• ৮ই সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২৪শে ভাদ্র, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৫ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া ব্যাখ্যা শিক্ষকদের প্রত্যাখ্যান

bijoy71news
প্রকাশিত জুলাই ৩, ২০২৪
অর্থ মন্ত্রণালয়ের দেয়া ব্যাখ্যা শিক্ষকদের প্রত্যাখ্যান

সর্বজনীন পেনশন কর্মসূচি ‘প্রত্যয়’ চালুর প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতি পালন করছেন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা। মঙ্গলবার দ্বিতীয় দিনের মতো এই কর্মসূচি পালন করেছেন তারা। শিক্ষকদের এই আন্দোলনের মধ্যে সর্বজনীন পেনশন স্কিম ‘প্রত্যয়’-এর কিছু বিষয় স্পষ্ট করে অর্থ মন্ত্রণালয় যে ব্যাখ্যা দিয়েছে সেটিও প্রত্যাখ্যান করেছেন শিক্ষকরা। তারা বলছেন, চলমান এই আন্দোলন অব্যাহত থাকবে।

শিক্ষকদের এই আন্দোলনে দেশের ৩৫ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে কার্যত অচলাবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। হচ্ছে না ক্লাস ও পরীক্ষা। গ্রন্থাগার বন্ধ থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। অনলাইন, সান্ধ্যকালীন ও প্রফেশনাল কোর্সের ক্লাসও বন্ধ রয়েছে।

মঙ্গলবার অর্থ মন্ত্রণালয় প্রত্যয় স্কিম সম্পর্কে এক ব্যাখ্যায় বলেছে, ১ জুলাই থেকে এই স্কিম যাত্রা করেছে। স্বশাসিত, স্বায়ত্তশাসিত ও রাষ্ট্রায়ত্ত প্রতিষ্ঠানে ১ জুলাই বা এর পর যোগদানকারী সব কর্মচারী বাধ্যতামূলকভাবে প্রত্যয় স্কিমের আওতাভুক্ত হবেন। ১ জুলাইয়ের আগে যোগদানকারীরা পুরোনো নিয়মেই পেনশন পাবেন। অনুরূপ ব্যাখ্যা দিয়েছে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষও। এক বার্তায় জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ বলেছে, ৩০ জুনের আগে চাকরিতে যোগদানকারী শিক্ষক, কর্মকর্তা, কর্মচারীদের নতুন স্কিমে যুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের স্পষ্টীকরণ ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব ও ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় (ঢাবি) শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া মঙ্গলবার রাতে বলেন, আমরা স্বতন্ত্র বেতন স্কেল চাচ্ছি। আমাদের তিনটি মূল দাবি রয়েছে- প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তন। আর কর্মকর্তা-কর্মচারীদের দাবি শুধু প্রত্যয় স্কিমের প্রজ্ঞাপন বাতিল। ২০১৬ সালে সরকারের পক্ষ থেকে আমাদের সুপার গ্রেডে বেতন দেওয়ার কথা ছিল; কিন্তু এখনো পাইনি। এখন এটাকে যেহেতু সর্বজনীন পেনশন স্কিম বলা হচ্ছে, তাই সরকারি চাকরিজীবীসহ সবাইকে একসঙ্গে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

অর্থ মন্ত্রণালয়ের সংবাদ বিজ্ঞপ্তির বিষয়ে ড. নিজামুল হক ভূঁইয়া বলেন, আমরা সাড়ে তিন মাস ধরে সংবাদ বিজ্ঞপ্তি দিয়েছি, অর্ধদিবসের কর্মবিরতি পালন করেছি। সাড়ে তিন মাসেও তাদের টনক নড়েনি। এখন আমরা যখনই আন্দোলনে গেলাম, তখন বললেন এটা ঠিক, ওটা ঠিক না। আমাদের দাবি- সরকারের পক্ষ থেকে অবশ্যই আমাদের সঙ্গে আলোচনায় বসতে হবে। আমাদের দাবি আর তাদের মধ্যে পার্থক্য কোথায়, সেটার একটা সমাধান হোক।

