নবম শ্রেণি থেকে আবারও বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করছে শিক্ষা বিভাগ। পরিকল্পনা অনুযায়ী, নবম শ্রেণির শিক্ষার্থীদের জন্য কয়েকটি বিষয় বাধ্যতামূলক রেখে অনেকগুলো বিষয় উন্মুক্ত রাখা হবে। সেখান থেকে শিক্ষার্থীরা তাদের ইচ্ছা অনুযায়ী নির্ধারিত সংখ্যক বিষয় বাছাই করতে পারবে।
আগামী শিক্ষাবর্ষ থেকে এই পরিকল্পনা বাস্তবায়নের উদ্যোগ নেওয়া হচ্ছে। এটি হলে এ বছরের মতো বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ বলে আলাদা নামে বিভাগ থাকবে না। একজন শিক্ষার্থী তার ক্যারিয়ার পরিকল্পনা অনুযায়ী চাইলে বাধ্যতামূলক বিষয়গুলোর বাইরে পদার্থ, রসায়ন বিষয়ের পাশাপাশি অর্থনীতি বা অন্যান্য বিষয় বাছাই করে পড়তে পারবে।
নতুন শিক্ষাক্রমের আলোকে গত বছর নবম শ্রেণি থেকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগ তুলে দেওয়া হয়েছিল। তবে এই প্রক্রিয়ায় বিষয় নির্বাচনের কোনো স্বাধীনতা ছিল না। সব শিক্ষার্থীকে বাধ্যতামূলক ১০টি অভিন্ন বিষয় পড়তে হতো। পরিকল্পনা ছিল দশম শ্রেণি পর্যন্ত সবাইকে অভিন্ন বিষয় পড়িয়ে একাদশ শ্রেণিতে গিয়ে বিভাজন হবে। এ ক্ষেত্রে উচ্চমাধ্যমিকে বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষার বিষয়গুচ্ছ থাকবে। তবে কেউ বিভাগের বিষয়গুচ্ছকে প্রধান হিসেবে নিয়ে যদি মনে করে তার অন্য বিষয়েও আগ্রহ আছে, তাহলে সে রকম বিষয় নেওয়ারও সুযোগ দেওয়ার কথা ভাবা হচ্ছিল। অবশ্য এ নিয়ে পক্ষে-বিপক্ষে আলোচনা ছিল।
রাজনৈতিক পটপরিবর্তনের পর নতুন শিক্ষাক্রম বাদ দেওয়া হয়েছে। পুরোনো শিক্ষাক্রমের আলোকে ১ লা জানুয়ারি শুরু হওয়া নতুন শিক্ষাবর্ষ থেকে আবারও নবম শ্রেণিতে বিভাজন চালু হয়েছে। এতে একজন শিক্ষার্থী সেই পুরোনো ব্যবস্থার মতো বিজ্ঞান, মানবিক ও ব্যবসায় শিক্ষা বিভাগে পড়বে, যেখানে বাধ্যতামূলক বিষয়ের পাশাপাশি বিভাগভিত্তিক নৈর্বাচনিক তিনটি বিষয় নেবে। এর পাশাপাশি আরেকটি বিষয় ঐচ্ছিক হিসেবে নেওয়ার সুযোগ আছে।
এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তাও এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, পড়ার জন্য মোট বিষয় থাকবে ১০টি। এর মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), ধর্ম বিষয়ের মতো পাঁচ থেকে ছয়টি বিষয় বাধ্যতামূলক রেখে বাকি বিষয়গুলো উন্মুক্ত রাখা হবে। বাকি বিষয়গুলো থেকে পছন্দ করে নির্ধারিত সংখ্যক বিষয় বাছাই করবে শিক্ষার্থীরা।
শিক্ষা মন্ত্রণালয় এবং জাতীয় শিক্ষাক্রম ও পাঠ্যপুস্তক বোর্ড (এনসিটিবি) সূত্রে জানা গেছে, এ বছর থেকেই ভিন্ন পদ্ধতিতে নবম শ্রেণি থেকে বিভাগ বিভাজন তুলে দেওয়ার পরিকল্পনা করেছিল শিক্ষা বিভাগ। কিন্তু প্রয়োজনীয় প্রস্তুতির অভাবের কারণে এ বছর তা বাস্তবায়ন করা হয়নি। এখন আগামী বছর থেকে তা বাস্তবায়নের পরিকল্পনা করা হচ্ছে।
