• ৩রা ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১৮ই অগ্রহায়ণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১লা জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ব্রিটিশ বাংলাদে‌শি দুই নারী যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীসভায়

bijoy71news
প্রকাশিত জুলাই ১১, ২০২৪
ব্রিটিশ বাংলাদে‌শি দুই নারী যুক্তরাজ্যের মন্ত্রীসভায়

ব্রিটিশ বাংলাদেশি দুই এমপি রুশনারা আলী ও টিউলিপ সিদ্দিক যুক্তরাজ্যের লেবার পার্টির সরকারের সহকারী মন্ত্রী হয়েছেন।

দেশ‌টির নতুন প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমার তাদের নিয়োগ দেন।

টিউলিপ হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে এবং রুশনারা বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসন থেকে এবার পুনর্নির্বাচিত হন।

যুক্তরাজ্যের পার্লামেন্টের চারবারের এমপি টিউলিপ সিদ্দিককে করা হয়েছে ‘সিটি মিনিস্টার’। তিনি অর্থ মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাচ্ছেন। এই দপ্তরের পূর্ণমন্ত্রী হিসাবে রয়েছেন র‌্যাচেল রিভস।

আর পাঁচবারের এমপি রুশনারা আলীকে করা হয়েছে গৃহায়ণ, কমিউনিটি ও স্থানীয় সরকার মন্ত্রণালয়ের প্রতিমন্ত্রী।

স্থানীয় সময় মঙ্গলবার বিকালে বেশ কয়েকটি সংবাদমাধ্যম টিউলিপ সিদ্দিকের সিটি মিনিস্টার হিসেবে নিয়োগ পাওয়ার সংবাদ প্রকাশ করে। পরে রুশনারা আলীও কিয়ার স্টারমারের মন্ত্রিসভায় নিয়োগ পেয়েছেন বলে খবর বের হয়। রাতে প্রধানমন্ত্রী স্টারমারের অফিস থেকে সরকারিভাবে এই দুজনকে মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করার কথা জানানো হয়।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের নাতনি ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার ভাগনি টিউলিপ সিদ্দিক টোরি সরকারের বিম আফোলামির স্থলাভিষিক্ত হবেন। তিনি কিয়ার স্টারমার সরকারের আর্থিক পরিষেবা খাতের তত্ত্বাবধান করবেন।

৪১ বছর বয়সী টিউলিপ ২০২১ সাল থেকে লন্ডনের ‘দ্য সিটি’ নামে লেবার পার্টির আর্থিক পরিসেবা শিল্পের নীতির প্রণয়নে নেতৃত্ব দিয়ে আসছেন। এর আগে তিনি লেবার পার্টির ছায়া শিক্ষামন্ত্রী হিসেবে কাজ করেন।

১৬ বছর বয়সে লেবার পার্টিতে যুক্ত হওয়া টিউলিপ সিদ্দিক ২০১০ সালে কাউন্সিলর নির্বাচিত হন। পরে ২০১৫ সালে হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড কিলবার্ন আসনের এমপি নির্বাচিত হন। সর্বশেষ গত ৪ জুলাই লন্ডনের হ্যাম্পস্টেড অ্যান্ড হাইগেট আসন থেকে কনজারভেটিভ পার্টির প্রার্থি ডন ইউলিয়ামসকে ১৪ হাজার ৯৭০ ভোটের বিশাল ব্যবধানে হারিয়ে চতুর্থবারের মতো এমপি নির্বাচিত টিউলিপ।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ছোট মেয়ে শেখ রেহানা টিউলিপ সিদ্দিকের মা। ১৯৭৫ সালে বঙ্গবন্ধু হত্যাকাণ্ডের পর নির্বাসিত জীবনে দুই মেয়ে ও এক ছেলেকে নিয়ে শেখ রেহানার সংগ্রামী জীবনের কথা বিভিন্ন সময়ে বড় বোন শেখ হাসিনার কথায় উঠে আসে।

এদিকে টানা পাঁচবার ব্রিটিশ পার্লামেন্টের এমপি নির্বাচিত হওয়া রুশনারা আলী পেয়েছেন হাউজিং, কমিউনিটি অ্যান্ড লোকাল গভর্মেনন্টের দায়িত্ব।

২০১০ সালে বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত প্রথম ব্রিটিশ নাগরিক হিসেবে লন্ডনের বাঙালি অধ্যুষিত বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড বো আসন থেকে এমপি নির্বাচিত হয়ে ইতিহাস গড়েন রুশনারা। সর্বশেষ বেথনাল গ্রিন অ্যান্ড স্টেপনি আসনে আরেক বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত স্বতন্ত্র প্রার্থী আজমল মসরুরকে ১ হাজার ৬৮৯ ভোটে হারিয়ে এমপি নির্বাচিত হন ৪৯ বছর বয়সী রুশনারা।

রুশনারা আলীর পৈত্রিক বাড়ি বাংলাদেশের সিলেটের বিশ্বনাথ উপজেলায়। এর আগে তিনি লেবার পার্টির আন্তর্জাতিক উন্নয়নবিষয়ক ছায়ামন্ত্রীর দায়িত্ব পালন করেন।