এর আগে বিকালে গণমাধ্যমকে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক অধ্যাপক ড. জিনাত হুদা বলেন, অর্থ মন্ত্রণালয় কিছু বিষয় স্পষ্ট করে যে ব্যাখ্যা দিয়েছে, আমরা তা দেখেছি। আমরা দুপুরে আন্দোলনরত অবস্থায়ই তা দেখেছি। আমরা অর্থ মন্ত্রণালয়ের এ ব্যাখ্যা প্রত্যাখ্যান করেছি। এটি মানি না। আমাদের আন্দোলন ও কর্মসূচি চলবে।

দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার থেকে আন্দোলন চলার মধ্যে ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যয় এর শুভযাত্রা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ের স্পষ্টীকরণ’ শীর্ষক বার্তা পাঠানো হয় জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ থেকে।

অর্থমন্ত্রী আবুল হাসান মাহমুদ আলী শিক্ষকদের এই আন্দোলনের কোনো যৌক্তিকতা খুঁজে পাচ্ছেন না। তিনি বলেন, ‘প্রত্যয়’ স্কিম নিয়ে শিক্ষকদের আন্দোলনের কোনো যুক্তি নেই।

সর্বজনীন পেনশনের পঞ্চম স্কিম ‘প্রত্যয়’ নিয়ে জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষের ব্যাখ্যা ‘প্রত্যাখ্যান করে আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার’ ঘোষণা দিয়েছে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশন।

অন্যদিকে দুই পক্ষের এই অনড় অবস্থানে হতবাক অভিভাবকরা। আন্দোলনের ৪৮ ঘন্টা অতিবাহিত হলেও কোনো ধরনের আলোচনার উদ্যোগ না দেখে হতাশ তারা।

মঙ্গলবার দুপুরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কলা ভবনের মূল ফটকে শিক্ষকদের অবস্থান কর্মসূচিতে ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক নিজামুল হক ভূঁইয়া এ ঘোষণা দেন।

তিনি বলেন, ‘প্রত্যয় স্কিম প্রত্যাহার করে আগামী বছর ‘সেবক’ নামে স্কিম চালু হলে এবং সেখানে সবার জন্য সুযোগ-সুবিধা রাখা হলে আমরা সেখানে যাব। দেশের স্বার্থে সবার জন্য যা হবে, আমাদের জন্যও তা হবে। তাতে আমাদের কোনো অসুবিধা নেই। কিন্তু প্রত্যয় স্কিম বাতিল করতে হবে।’

বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের সুপার গ্রেডে অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবি আবারো তুলে ধরেন তিনি।

দেশের সব পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ে সোমবার থেকে আন্দোলন চলার মধ্যে ‘সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রত্যয় এর শুভযাত্রা ও প্রাসঙ্গিক বিষয়ের স্পষ্টীকরণ’ শীর্ষক বার্তা পাঠানো হয় জাতীয় পেনশন কর্তৃপক্ষ থেকে। ওই বার্তায় বলা হয়, গত ৩০ জুনের আগে চাকরিতে যোগদানকারী শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের নতুন স্কিমে যুক্ত হওয়ার বাধ্যবাধকতা নেই।

অধ্যাপক নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘তারা এতদিন কোথায় ছিলেন? আমরা এতদিন বিবৃতি-স্মারকলিপি দিয়েছি, সংবাদ সম্মেলন করেছি। সাড়ে তিন মাস আগে যদি আমরা জানতাম বয়সসীমা ঠিকই আছে, তাহলে শিক্ষকরা এত ক্ষুব্ধ হতো না। এখন আন্দোলন স্তিমিত করার জন্য একটা ব্যবস্থা করেছে।’