এ পরিকল্পনার বিষয়ে অন্তর্বর্তী সরকারের শিক্ষা উপদেষ্টা অধ্যাপক ওয়াহিদউদ্দিন মাহমুদ বুধবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বলেন, কিছু বিষয় বাধ্যতামূলক রেখে অনেকগুলো বিষয়, যেগুলোকে বিজ্ঞান, মানবিক বা বাণিজ্য শাখা বলা হয়, এই শাখাগুলো তুলে দেওয়া যায়। তুলে দিয়ে সবগুলো বিষয়কে (শাখা বা বিভাগের বিষয়) ঐচ্ছিক করে দেওয়া যায়। যাতে শিক্ষার্থীরা মানবিকের বিষয়ের পাশাপাশি ইচ্ছা করলে বিজ্ঞানের বিষয় নিতে পারে। এতে ভবিষ্যতে সেই শিক্ষার্থী যেকোনো কিছু হতে পারবে। এবার এটা করা গেল না। কারণ, এতগুলো বিষয়, এগুলোকে ঐচ্ছিক করে দিলে বিদ্যালয়গুলোতে সময়সূচি এবং শ্রেণিকক্ষের সমস্যা হবে। কিন্তু ভবিষ্যতে এটা সম্ভব।
এনসিটিবির একাধিক কর্মকর্তাও এই পরিকল্পনার কথা জানিয়েছেন। একজন কর্মকর্তা বলেন, পড়ার জন্য মোট বিষয় থাকবে ১০টি। এর মধ্যে বাংলা, ইংরেজি, গণিত, তথ্য ও যোগাযোগ প্রযুক্তি (আইসিটি), ধর্ম বিষয়ের মতো পাঁচ থেকে ছয়টি বিষয় বাধ্যতামূলক রেখে বাকি বিষয়গুলো উন্মুক্ত রাখা হবে। বাকি বিষয়গুলো থেকে পছন্দ করে নির্ধারিত সংখ্যক বিষয় বাছাই করবে শিক্ষার্থীরা।
এনসিটিবির আরেকজন কর্মকর্তা বলেন, পৃথিবীর অনেক দেশেই বর্তমানে একমুখী শিক্ষাব্যবস্থা থাকলেও তাতে অনেক বিকল্প রাখা আছে। যেকোনো শিক্ষার্থী ইচ্ছা করলে পুরোপুরি বিজ্ঞানের বিষয়গুলো যেমন নিতে পারে, তেমনি কিছু বিষয় বিজ্ঞানের আবার কিছু বিষয় মানবিক বা ব্যবসায় শিক্ষাসংক্রান্ত বাছাই করতে পারে। বিষয় নির্বাচনের স্বাধীনতা থাকলে শিক্ষার্থীরা তাদের ভবিষ্যৎ ক্যারিয়ার চিন্তা করে পড়তে পারবে। ইংরেজি মাধ্যমের পড়াশোনায় এ ধরনের ব্যবস্থা আছে।
ওই কর্মকর্তা বলেন, স্থগিত হওয়া শিক্ষাক্রমে নবম শ্রেণিতে বিভাজন তুলে দেওয়া হলেও ১০টি বিষয় সবার জন্য বাধ্যতামূলক করা হয়েছিল। ফলে বিষয় বাছাইয়ের কোনো স্বাধীনতা ছিল না শিক্ষার্থীদের।
অবশ্য, বিভাজন তুলে দেওয়ার নতুন যে পরিকল্পনা করা হচ্ছে সেটি বাস্তবায়নে চ্যালেঞ্জও আছে অনেক। কারণ, বিষয় নির্বাচনে এত ভিন্নতা থাকলে ক্লাস নিতে অসুবিধা হতে পারে। কারণ, এত শিক্ষক ও অবকাঠামো বর্তমানে নেই। যদিও এনসিটিবির একজন কর্মকর্তা বলেছেন, এখন থেকে পরিকল্পনা করে এগোলো বাস্তবায়ন করা সম্ভব।
জানতে চাইলে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষা ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের অধ্যাপক এস এম হাফিজুর রহমান বলেন, বাইরের দেশের ফর্মুলা হঠাৎ বাংলাদেশে বাস্তবায়ন করা কঠিন। এখানে এমনিতেই অনেক শিক্ষার্থী শিখনঘাটতি রেখে পরবর্তী শ্রেণিতে যায়। এখানকার শিক্ষকদের মধ্যেও দুব৴লতা আছে। এ অবস্থায় এত নিচের ক্লাসে (নবম শ্রেণি) এত বৈচিত্র্য আনাটা ঠিক হবে কি না, সেটি আরও ভাবতে হবে। কারণ, এতে ঝুঁকি আছে। তবে বিস্তারিত পরিকল্পনা জানা গেলে এ বিষয়ে বিস্তারিত বলা যাবে।