• ১৭ই মে, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ৩রা জ্যৈষ্ঠ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জিলকদ, ১৪৪৬ হিজরি

‘পোশাক রপ্তানির আড়ালেই সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার’

bijoy71news
প্রকাশিত নভেম্বর ২৭, ২০২৪

পোশাক রপ্তানির আড়ালেই সবচেয়ে বেশি অর্থ পাচার হওয়ার সুযোগ রয়েছে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা। তাদের ভাষ্য, তথ্যের অভাব ও ব্যাংকগুলোর মধ্যে তীব্র প্রতিযোগিতায় আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে পণ্যের দাম যাচাই করা হয় না। আর এ সুযোগ নিয়েই অর্থ পাচার করেন ব্যবসায়ীরা।

বুধবার (২৭ নভেম্বর) সকালে বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ব্যাংক ম্যানেজমেন্টে (বিআইবিএম) আয়োজিত সেমিনারে এসব কথা বলেন আলোচকরা।

সেমিনারে বক্তারা বলেন, তৈরি পোশাক শিল্পে আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে পণ্যের দামে অনিয়ম করে বিপুল পরিমাণ অর্থ দেশ থেকে পাচার হচ্ছে। ব্যাংকারদের জন্য সুনির্দিষ্ট কোনো তথ্য ভা-ার কিংবা পদ্ধতি নেই, যার মাধ্যমে সব পণ্যের দাম যাচাই-বাছাই সম্ভব হবে। অনেক সময় অর্থ পাচারের ক্ষেত্রে ব্যাংকার ও বিভিন্ন সরকারি সংস্থার কর্মকর্তারা জড়িত থাকেন বলেও অভিযোগ করেন তারা। রাজস্ব ফাঁকি ও অর্থ পাচার করতে ব্যবসায়ীরাই আমদানি-রপ্তানি বাণিজ্যে পণ্যের প্রকৃত দাম এড়িয়ে চলে বলে দাবি তাদের।

বিআইবিএমের অধ্যাপক শাহ মো. আহসান হাবিব বলেন, ‘আরএমজি (তৈরি পোশাক) এমন একটি সেক্টর; যেখানে প্রাইজ অনেক ভ্যারি করতে পারে। সম্ভাবনার কথা বিবেচনা করলে এটিই সবচেয়ে বড় এরিয়া; যার মাধ্যমে আমরা দেশ থেকে টাকা বাইরেও নিয়ে যেতে পারি, আবার ট্যাক্স ফাঁকিও দিতে পারি। এ কাজগুলো আমরা এর মাধ্যমেই করতে পারি।’

ইসলামী ব্যাংকের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মাহমুদুর রহমান বলেন, ‘বাংলাদেশে বিগত দিনে যা ইমপোর্ট হয়েছে, তার সব দেশে আসছে না, হাজার হাজার কোটি টাকা। কাস্টমসের লোকরাই এন্ট্রি দিয়েছে। যে দেশে সবাইকে কেনা যায়, সে দেশে কি কাস্টমসকে কেনা যায় না?’

বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি গভর্নর নুরুন নাহার বলেন, আগে যেটা দেখা যেত, অনেক ওভার ইনভয়েসিং পাওয়া যেত। এখন কিন্তু অনেকটাই কমে গেছে। আশার কথা হলো, ব্যাংকাররাও অনেক সচেতন হয়েছেন।

ব্যাংক কর্মকর্তারা জানান, অর্থ পাচার ও রাজস্ব ফাঁকি রোধ করতে রাজস্ব বোর্ডসহ সংশ্লিষ্ট সবার মধ্যে সমন্বয় প্রয়োজন। পাশাপাশি পাচারের সঙ্গে যারা জড়িত, তাদের দৃষ্টান্তমূলক শাস্তি নিশ্চিতের দাবিও জানান তারা।

২০২৩ সালের সেপ্টেম্বর মাসে কাস্টমস গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর জানায়, চট্টগ্রাম বন্দর দিয়ে পোশাক রপ্তানিকারক ১০টি প্রতিষ্ঠান পণ্য রপ্তানি করছে; কিন্তু সেই রপ্তানি পণ্যের মূল্য দেশে আসছে নাÑ এমন সন্দেহ থেকে তদন্তে নেমে প্রায় ৩০০ কোটি টাকা পাচারের তথ্য পেয়েছে তারা।

ওই বিজ্ঞপ্তিতে বলা হয়, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো বিল অব এক্সপোর্ট জালিয়াতি করে অন্য রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানের ইএক্সপি ব্যবহার করে পণ্য রপ্তানি করেছে। এ ছাড়া বিল অব এক্সপোর্টের ২৪ নম্বর কলামে নমুনার কোড ২০ ব্যবহার করেছে। এ ক্ষেত্রে পুরো চালানের রপ্তানিমূল্য বিদেশে পাচার হয়েছে। সংশ্লিষ্ট দলিল পর্যালোচনা করে দেখা গেছে, রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানগুলো ১ হাজার ২৩৪টি চালানে এমন জালিয়াতি করেছে। এসব চালানে রপ্তানি হয়েছে ৯ হাজার ১২১ টন পণ্য। তারা কানাডা, রাশিয়া, ফ্রান্স, অস্ট্রেলিয়া, মালয়েশিয়া, শ্রীলঙ্কা, পানামাসহ ২২ দেশে এসব পণ্য রপ্তানি করে পাচার করেছে ৩ কোটি ৫৩ লাখ ৬৬ হাজার ৯১৮ মার্কিন ডলার বা ৩০০ কোটি টাকা।