তিনি বলেন, ‘সরকারি কর্মকর্তাদের আমরা বিশ্বাস করি না। ২০১৫ সালে যেভাবে তারা আমাদের রাস্তায় নামিয়েছে। সুপার গ্রেড আমাদের দেয়নি। সে সময় মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সঙ্গে আমরা কথা বলেছি, একটি কমিটিও হয়েছে। তবে ৯ বছরেও আমরা সুপার গ্রেড পাইনি। তখনো আশ্বাস দিয়েছে। সুতরাং আশ্বাস দিলে হবে না। প্রধানমন্ত্রী আমাদের নিয়ে বসতে হবে। আমাদের সুপার গ্রেড দিতেই হবে। আপনারা আগামী বছর সেবক আনবেন, সেবকে কী সুযোগ-সুবিধা আছে, সেটা আমরা দেখব। সর্বজনীন হলে আমরা কেন যাব না? কিন্তু আমরা আলাদাভাবে যাব না সেখানে।’

শিক্ষার্থীদের বিশেষ ক্লাস-পরীক্ষার মাধ্যমে ক্ষতি পুষিয়ে দেওয়ার চেষ্টা করা হবে বলেও এই শিক্ষক নেতা জানান।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের ডাকে কর্মবিরতির এই কর্মসূচি সর্বাত্মকভাবে পালন করছে নিজ নিজ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতিগুলো। এতে একাত্মতা প্রকাশ করে আন্দোলনের মাঠে সরব হয়েছে কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সমিতিগুলোও।

দ্বিতীয় দিনের মতো ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের চলছে সর্বাত্মক কর্মবিরতি। মঙ্গলবার প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে সব ধরনের সেবা দেওয়া থেকে বিরত থাকছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা। সর্বাত্মক কর্মবিরতির অংশ হিসেবে দুপুর ১২টা থেকে প্রায় ২টা পর্যন্ত কলাভবনের প্রধান ফটকের ভেতরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করে ঢাবি শিক্ষক সমিতি।

এ সময় সাংবাদিকদের প্রশ্নের জবাবে ঢাবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি ও বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের মহাসচিব অধ্যাপক ড. নিজামুল হক ভুঁইয়া বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রী যখন সর্বজনীন পেনশন স্কিমের আইন প্রণয়ন করেছেন, আমরা তখন স্বাগত জানিয়েছি। কিন্তু আমরা বৈষম্যের প্রত্যয় স্কিমের বিরোধিতা করছি।

মঙ্গলবার সকাল ৯টায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয় কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্যপরিষদের ব্যানারে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তা-কর্মচারীরা প্রশাসনিক ভবনের সামনে এক সংক্ষিপ্ত সমাবেশ করেন। সমাবেশ থেকে কর্মকর্তা-কর্মচারী ঐক্য পরিষদের আহ্বায়ক ও ঢাবি অফিসার্স অ্যাসোসিয়েশনের সভাপতি আব্দুল মোতালেব দাবি মানা হলেই কর্মবিরতি বন্ধ করে এখনই কাজে যোগদানের কথা ঘোষণা দেন।

এদিকে প্রশাসনিক ভবন বন্ধ থাকায় জরুরি সার্টিফিকেট, মার্কশিট উত্তোলনসহ জরুরি কাজগুলো করতে পারছেন না বিশ্ববিদ্যালয়ের সাবেক ও বর্তমান শিক্ষার্থীসহ উপাদানকল্প ও সাত কলেজের শিক্ষার্থীরা।

দ্বিতীয় দিন জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ে (জবি) শিক্ষকদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলছে। মঙ্গলবার সকাল সাড়ে ৮টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত কর্মবিরতি পালন করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগ, অনুষদ ও ইনস্টিটিউটের শিক্ষকরা।

সরেজমিনে দেখা যায়, পুরো প্রশাসনিক ভবন প্রায় ফাঁকা। কক্ষগুলো খোলা থাকলেও কোনো সেবা দেওয়া হচ্ছে না। এতে ফিরে যাচ্ছেন সেবাপ্রার্থীরা। অন্যদিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভাগ-ইনস্টিটিউটও বন্ধ পাওয়া গেছে। কোনো শিক্ষক-কর্মচারীকে সেখানে কর্মরত অবস্থায় দেখা যায়নি।

