছি। আওয়ামী লীগের মধ্যে কোনো ভাঙন ধরেনি, কোনো কন্সপিরিসিজম তৈরি হয়নি।আমরা সবাই শেখ
হাসিনার নেতৃত্বে আমি এবং আওয়ামী লীগের লাখ লাখ নেতা-কর্মী শেখ হাসিনার পক্ষে কাজ করেছি। আজকে আমাদের দল যে কোনো সময়ের থেকে শক্তিশালী।
বঙ্গবন্ধুর ঘনিষ্ঠ সহচর সৈয়দ নজরুল ইসলামের ছেলে আশরাফ দুই বার বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনার সঙ্গে সাধারণ সম্পাদক থাকার পর এবারের কাউন্সিলে আর ওই পদে থাকছেন না বলে গুঞ্জন চলছে। তবে এই বিষয়ে আশরাফ একদিন আগে বলেন, নতুন নেতৃত্বে কারা আসছেন, তা দলীয় সভানেত্রীর বাইরে আর শুধু তিনিই জানেন। গত বছর মন্ত্রিত্ব হারানোর পরও আশরাফ বলেছিলেন, তার রক্ত কখনও বেঈমানি করে না। এক সপ্তাহের মাথায় আশরাফকে মন্ত্রিত্বে ফিরিয়েছিলেন শেখ হাসিনা। দলীয় কর্মীদের ঐক্যবদ্ধ থাকার আহ্বান জানিয়ে সম্মেলনে আশরাফ বলেন, আওয়ামী লীগ শুধু একটা রাজনৈতিক দল নয়। হাজারো শহীদের রক্ত, জাতির পিতার রক্ত, জাতীয় চার নেতার রক্ত, হাজার হাজার নেতাকর্মীর আত্মত্যাগ। আওয়ামী লীগ শুধু একটা রাজনৈতিক দল নয়, এটা অনুভূতি। এই হাজারো হাজারো বন্ধুর রক্ত, চার নেতার রক্ত, ভাষা আন্দোলনের রক্ত, সেই অনুভূতি। এই অনুভূতি সৃষ্টি হয়েছে নাম আওয়ামী লীগ।
আওয়ামী লীগকে ধ্বংস করার জন্য এদেশে অনেক ষড়যন্ত্র হয়েছেৃ. এরপরেও কিন্তু আওয়ামী লীগকে নিঃশেষ করতে পারে নাই এবং কোনো দিনই পারবে না, কোনো দিনই পারবে না। জননেত্রী যতদিন আছেন উনিই নেতৃত্ব দেবেন। কিন্তু এই জননেত্রী শেখ হাসিনা যদি না থাকেন, আওয়ামী লীগ কিন্তু মরবে না। আওয়ামী লীগ অজেয় রাজনৈতিক সংগঠন। আমরা যদি ঐক্যবদ্ধ থাকি পৃথিবীর কোনো শক্তি নাই এই আওয়ামী লীগকে স্তব্ধ করে দিতে পারে নেতা-কর্মীদের উদ্দেশে বলেন আশরাফ। এই বক্তব্য দেওয়ার আগে তিনি বলেন, সাধারণ সম্পাদকের রিপোর্ট বই আকারে প্রকাশ করা হয়েছে, এটা পড়তে অনেক সময় লাগবে। তাই আপনাদের অনুরোধ করব যাওয়ার সময় এটা আপনারা নিয়ে যাবেন।
লিখিত বক্তব্যে আশরাফ দলীয় সভানেত্রী শেখ হাসিনার নির্দেশনা অনুসরণ করে জনগণকে আস্থায় নিয়ে দেশের জন্য কাজ করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান। ব্যক্তি ও দলের চেয়ে দেশের স্বার্থকে সর্বোচ্চ প্রাধান্য নিয়ে দলীয় সকল স্তরের কর্মকা- পরিচালিত করতে হবে। দলীয় ঐক্য ও সংহতিকে সর্বোচ্চ পর্যায়ে নিয়ে যেতে হবে।
