• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

বুয়েটের পর রা‌বিতেও ছাত্রলীগের ত্রাস নৈরাজ‌্য!

bijoy71news
প্রকাশিত মার্চ ৮, ২০২৪
বুয়েটের পর রা‌বিতেও ছাত্রলীগের ত্রাস নৈরাজ‌্য!

বু‌য়েট শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের ম‌তো রাজশাহী বিশ্ববিদ্যালয়ের একটি আবাসিক হলে কক্ষের দরজা লাগিয়ে এক ছাত্রীকে মারধরের হুমকি দেওয়ার অভিযোগ উঠেছে পাঁচ ছাত্রলীগ নেত্রীর বিরুদ্ধে।

বুধবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে বিশ্ববিদ্যালয়ের বেগম রোকেয়া হলের ৩২৩ নম্বর কক্ষে এ ঘটনা ঘটে। এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকালে হল ফটকে অবস্থান নিয়ে আন্দোলন করেন সাধারণ শিক্ষার্থীরা।

হুমকির ঘটনায় অভিযুক্ত ছাত্রলীগ নেত্রীরা হলেন- বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সহ-সভাপতি তামান্না আক্তার, রহমতুন্নেছা হল ছাত্রলীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফাতেমা আশরাফী ওরফে রিমি, ছাত্রলীগ কর্মী লামিয়া ইসরাত, নওরীন শৈলী ও রিয়া। তারা সবাই বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সভাপতি মোস্তাফিজুর রহমান বাবুর অনুসারী। অপরদিকে ভুক্তভোগী শিক্ষার্থী রোজিনা আক্তার রাষ্ট্রবিজ্ঞান বিভাগের ২০১৯-২০ শিক্ষাবর্ষের ছাত্রী।

Advertisement

প্রত্যক্ষদর্শী, আবাসিক ও ভুক্তভোগী শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, গত তিন মাস আগে বিশেষ সুপারিশে আবাসিকতা ছাড়াই হলের ৩২৩ নম্বর কক্ষে ওঠেন ছাত্রলীগ কর্মী লামিয়া ইসরাত; কিন্তু হলে ওঠার তিন মাস হলেও তিনি ওই কক্ষে অবস্থান করেন মাত্র দু-তিন দিন। ছাত্রী হলের প্রচলিত নিয়ম অনুযায়ী কোনো শিক্ষার্থী নিয়মিত কক্ষে না থাকলে তিনি কক্ষে কোনো অতিথি রাখতে পারবেন না।

তবে বিশ্ববিদ্যালয়ের ভর্তি পরীক্ষাকে কেন্দ্র করে নিজের আসনে দুজন পরীক্ষার্থীকে থাকতে দেন লামিয়া। তবে কক্ষে থাকাকালীন ওই দুই অতিথির সঙ্গে রোজিনা (ভুক্তভোগী) অসদাচরণ করেন বলে লামিয়ার কাছে অভিযোগ করেন তারা (অতিথিরা)।

এ অভিযোগের পরিপ্রেক্ষিতে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৪টার দিকে ছাত্রলীগ নেত্রী ফাতেমা আশরাফী, নওরীন শৈলী ও রিয়াকে নিয়ে কক্ষে প্রবেশ করেন লামিয়া। কক্ষে প্রবেশ করে দরজা লাগিয়ে দিয়ে ভুক্তভোগী ছাত্রীকে মারধরের হুমকি দিয়ে শাসাতে থাকেন তারা।

এ সময় তিনি চিৎকার করলে আশপাশের কক্ষ থেকে কয়েকজন ছাত্রী এসে প্রতিবাদ করতে থাকেন। এ সময় ছাত্রলীগ নেত্রীদের সঙ্গে যোগ দেন তামান্না আক্তার। তখন শিক্ষার্থীদের ছাত্রলীগ নেতাদের দিয়ে পেটানোর হুমকি দিয়ে কক্ষ ত্যাগ করেন তারা। এ ঘটনার কিছুক্ষণের মধ্যেই কয়েকজন ছাত্রলীগ নেতাকর্মী হলে প্রবেশ করেন।

এ ঘটনার প্রতিবাদে বৃহস্পতিবার বিকাল সাড়ে ৫টার দিকে রোকেয়া হলের প্রধান ফটকের সামনে অবস্থান নেন হলের প্রায় অর্ধশত আবাসিক ছাত্রী। এ সময় তারা ছাত্রলীগ নেত্রী কর্তৃক হুমকি ও মেয়েদের হলে ছাত্রলীগ নেতাদের প্রবেশের সুষ্ঠু বিচার এবং সুষ্ঠু আবাসন ব্যবস্থার দাবি জানান। আন্দোলনে শিক্ষার্থীরা ‘হলে কেন নিয়ম নাই, বৈধভাবে সিট চাই’ স্লোগান দেন।

অবস্থান কর্মসূচি চলাকালে হলের আবাসিক শিক্ষক দুলাল চন্দ্র কবিরাজসহ বেশ কয়েকজন আবাসিক শিক্ষক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের বোঝানোর চেষ্টা করেন; কিন্তু তারা কর্মসূচি চালিয়ে যান। একপর্যায়ে সেখানে আসেন হল প্রাধ্যক্ষ জয়ন্তী রানী বসাক। তিনি শিক্ষার্থীদের দাবি মেনে নেওয়ার আশ্বাস দেন।

তবে শিক্ষার্থীরা তাদের আন্দোলন চালিয়ে যান। এর কিছুক্ষণ পর ঘটনাস্থলে আসেন বিশ্ববিদ্যালয় শাখা ছাত্রলীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদুল্লা-হিল-গালিব। তিনি শিক্ষার্থীদের সঙ্গে কথা বলে হলের সিসিটিভি ফুটেজ দেখে হলে প্রবেশকারী ছাত্রদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা গ্রহণের আশ্বাস দেন। পরে বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রক্টর অধ্যাপক আসাবুল হক আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের আশ্বাস দিলে শিক্ষার্থীরা হলে প্রবেশ করেন।

এ বিষয়ে ভুক্তভোগী রোজিনা আক্তার বলেন, এ ঘটনার পর আমি নিরাপত্তাহীনতায় ভুগছি। আমি প্রশাসনের কাছে এ ঘটনার সুষ্ঠু বিচার ও নিরাপত্তা চাই। কারণ আমার পরিণতিও বুয়েটের শিক্ষার্থী আবরার ফাহাদের মতো হতে পারত।

অভিযোগের বিষয়ে জানতে চাইলে ছাত্রলীগ কর্মী লামিয়া ইসরাতের মোবাইল ফোনে একাধিকবার কল করা হলেও তিনি কল রিসিভ করেননি। ছাত্রলীগ নেত্রী তামান্না আক্তার তন্বীরও মোবাইল ফোন বন্ধ পাওয়া যায়।

এ ব্যাপারে হলের প্রাধ্যক্ষ জয়ন্তী রানী বসাক সাংবাদিকদের বলেন, ঘটনাটি তদন্তে আমাদের আবাসিক শিক্ষক দুলাল চন্দ্র কবিরাজকে আহ্বায়ক করে পাঁচ সদস্যের একটি তদন্ত কমিটি গঠন করা হয়েছে। আশা করছি, তদন্তের মাধ্যমে ঘটনার আসল সত্যতা উঠে আসবে।