আন্দোলনকারীদের অভিযোগ, বৈষম্যমূলক এই পেনশন স্কিম জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। তাই এই স্কিম প্রত্যাহার না হওয়া পর্যন্ত আন্দোলন চালিয়ে যাওয়ার হুঁশিয়ারি দেন তারা।

পটুয়াখালী বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে (পবিপ্রবি) সর্বজনীন পেনশন স্কিম প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহারের দাবিতে কৃষি অনুষদের সামনে সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সমিতি।

মঙ্গলবার বেলা ১১টায় বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি অর্থ মন্ত্রণালয়ের জারিকৃত পেনশন সংক্রান্ত বৈষম্যমূলক প্রজ্ঞাপন প্রত্যাহার, প্রতিশ্রুত সুপার গ্রেডে বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্তি এবং শিক্ষকদের জন্য স্বতন্ত্র বেতন স্কেল প্রবর্তনের দাবিতে বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে কর্মবিরতি কর্মসূচি পালন করে ।

উক্ত কর্মবিরতি কর্মসূচিতে শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মুন্না বলেন, ‘সারাদেশের সকল বিশ্ববিদ্যালয় একসাথে এ কর্মবিরতি পালন করছে, আমাদের এই কর্মবিরতি আন্দোলন কর্মসূচিকে বাস্তবায়ন করতে সকল শিক্ষক ও সাংবাদিকের প্রতি বিশেষ আহ্বান করছি।’

২য় দিনের মতো শিক্ষক ও কর্মকর্তাদের সর্বাত্মক কর্মবিরতিতে অচলাবস্থা হাবিপ্রবিতে। দাবি বাস্তবায়নে কোনো উদ্যোগ না নেওয়ায় অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়ের ন্যায় সর্বাত্মক কর্মবিরতি পালন করছেন হাজী মোহাম্মদ দানেশ বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক ও কর্মকর্তারা।

মঙ্গলবার সকাল ৯টা থেকে বিকাল ৫টা পর্যন্ত কর্মবিরতি ও দুপুর ১২টা থেকে ১টা পর্যন্ত ড. মুহাম্মদ কুদরাত-এ-খুদা একাডেমিক ভবনের নিচে ঘন্টাব্যাপী অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন হাবিপ্রবি শিক্ষক সমিতি।

এছাড়াও একই সময় বাংলাদেশ আন্তঃবিশ্ববিদ্যালয় অফিসার্স ফেডারেশন হাবিপ্রবির ব্যানারে ড. এম ওয়াজেদ ভবনের নিচে বিশ্ববিদ্যালয়ের কর্মকর্তাদেরকেও কর্মবিরতি পালন করতে দেখা যায়। তারাও ১ থেকে ৩ জুলাই পর্যন্ত লাগাতার কর্মবিরতি পালনের ঘোষণা দিয়েছেন।

শিক্ষকদের কর্মবিরতি চলাকালে বিশ্ববিদ্যালয়ের কোনো বিভাগে ক্লাস-পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হয়নি। তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় গ্রন্থাগার খোলা এবং বাসগুলো নির্ধারিত রুটে চলাচল করেছে।

সর্বজনীন পেনশনের প্রত্যয় স্কিম বাতিলের দাবিতে রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ে শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সর্বাত্মক কর্মবিরতি চলছে। শিক্ষার্থীদের শ্রেণিকক্ষে তালা ঝুললেও বাস চলাচল স্বাভাবিক আছে। চায়ের দোকানগুলো জমেছে কর্মচারীদের আড্ডায়।

শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ সিনেট ভবন চত্বরে এ অবস্থান কর্মসূচি পালন করা হয়।