দ্বন্দ্ব-সংঘাত পরিহার করে দলীয় কর্মকা- পরিচালনার আহ্বান জানিয়ে আশরাফ বলেন, কারও ব্যক্তিগত কর্মকান্ডে দল যেন ক্ষতিগ্রস্ত না হয়। দলে অশুভ শক্তির চর, সন্ত্রাসী, মাদকসেবী, অসৎ ও বিতর্কিত ব্যক্তির অনুপ্রবেশ যেন না ঘটে, সেদিকে সবাইকে সতর্ক থাকার পরামর্শ দেন আশরাফ। বিরোধী দলের অপপ্রচারের জবাব দেওয়া, জঙ্গি গোষ্ঠীর অপতৎপরতা নিয়ে জনগণকে সচেতন করা, ১৪ দল ও মহাজোটের ঐক্যকে তৃণমূলে সম্প্রসারণ এবং আগামী নির্বাচনে জয়ের জন্য জনগণকে সংগঠিত করার কাজে আত্মনিয়োগ করতে নেতা-কর্মীদের প্রতি আহ্বান জানান আশরাফ।
আওয়ামী লীগের জনসমর্থনের শক্তির জায়গাটির দিকে সবাইকে মনোযোগী হওয়ার পরামর্শ দিয়ে তিনি বলেন, কাউন্সিলে হাজার হাজার কাউন্সিলর ও ডেলিগেটদের অংশগ্রহণই প্রমাণ করে আওয়ামী লীগ জনগণের দল। আজকে এমন একটি দিনে কাউন্সিল হচ্ছে যখন দেশ নিয়ে আবার নতুন করে শুরু হয়েছে ষড়যন্ত্র। উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীর মাধ্যমে জনমনে ভীতির সঞ্চার করে দেশকে অস্থিতিশীল করতে চাইছে এই অশুভ শক্তি। চক্রান্ত চলছে একটি অনির্বাচিত সরকারকে ক্ষমতায় আনার, গণতন্ত্রকে ধ্বংস করার।
কাউন্সিল আয়োজনে কোনো ক্রটি-বিচ্যুতি থাকলে সাধারণ সম্পাদক হিসেবে সে জন্য দুঃখও প্রকাশ করে আশরাফ বলেন, আগামীতে বাংলাদেশ কোন দিকে যাবে সেজন্য এই কাউন্সিল অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। আসুন আমরা নিজেদের প্রশ্ন করি- এদেশে গণতন্ত্র থাকবে না কি অনির্বাচিত সরকার দেশ পরিচালনা করবে? এদেশে কি আবার উগ্র জঙ্গি গোষ্ঠীর বিচরণ ভূমি হবে না কি উদার গণতান্ত্রিক দেশ হবে? এদেশে কি আবার বিচারহীনতার সংস্কৃতি চালু হবে না কি আইনের শাসন চলবে? এদেশ কি সিরিয়া, ইরাক, আফগানিস্তানসহ বিভিন্ন যুদ্ধবিধস্ত দেশে পরিণত হবে না কি শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়ক ধরে এগিয়ে যাবে?সরকারের সাফল্য ও অর্জন জনগণের সামনে তুলে ধরার তাগাদা দিয়ে আশরাফ বলেন, মনে রাখতে হবে প্রতিটি নেতা-কর্মীই দলের একেকজন প্রচারক। দলের সাধারণ সম্পাদক হিসেবে দায়িত্ব পালনের সময় লাখো নেতা-কর্মীর সহায়তার কথা স্মরণ করে সৈয়দ আশরাফ বলেন, সবাই মিলে দলকে এগিয়ে নিতে হবে। বঙ্গবন্ধুর আওয়ামী লীগকে শক্তিশালী করতে হবে।
