নুরুল হক শিপু:::
বিগত আট বছর ধরে ভারপ্রাপ্ত সভাপতি ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক নিয়ে চলছে সিলেট জেলা যুবলীগের কার্যক্রম। নতুন করে কমিটি না আসায় তাদের কার্যক্রমে যেমন স্থবিরতা বিরাজ করছে, তেমনি সিলেটে অস্তিত্ব সংকটে রয়েছে আওয়ামী লীগের এই অঙ্গসংসঠন। একই সাথে দীর্ঘদিন ধরে জেলা যুবলীগের রাজনীতি করে পদ-পদবি না পাওয়ায় তৃণমূল নেতাকর্মীদের মধ্যেও রয়েছে হতাশা। জেলা যুবলীগকে চাঙা করতে অভিভাবক সংগঠন আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতাদেরও নেই তেমন মাথাব্যথা। অনেকটাই লাগামছাড়া অবস্থায় এখন সিলেট জেলা যুবলীগ। মহানগর যুবলীগে এর বিপরীত চিত্র। জেলার তুলনায় এগিয়ে রয়েছে মহানগর যুবলীগের কার্যক্রম। মহানগর যুবলীগকে আরো শক্তিশালী করতে মাঠে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত থেকে শুরু করে কেন্দ্রীয় যুবলীগের সভাপতি-সাধারণ সম্পাদক এবং সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা রয়েছেন ব্যস্ত।
মহানগর যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০১৪ সালের ৭ জুলাই আলম খান মুক্তিকে আহ্বায়ক, মুশফিক জায়গীরদার, সেলিম আহমদ সেলিম, সাইফুর রহমান খোকন ও আসাদুজ্জামান আসাদকে যুগ্ম আহ্বায়ক করে ৬১ সদস্যের আহ্বায়ক কমিটির অনুমোদন দেয় কেন্দ্রীয় যুবলীগ। কমিটি অনুমোদনের পরই মহানগরের বিভিন্ন ওয়ার্ড কমিটি গঠনের কাজ শুরু করে নতুন আহ্বায়ক কমিটি। এরই ধারাবাহিকতায় ১, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ১৬, ১৭, ১৯, ২০, ২১ এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ডে সম্মেলনের মাধ্যমে কমিটি গঠন করা হয়। এর মধ্যে ১৯, ২০ এবং ২১ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সম্মেলনে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত, যুবলীগের প্রেসিডিয়াম সদস্য ড. আহমদ আল কবির, কেন্দ্রীয় সাংগঠনিক সম্পাদক ফজলুল হক আতিক এবং মহানগর আওয়ামী লীগের শীর্ষ নেতারা উপস্থিত ছিলেন। ১, ৩, ৪, ৫, ৬, ৭, ১৬, ১৭ এবং ২৪ নম্বর ওয়ার্ড যুবলীগের সম্মেলনে উপস্থিত ছিলেন মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি, সাবেক মেয়র বদর উদ্দিন আহমদ কামরান, সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ, সহসভাপতি মুক্তিযোদ্ধা আব্দুল খালিক, যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ফজলুল আনোয়ার আলাওর, অধ্যাপক জাকির হোসেন, সাংগঠনিক সম্পাদক এটিএম হাসান জেবুল, প্রচার সম্পাদক আব্দুর রহমান জামিল, শিক্ষা সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদসহ আওয়ামী লীগ, যুবলীগ ও ছাত্রলীগ নেতৃবৃন্দ।
মহানগর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক আসাদ উদ্দিন আহমদ বলেন, ‘মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক কমিটি খুব সুন্দরভাবে তাদের কার্যক্রম চালিয়ে যাচ্ছে। সম্মেলনের মাধ্যমে তারা ওয়ার্ড কমিটিগুলো উপহার দিচ্ছে। অতীতে এমন উৎসবমুখর পরিবেশে ওয়ার্ডের সম্মেলন হয়নি। আমরা মহানগর যুবলীগ নেতাদের উপর সন্তুষ্ট বলেই তাদের সবল কার্যক্রমে সহযোগিতা করে যাচ্ছি। তারাও কেন্দ্রীয় সকল কর্মসূচি পালন করে যাচ্ছে। বাকি ওয়ার্ডের কমিটি গঠনের ক্ষেত্রে তাদেরকে আরো কিছুদিন সময় দিলে তাদের পক্ষে আরো ভালো কমিটি উপহার দেওয়া সম্ভব হবে বলে বিশ্বাস করি।’
