জাতীয় সংসদ নির্বাচনে আসনভিত্তিক প্রার্থী দেওয়ার পরিবর্তে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (পিআর) নির্বাচনব্যবস্থা চালু করার দাবি জানিয়েছে বেশিরভাগ ইসলামী দল। তারা মনে করছে, এই পদ্ধতি চালু হলে ধীরে ধীরে দেশ থেকে ফ্যাসিবাদ দূর হয়ে যাবে। তবে আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশগ্রহণের সুযোগ পেলে, এই পদ্ধতির সুফল নিয়ে আশঙ্কা প্রকাশ করেছে দলগুলোর নেতারা, তাদের দাবি, পতিত স্বৈরাচারী সরকার নির্বাচনে অংশ নিলে দেশে আবারও ফ্যাসিবাদ ফিরে আসবে। এজন্য তারা এখনই সিদ্ধান্ত নিতে চান না।
বিশ্বব্যাপী গণতান্ত্রিক দেশগুলোতে প্রতিনিধি নির্বাচনের ক্ষেত্রে দুটি প্রধান পদ্ধতি বিদ্যমান: প্রথমত, ‘ফার্স্ট পাস্ট দ্য পোস্ট’ পদ্ধতি, যা বাংলাদেশে চালু রয়েছে, এবং দ্বিতীয়ত, সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব পদ্ধতি (পিআর)। এই পদ্ধতিতে, একটি দল যে পরিমাণ ভোট পাবে, সে অনুযায়ী সংসদে প্রতিনিধিত্ব নির্ধারিত হবে। পৃথিবীর শতাধিক দেশে এই পদ্ধতি চালু রয়েছে। উন্নত দেশগুলোর মধ্যে প্রায় ৭০ শতাংশ দেশ এই পদ্ধতি অনুসরণ করে।
বাংলাদেশের ইসলামী রাজনৈতিক দলগুলোর নেতারা মনে করেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচন হলে কোনো দলই একক কর্তৃত্ব সৃষ্টি করতে পারবে না, এবং এককভাবে সিদ্ধান্ত নেওয়ার পথও বন্ধ হয়ে যাবে। তাদের মতে, প্রধানমন্ত্রীকে স্বৈরাচারী হওয়ার পথ বন্ধ করার একমাত্র উপায় হলো সংসদে সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্ব ব্যবস্থা।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামী সংখ্যানুপাতিক প্রতিনিধিত্বমূলক (পিআর) নির্বাচনব্যবস্থা চালুর দাবি জানিয়েছে। অর্থাৎ, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোকে তাদের প্রাপ্ত ভোটের অনুপাতে আসন দেওয়ার দাবি করছে তারা। চরমোনাই পীরের ইসলামী আন্দোলন বাংলাদেশও একই দাবি জানিয়েছে। দল দু’টির নেতারা বিভিন্ন সভা-সমাবেশে এ বিষয়ে বক্তব্য রাখছেন। তারা বলছেন, এ পদ্ধতি চালু হলে দেশে ফ্যাসিবাদী চিন্তাধারা দূর হবে এবং জাতীয় সংসদে প্রকৃত মেধাবী, সৎ এবং যোগ্য লোকেরা স্থান পাবেন। এতে দেশের গণতন্ত্রও উন্নত হবে।
মাওলানা মামুনুল হকের নেতৃত্বাধীন বাংলাদেশ খেলাফত মজলিসও ভোটের অনুপাতে আসন প্রদানের বিষয়ে একমত প্রকাশ করেছে। তবে তাদের কিছু ভিন্ন চিন্তাভাবনা রয়েছে। এছাড়া, দেশের প্রথম সারির অন্যান্য ইসলামী দলও এ বিষয়ে ইতিবাচক হলেও তারা আশঙ্কা করছে যে, যদি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চালু হয়, তবে ফ্যাসিবাদী দল আওয়ামী লীগ আবার ফিরে আসবে।
খেলাফত মজলিসের নায়েবে আমির মাওলানা আহমদ আলী কাসেমী বলেন, তারা এ পদ্ধতি চালুর বিষয়ে এখনই সমর্থন জানাচ্ছে না, কারণ এতে ফ্যাসিবাদী শক্তি ফিরে আসার সুযোগ তৈরি হতে পারে।
জমিয়তে উলামায়ে ইসলাম বাংলাদেশের মহাসচিব মাওলানা মঞ্জুরুল ইসলাম আফেন্দী বলেন, তারা এই পদ্ধতির সমর্থন করছেন না, কারণ এ পদ্ধতিতে পরাজিত রেজিমের সুবিধা পাওয়ার ঝুঁকি রয়েছে। তবে, যদি আওয়ামী লীগ নির্বাচনে অংশ না নেয়, তাহলে এ পদ্ধতি ভালো ফল বয়ে আনতে পারে।
বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক মুজিবুর রহমান বলেন, সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতিতে নির্বাচনে ক্ষমতাসীন দলের ফ্যাসিবাদী হওয়ার পথ বন্ধ হবে, নমিনেশন বাণিজ্য বন্ধ হবে এবং সন্ত্রাসী তৎপরতা বন্ধ হবে। তিনি বলেন, গণতন্ত্রের মূল স্পিরিট হলো সবাইকে নিয়ে চলা, এবং এই পদ্ধতি দেশের গণতন্ত্রের জন্য উপকারী হবে।
ইসলামী আন্দোলনের সিনিয়র যুগ্ম-মহাসচিব মাওলানা গাজী আতাউর রহমান বলেন, বিগত নির্বাচনে মাত্র ৩৫% ভোট পেয়ে একটি দল ২০০ আসন পেয়ে যাচ্ছে, এবং তারা ১০০% জনগণকে শাসন করার ক্ষমতা পাচ্ছে। তবে যদি সংখ্যানুপাতিক পদ্ধতি চালু হয়, তবে নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলো ভোটের অনুপাতে আসন পাবে, এবং সংসদে সব জনগণের প্রতিনিধি থাকবে।
বাংলাদেশ খেলাফত আন্দোলনের নায়েবে আমির মাওলানা মুজিবুর রহমান হামিদী বলেন, এ পদ্ধতিতে ভালো-মন্দ দু’টি দিক রয়েছে। তিনি বলেন, ভবিষ্যতে এমন আইন করা প্রয়োজন যাতে যারা দুর্নীতি এবং মানবাধিকার লঙ্ঘন করেছে, তারা নির্বাচনে অংশ নিতে না পারে।