সকাল ১০টার একটু পরে বাংলাদেশ আওয়ামী লীগের ২০তম ত্রিবার্ষিক জাতীয় সম্মেলনের উদ্বোধনী অনুষ্ঠান শুরু হয়। জাতীয় সংগীত ও দলীয় সংগীতের মধ্য দিয়ে শান্তির প্রতীক পায়রা ও বেলুন উড়িয়ে আওয়ামী লীগের সভাপতি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা দুই দিনব্যাপী এই সম্মেলনের উদ্বোধন করেন। সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান শেষে আওয়ামী লীগের নেতারা বক্তব্য দেওয়া শুরু করেন। বিদেশি অতিথিরাও বক্তব্য দেন। সম্মেলন উপলক্ষে কানায় কানায় পরিপূর্ণ সোহরাওয়ার্দী উদ্যান। কাউন্সিলর, ডেলিগেট ও আমন্ত্রিত অতিথিদের পদচারণে মুখরিত।
দেশের বিভিন্ন প্রান্ত থেকে বাস, মিনিবাস, মাইক্রোবাস ও প্রাইভেট কারে সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন নেতা-কর্মীরা। দলের নেতা-কর্মীরা দেশের বাইরে থেকেও সম্মেলনে যোগ দিতে এসেছেন। এসেছেন বিদেশি অতিথিরাও।দলীয় সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলনে ৬ হাজার ৫৭০ জন কাউন্সিলর অংশ নিচ্ছেন। সম্মেলনের কাউন্সিল অধিবেশন হবে দ্বিতীয় দিন আগামী রোববার ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে। ওই অধিবেশনে নতুন কার্যনির্বাহী সংসদ নির্বাচন করা হবে। এবারের জাতীয় কাউন্সিলে আওয়ামী লীগের স্লোগান হচ্ছে, শেখ হাসিনার নেতৃত্বে উন্নয়নের মহাসড়কে এগিয়ে চলেছি দুর্বার, এখন সময় বাংলাদেশের মাথা উঁচু করে দাঁড়াবার।উদ্বোধনী অধিবেশনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, জাতীয় পার্টির চেয়ারম্যান এইচ এম এরশাদ, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ, বিএনপির চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া, মহাসচিব মির্জা ফখরুল ইসলাম আলমগীরসহ বিভিন্ন রাজনৈতিক দলের নেতাদের আমন্ত্রণ জানানো হয়েছে। দেশের সাবেক কূটনীতিক ও রাষ্ট্রদূত, খ্যাতনামা বুদ্ধিজীবী ও সাংবাদিকেরাও আমন্ত্রণ পেয়েছেন। সম্মেলনে নেতাদের বসার জন্য স্থাপন করা হয়েছে দৃষ্টিনন্দন নৌকা আকৃতির বিরাট মঞ্চ। ১৬৫ ফুট দৈর্ঘ্য ও ৬৫ ফুট প্রস্থের এই মঞ্চে স্থাপন করা হয়েছে ডিজিটাল প্রদর্শনী। মঞ্চের দুই পাশে রাখা হয়েছে বঙ্গবন্ধুসহ জাতীয় নেতাদের প্রতিকৃতি। বিভিন্ন প্রবেশপথ থেকে সম্মেলনস্থল পর্যন্ত বঙ্গবন্ধু, শেখ হাসিনা, শেখ রেহানা, সজীব ওয়াজেদ জয়ের বিভিন্ন অর্জনের ছবি দিয়ে সাজানো হয়েছে।
সম্মেলনের মঞ্চে নিরাপত্তা তল¬াশি নিñিদ্র নিরাপত্তাব্যবস্থা : সোহরাওয়ার্দী উদ্যান, ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন মিলনায়তন ও ঢাকা শহরে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীর ১০ হাজার সদস্য মোতায়েন আছেন। সম্মেলনস্থলে লাগানো হয়েছে প্রায় ১৪০টি সিসি ক্যামেরা।