রাবির শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. মো. হাবিবুর রহমান বলেন, আমরা কর্মসূচি করেছি। ভেবেছিলাম এমন পরিস্থিতি আসবে যে আমাদের আর লাগাতার কর্মসূচির মধ্যে যেতে হবে না। যেহেতু তেমন কিছু হয়নি তাই আমাদের লাগাতার কর্মসূচিতে যেতে হচ্ছে এবং সরকারের অবস্থান খুব অনড় বলেই মনে হচ্ছে। এজন্য আমাদের এটা আরও চালিয়ে যেতে হবে। মঙ্গলবার থেকে আন্তঃকর্মকর্তা ও কর্মচারী পরিষদ আছে তারাও আমাদের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করেছে।

জারিকৃত সর্বজনীন পেনশন ‘প্রত্যয় স্কিম’ প্রত্যাহারসহ তিনদফা দাবিতে অনির্দিষ্টকালের কর্মবিরতির দ্বিতীয় দিন পালন করছে বেগম রোকেয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের (বেরোবি) শিক্ষকরা। এতে বিশ্ববিদ্যালয়ে সৃষ্টি হয়েছে অচলাবস্থার। ক্লাস ও পরীক্ষা বন্ধ থাকায় ব্যাহত হচ্ছে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনা। এতে সেশনজটের শঙ্কায় রয়েছে শিক্ষার্থীরা।

বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের পূর্বঘোষিত কর্মসূচির সাথে একাত্মতা পোষণ করে সর্বাত্মক পূর্ণ কর্মবিরতি পালন করছেন বেরোবির শিক্ষকরা।

বৃষ্টি উপেক্ষা করে বেরোবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. বিজন মোহন চাকী ও সাধারণ সম্পাদক সহযোগী অধ্যাপক আসাদুজ্জামান মণ্ডলের নেতৃত্বে শিক্ষকরা দুপুর ১২টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রশাসনিক ভবনের দক্ষিণ গেটে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন। অপরদিকে কর্মকর্তারা সকাল থেকেই কর্মবিরতি দিয়ে কর্মসূচি পালন করছেন। অলস সময় পার করতে দেখা গেছে কর্মচারীদের।

সরেজমিনে দেখা যায়, সকাল থেকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বিভিন্ন বিভাগের প্রধান ফটকে তালা ঝোলানো। যে সকল বিভাগ খোলা হয়েছে সেগুলোর ক্লাসরুমগুলো তালাবদ্ধ। ক্যাম্পাসে নেই শিক্ষার্থীদের আনাগোনা। একাডেমিক ব্যস্ততার জায়গাগুলোতে বিরাজ করছে সুনসান নীরবতা।

বেরোবি শিক্ষক সমিতির সাধারণ সম্পাদক আসাদুজ্জামান মণ্ডল আসাদ বলেন, বৈষম্যমূলক এই পেনশন স্কিম জোর করে চাপিয়ে দেওয়া হয়েছে। আমরা যে আন্দোলন করছি, সেটা শুধু আমাদের আন্দোলন নয়, এটা আমাদের শিক্ষার্থী ও ভবিষ্যৎ প্রজন্মের জন্য আন্দোলন।

বেরোবি শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. বিজন মোহন চাকী বলেন, সরকার আমাদের দাবি পূরণ না করা পর্যন্ত আন্দোলন চলবে। এ সময় সকল ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ থাকবে। সরকার আমাদের দাবি মেনে নিলে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকরা তাদের স্বাভাবিক কার্যক্রমে ফিরে যাবে।

প্রসঙ্গত, চলতি বছর ১৩ মার্চ সর্বজনীন পেনশন সংক্রান্ত একটি প্রজ্ঞাপন জারি করা হয়। আর এতে ‘প্রত্যয় স্কিম’ এ পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের অন্তর্ভুক্ত করা হয়। অন্তর্ভুক্তির শুরু থেকেই এই ব্যবস্থাকে একটি বৈষম্যমূলক ব্যবস্থা বলে বাতিলের দাবি জানিয়ে আসছে বিভিন্ন পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক সংগঠনগুলো। বাংলাদেশ বিশ্ববিদ্যালয় শিক্ষক সমিতি ফেডারেশনের আহ্বানে এ সংগঠনগুলো দাবি আদায়ে বেশ কিছু কর্মসূচি পালন করছে।