• ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

আমাদের সংবিধান যেনো মতলবি না হয়: জামায়াত আমীর

bijoy71news
প্রকাশিত অক্টোবর ৯, ২০২৪
আমাদের সংবিধান যেনো মতলবি না হয়: জামায়াত আমীর

জামায়াতে ইসলামীর আমির ডা. শফিকুর রহমান বলেছেন, আমাদের সংবিধান যেনো মতলবি সংবিধান না হয়। শুধু নির্বাচন নয়, সমগ্রিক সমাজ কাঠামো ধরে সংবিধান হতে হবে।

বুধবার (০৯ অক্টোবর) দুপুরে রাজধানীর হোটেল ওয়েস্টিনে বাংলাদেশ জামায়াতে ইসলামীর ‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা’ অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য প্রদানকালে ডা. শফিকুর রহমান আরও বলেন, আওয়ামী লীগ তো নির্বচন চায় না। তাদের ওপর নির্বাচন চাপিয়ে দিলেতো সেটা জুলুম হবে; একটা বৈষম্য হবে।

তিনি বলেন, ‘আওয়ামী লীগ নির্বাচনে আসুক, আমরা চাই কি না — এমন প্রশ্ন এসেছে। তারা কি নির্বাচন করেছিলো, না। তারা ক্ষমতায় থাকতে চেয়েছিলো? তারা নির্বাচন চায়নি। এজন্য রাতের অন্ধকারে ভোট করেছিল পুলিশ আর প্রশাসন দিয়ে। যারা নির্বাচন চায় না, তাদের ওপর নির্বাচন চাপায়ে দিলেতো জুলুম হবে। এটাও একটা বৈষম্য হবে।’

আগে নির্বাচন, না আগে সংস্কার — এমন প্রশ্নে জামায়াত আমির বলেন, দুটি রোডম্যাপ হবে। একটা সংস্কারের আর একটা নির্বাচনের। তবে সময় যেনো অতি দীর্ঘ না হয়, আবার অতি সংক্ষিপ্ত না হয়। দেশে অনেক রাজনৈতিক দল আছে। একটি বর্ণাঢ্য সংসদের জন্য জনগণের কোন ব্যাক্তিকে না ভোট দিতে হবে দলকে।

‘রাষ্ট্র সংস্কার প্রস্তাবনা’ উপস্থাপন করেন জামায়াতে ইসলামীর নায়েবে আমির ও সাবেক সংসদ সদস্য ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের। । এ সময় গত জুলাই-আগস্টে ছাত্রজনতার অবদানের কথা শ্রদ্ধার সঙ্গে স্মরণ করেন তিনি। নিহত এবং আহতদের জন্য দোয়া কামনা করেন। অনুষ্ঠান পরিচালনা করেন জামায়াতের কেন্দ্রীয় প্রচার ও মিডিয়া বিভাগের সম্পাদক মতিউর রহমান আকন্দ।

সংস্কারের প্রস্তাবনা তুলে ধরে ডা. সৈয়দ আবদুল্লাহ মুহাম্মদ তাহের বলেন, নির্বাচন সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করতে ব্যাপক সংস্কার করতে হবে। বিচার বিভাগ সংস্কার করতে হবে। সুপ্রিম কোর্টের অধীনে আইন কমিশন গঠন করতে হবে। সাইবার নিরাপত্তা আইন বাতিল করতে হবে। বিভাগীয় পর্যায়ে হাইকোর্টের বেঞ্চ গঠন করতে হবে। সর্বোচ্চ পাঁচ ও তিন বছরের মধ্যে মামলা নিষ্পত্তি করতে হবে। সংসদে বিরোধী দলের জন্য পর্যাপ্ত সময় দিতে হবে।

তিনি বলেন, সুষ্ঠু নির্বাচনের জন্য সংবিধানে স্থায়ীভাবে তত্ত্বাধায়ক ব্যবস্থা যুক্ত করতে হবে। একদিনেই জাতীয় সংসদ নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে হবে। কোনো সরকারি চাকরিজীবী অবসরের তিন বছরের আগে সংসদ নির্বাচনে অংশ নিতে পারবে না। স্বাধীন পুলিশ কমিশন গঠন করতে হবে। পুলিশে ধর্মীয় শিক্ষা চালু করতে হবে। রিমান্ডে নেওয়ার সময় পরিবারের প্রতিনিধির উপস্থিতি নিশ্চিত করতে হবে। র‌্যাব সংস্কার করতে হবে। যাতে বাহিনীর প্রতি আস্থা ফিরে আসে। এক্ষেত্রে যারা আগে দায়িত্ব পালন করেছেন তাদেরকে বাহিনীতে রাখা যাবে না।

ডা. তাহের বলেন, জনপ্রশাসনে যোগ্যতা, দক্ষতা ও সততাকে প্রাধান্য দিতে হবে। সরকারি চাকরিতে আবেদন বিনামূল্যে করতে হবে। কোনো ফি রাখা যাবে না। আগামী ২ বছরের জন্য চাকরিতে ৩৫ বছর, পরবর্তীতে স্থায়ীভাবে ৩৩ বছর এবং অবসরের বয়সসীমা ৬২ বছর করার প্রস্তাবনা করছি। চাকরিতে বিরাজমান আন্তঃক্যাডার বৈষম্য দূর করতে হবে। যারা চাকরিতে থেকে দুর্নীতি ও অন্যায় করেছেন তাদেরকে বহিষ্কার করতে হবে। দুদকে যোগ্য, দক্ষ এবং সৎ ব্যক্তিকে নিয়োগ দিতে হবে। এক ব্যক্তি পর পর দুইবারের বেশি প্রধানমন্ত্রী থাকতে পারবেন না। সব শ্রেণির পাঠ্য বইয়ে ২০২৪ সালের অভ্যুত্থানের ইতিহাস এবং মহানবী (সা.) এর জীবনী অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

তিনি আরও বলেন, সংস্কৃতির সংস্কার করতে হবে। প্রাণীর মূর্তি নির্মাণ না করে দেশি সংস্কৃতির বিকাশ ঘটাতে হবে। পররাষ্ট্র ক্ষেত্রে ভারসাম্যপূর্ণ সম্পর্ক বজায় রাখতে হবে। বিগত সরকারের আমলে সম্পাদিত চুক্তি রিভিউ করতে হবে। এজন্য একটি রিভিউ কমিশন গঠন করা যেতে পারে। বাংলাদেশকে আসিয়ানের সদস্য হিসেবে অন্তর্ভুক্ত করতে হবে।

ইসলামী ফাউন্ডেশন রাষ্ট্রের কল্যাণে কাজ করতে পারে সেই ব্যবস্থা নিতে হবে। হজ ও ওমরাহর খরচ কমানোর প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে। সব ধর্মের অধিকার নিশ্চিত করতে হবে।

অনুষ্ঠানে জামায়াতে ইসলামীর কেন্দ্রীয় নেতা অধ্যাপক মুজিবুর রহমান, আ না ম শামসুল ইসলাম, এটিএম মাছুম, সাইফুল আলম খান মিলন, মাওলানা রফিকুল ইসলাম খান, হামিদুর রহমান আযাদ, মাওলানা আবদুল হালিম, এহসানুল মাহবুব জুবায়ের, নূরুল ইসলাম বুলবুল, মোহাম্মদ সেলিম উদ্দিন প্রমুখ উপস্থিত ছিলেন।