মহানগর যুবলীগের আহ্বায়ক আলম খান মুক্তি বলেন, ‘অতীতে সম্মেলনের মাধ্যমে কোনো ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়নি। তাঁকে আহ্বায়কের দায়িত্ব দেওয়ার পর থেকে তিনি সম্মেলনের মাধ্যমে সঠিক নেতৃত্ব গড়ে তোলার চেষ্টা অব্যাহত রেখেছেন। তিনি বলেন, ১২টি ওয়ার্ড কমিটি গঠন করা হয়েছে। কমিটিতে শিক্ষিত, ত্যাগী এবং নিবেদিত নেতারা তাদের যোগ্যতা অনুযায়ী স্থান পাচ্ছেন। তিনি বলেন, প্রত্যেকটি ওয়ার্ডে সঠিক নেতৃত্ব নিয়ে আসতে আওয়ামী লীগের উপদেষ্টা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত সার্বিক সহযোগিতা ও দিঙ্নির্দেশনা দিয়ে যাচ্ছেন। বিশেষ করে যুবলীগের চেয়ারম্যান মো. ওমর ফারুক চৌধুরী, সাধারণ সম্পাদক হারুন রশিদসহ কেন্দ্রীয় নেতারা সব সময় মহানগর যুবলীগের সার্বিক কাজে দিঙ্নির্দেশনা দেওয়ার পাশাপাশি খোঁজখবর নিচ্ছেন। সিলেট মহানগর আওয়ামী লীগের সভাপতি ও সাধারণ সম্পাদকসহ শীর্ষ নেতারাও সব সময় পাশে থেকে মহানগর যুবলীগকে এগিয়ে নিতে সহযোগিতা করছেন। আলম খান মুক্তি বলেন, ১৫টি ওয়ার্ডের সম্মেলন বাকি রয়েছে; শীঘ্রই সম্মেলনের সাধ্যমে এসব ওয়ার্ডের কমিটি গঠন শেষে সম্মেলনের মাধ্যমে মহানগর যুবলীগের শক্তিশালী কমিটি গঠন করা হবে। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘মহানগর যুবলীগের কোনো নেতাকর্মী দখলবাজি কিংবা টেন্ডারবাজির সাথে জড়িত নয়; ওয়ার্ড কমিটিগুলোর নেতারাও ক্লিন ইমেজের দেখে কমিটিতে আনা হয়েছে। প্রত্যেকটি সম্মেলনে হাজারো নেতাকর্মীর ঢল নামে।’
জেলা যুবলীগ সূত্রে জানা গেছে, ২০০৩ সালে সম্মেলনের মাধ্যমে জগদীশ চন্দ্র দাসকে সভাপতি ও আজাদুর রহমান আজাদকে সাধারণ সম্পাদক করে গঠন করা হয় তিন বছর মেয়াদি কমিটি জেলা কমিটি। ২০০৮ সালের সিটি কর্পোরেশন নির্বাচনের সময় তৎকালীন সভাপতি জগদীশ ও সম্পাদক আজাদুর রহমান আজাদ দলীয় পদ ছেড়ে কাউন্সিলর প্রার্থী হয়েছিলেন। পরবর্তীকালে ভারপ্রাপ্ত সভাপতির দায়িত্ব পান শামীম আহমদ ও ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদকের দায়িত্ব পান খন্দকার মহসিন কামরান। এরপর থেকে কমিটি চলছে ভারপ্রাপ্তদের দিয়েই।
যুবলীগের একটি সূত্র দাবি করেছে, বিগত কয়েক বছরে বেশ কয়েকবার সিলেট জেলা যুবলীগের কমিটি ঢেলে সাজানোর চেষ্টা করা হলেও অজ্ঞাত কারণে তা সম্ভব হচ্ছে না।
এ ব্যাপারে সিলেট জেলা যুবলীগের ভারপ্রাপ্ত সভাপতি শামীম আহমদ বলেন, ‘সিলেট জেলা যুবলীগের কমিটি অনেক পুরনো এটা ঠিক। কিন্তু এ কারণে সিলেটে যুবলীগের কার্যক্রমে কোনো স্থবিরতা নেই। জেলা যুবলীগ কেন্দ্রের নির্দেশনা মেনে সকল কার্যক্রমে অংশ নিচ্ছে।’
তিনি বলেন, দীর্ঘদিন ধরে এক কমিটি বহাল থাকায় অনেক নেতারা কিছুটা মনঃক্ষুণ। কিন্তু এর মানে এটা নয় যে সিলেটে যুবলীগ পিছিয়ে পড়েছে। আমরা ৮টি উপজেলা কমিটি গঠন করেছি। ৫টি উপজেলা কমিটি বাকি রয়েছে। এগুলো স্থানীয় এমপিদের সাথে সমন্বয় করে করা লাগছে। তাই বিলম্ব হচ্ছে। এমপিরা আমাদেরকে ইউনিয়ন নির্বাচনের পর সময় দিয়েছেন। এখনও নির্বাচন শেষ হয়নি। নির্বাচন শেষে পাঁচ উপজেলার কমিটি আমরা শীঘ্রই দিতে পারব। এরপরই আমরা সম্মেলনের আয়োজন করব। শামীম বলেন, কানাইঘাটে ২৪ বছর ও বিশ্বনাথে ১৫ বছর পর সম্মেলন করেছে বর্তমান কমিটি। এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, বর্তমান কমিটিও চায় সিলেট জেলা যুবলীগের সম্মেলন হোক।’