২০১৪ সালের ২৯ আগস্ট আন্তর্জাতিক প্রীতি ম্যাচে সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে মুখোমুখি হয়েছিল বাংলাদেশ-নেপাল। সেই ম্যাচে স্টেডিয়ামের মিডিয়া বক্সের ভবনের ছাদে ওঠে খেলা দেখেছিলেন সিলেট নগরীর সুবিদবাজারের ছেলে বিপলু আহমেদ। সেদিন তার মনের গোপন কুঠুরে উঁকি দিয়েছিল বাংলাদেশ দলে খেলার স্বপ্ন। ঘরের মাঠে লাল-সবুজের জার্সি গায়ে উল্লাসে মাতার গোপন বাসনা ছিল না বিপলুর হৃদমাজারে। বাংলাদেশ দলে খেলার স্বপ্ন পূরণ হয়েছে আগেই। এবার নিজের শৈশব-কৈশোরের চেনা মাঠে খেলার স্বপ্নও বাস্তব হয়ে ধরা দিল বিপলুর জন্য। তাও কী পূর্ণতায় ভরা সেই বাস্তবতা! বঙ্গবন্ধু গোল্ডকাপের পর্দা ওঠার ম্যাচে লাওসের বিপক্ষে একটিমাত্র গোলে জয় পেয়েছে বাংলাদেশ; সেটি যে বিপলুর পা থেকেই এসেছে!
সিলেট জেলা স্টেডিয়ামে সোমবার সন্ধ্যায় মাঠে নেমেছিল বাংলাদেশ ও লাওস। ছয় দেশের অংশগ্রহণে বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক গোল্ডকাপের উদ্বোধনী ম্যাচে ১-০ গোলে জয় পেয়েছেন জামাল ভুঁইয়া, বিপলু, ওয়ালি ফয়সালরা।
ম্যাচের তখন ৫৯ মিনিট। লাওসের বক্সে দারুণ এক হেড নিয়েছিলেন নাবিব নেওয়াজ জীবন। সেই হেড লাওস গোলরক্ষক সায়মনলিন পাসেউথ ফিস্ট করার পর ক্রসবারে লেগে ফিরে আসে বল। তাদের এক ডিফেন্ডার বল ক্লিয়ার করার চেষ্টাকালে জীবনের পায়ে লেগে বল যায় পোস্টেও বাঁ দিকে থাকা বিপলুর কাছে। তার শট গোলরক্ষকের পায়ে লেগে জালে জড়ায়।
গোল উৎসবে তখন মাতোয়ারা স্টেডিয়ামে থাকা প্রায় ১৬-১৭ হাজার দর্শক। গোল করে বিপলু তখন ছুটেই চলেছেন। ছুটতে ছুটতে স্টেডিয়ামের দক্ষিণ-পশ্চিম কোণের গ্যালারির সামনে গিয়ে দাঁড়ালেন তিনি। স্টেডিয়ামের সেই গ্যালারিই যেন সবচেয়ে উন্মাতাল। সেখানে যে বসে আছেন বিপলুর বাবা, মা, ভাই! ছিলেন এলাকার (সুবিদবাজার) অনেকেই।
নিজের বেড়ে ওঠার মাঠে গোল করতে পেরে দারুণ উচ্ছ্বসিত বিপলু। ম্যাচ শেষে এই প্রতিবেদকের সাথে আলাপকালে বলছিলেন, ‘বাংলাদেশ-নেপাল ম্যাচ মাঠে বসে দেখেছিলাম। তখনই মনে স্বপ্ন ছিল, আমিও একদিন বাংলাদেশ দলের হয়ে খেলবো, সিলেটের মাঠে গোল করবো। সেই স্বপ্ন পূরণ হয়েছে। আমি দারুণ খুশি।’
বিপলু বলেন, ‘স্টেডিয়ামের গ্যালারিতে আমার বাবা, মা, ভাইরা ছিলেন। এলাকার অনেক মানুষ ছিলেন। তাই সেদিকেই দৌড়ে গিয়েছিলাম।’
দেশের ঐতিহ্যবাহী দল মোহামেডানের হয়ে তিন মৌসুম খেলার পর এখন শেখ রাসেল ক্রীড়াচক্রে আছেন বিপলু আহমেদ। মোহামেডান জুনিয়র দলেও খেলেছেন তিনি। কিছুদিন আগে দক্ষিণ কোরিয়ায় একটি প্রস্তুতি ম্যাচে বাংলাদেশের হয়ে গোল করেছিলেন বিপলু। তবে সেই ম্যাচের আন্তর্জাতিক মর্যাদা না থাকায় গোলটি স্বীকৃতি পায়নি। এবার বঙ্গবন্ধু কাপে করা গোলটিই তাই তার প্রথম।
অতি সম্প্রতি সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে বাংলাদেশের হয়ে তিনটি ম্যাচেই খেলেন বিপলু। এরও আগে ইন্দোনেশিয়ায় অনুষ্ঠিত হওয়া এশিয়ান গেমসে অনূর্ধ্ব-২৩ দলের হয়েও খেলেন তিনি।
বিপলু এগিয়ে চলেছেন সাফল্যের পথ ধরে। নিজের এগিয়ে যাওয়ার পথে ভাই বাবলুর অবদানের কথা বললেন বিপলু, ‘আমি যে এ পর্যায়ে এসেছি, এর পেছনে ভাই বাবলুর অবদান সবচেয়ে বেশি।’
বঙ্গবন্ধু কাপের শুরুর ম্যাচে লাওসের বিপক্ষে জয় পেলেও বাংলাদেশ আরো বেশি গোল করতে পারতো বলে মন্তব্য বিপলুর, ‘আমরা অনেক সুযোগ নষ্ট করেছি। আমাদের ফিনিশিং ভালো হয়নি। তবে আমরা আত্মবিশ^াসী ছিলাম লাওসকে হারানোর বিষয়ে।’
গোলের ক্ষুধায় ক্ষুধার্ত থাকা বিপলু সাফল্যের সুরের মুর্ছনায় এগিয়ে যেতে চান বহুদূরের পথ।