গত ৪ জুলাইয়ের নির্বাচনে রুশনারা ও টিউলিপসহ বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত চার ব্রিটিশ নাগরিক লেবার পার্টির মনোনয়নে এমপি নির্বাচিত হন। অন্য দুজন হলেন– রুপা হক ও আপসানা বেগম।

বাংলাদেশি কমিউনিটিতে উচ্ছ্বাস-আনন্দ

দুই বাঙালি কন্যা সরকারে স্থান পাওয়ায় উচ্ছ্বসিত যু্ক্তরাজ্যের বাঙালিরা। বাঙালি কমিউনিটির মানুষের শুভেচ্ছা, ভালবাসায় সিক্ত হচ্ছেন রুশনারা ও টিউলিপ।

ক্রয়োডন কাউন্সিলের সেলহাস্ট ওয়ার্ডের কাউন্সিলার মোহাম্মদ ইসলাম বলেন, “এটি ব্রিটিশ বাংলাদেশি সম্প্রদায়ের জন্য সত্যিই একটি গর্বের মুহূর্ত, কারণ ইতিহাসে প্রথমবারের মতো যুক্তরাজ্য সরকারের মন্ত্রিসভায় দুইজন ব্রিটিশ বাংলাদেশি এমপি নিয়োগ পেয়েছেন। তাদের নিষ্ঠা এবং কঠোর পরিশ্রম আমাদের সকলের জন্য অনুপ্রেরণা! আসুন আমরা এই মাইলফলকটি উদযাপন করি এবং টিউলিপ সিদ্দিক ও রুশনারা আলীর প্রতি আমাদের সমর্থন প্রদর্শন করি। কারণ তারা শ্রেষ্ঠত্বের সাথে আমাদের সম্প্রদায়ের প্রতিনিধিত্ব করে।”

ব্রিটেনের বাংলাদেশি মালিকানাধীন প্রথম ও একমাত্র ইংরেজি দৈনিক দ্য ডেইলি ড্যাজলিং ডন-এর প্রতিষ্ঠাতা ও প্রকাশক মুনজের আহমদ চৌধুরী বলেন, “ব্রিটেনে বাংলাদেশি হাজার হাজার পরিবারের চতুর্থ প্রজন্ম চলছে। বাংলাদেশি, ভারতীয় ও পাকিস্তানি কমিউনিটির শুরু একই সময়ে। তিন কমিউনিটিই শতবর্ষী। ভারতীয় ও পাকিস্তানি কমিউনিটি বহু আগেই ব্রিটেনে মন্ত্রিত্ব পেয়েছে। রুশনারা আলী ও টিউলিপ সিদ্দিকের আজকের মন্ত্রিসভায় ঠাঁই পাওয়া দেরিতে হলেও নিঃসন্দেহে ব্রিটেনে বাংলাদেশিদের বড় অর্জন।”

টিউলিপ ও রুশনারাকে অভিনন্দন জানিয়েছেন কনজারভেটিভ পার্টির বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত নেতারাও। ড্যাগেনহাম অ্যান্ড রেইনহামের কনজারভেটিভ পার্টির সাবেক চেয়ারম্যান দেওয়ান মাহদী বলেন, “বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত দুজন এমপি টিউলিপ সিদ্দিক ও রুশানারা আলীকে ব্রিটিশ সরকারের মন্ত্রিসভায় দেখে আমি ব্যক্তিগতভাবে আনন্দিত, উচ্ছ্বসিত ও গর্ববোধ করছি।”

তিনি বলেন, “আমরা এর আগে দেখেছি, লন্ডনের মেয়র পাকিস্তানি বংশোদ্ভূত, প্রধানমন্ত্রী ছিলেন ভারতীয় বংশোদ্ভূত, যা এথনিক মাইনোরিটির মানুষের জন্য অনেক অনুপ্রেরণার উৎস হয়ে ছিল। বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত কোনও এমপি কখনও মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব পাননি, এ হিসেবে এটি আমাদের জন্য নতুন এক ইতিহাস। যদিও আমি কনজারভেটিভ পার্টির অ্যাক্টিভিস্ট, তারপরও আমি একইভাবে আনন্দিত বাংলাদেশিদের মন্ত্রণালয়ের দায়িত্ব দেওয়ায়। মনে হয় এই অনুপ্রেরণা বাকি সবার মধ্যে ছড়িয়ে পড়বে।

“সেই দিন আর বেশি দূরে নয়, যেদিন আমরা বাংলাদেশি বংশোদ্ভূত লন্ডনের মেয়র দেখব, প্রধানমন্ত্রী দেখব। ছোট আশা থেকে, ছোট স্বপ্ন থেকে আশা বাস্তবায়ন হয়, কখন দেরিতে হয়, কখন তাড়াতাড়ি হয়। আমরা সেই আশায় দিন গুনছি। ভবিষ্যতে বাংলাদেশি রাজনীতিবিদদের ব্রিটিশ রাজনীতির উচ্চ আসনে দেখতে চাই।”

রুশনারা আলী ও টিউলিপ সিদ্দিক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী কিয়ার স্টারমারের সরকারে স্থান পাওয়ায় তাদের প্রাণঢালা অভিনন্দন জানিয়ে লন্ডনের বাসিন্দা কবি মাশূক ইবনে আনিস বলেন, “বাঙালি জাতির কৃতি সন্তানদের এই গৌরবে আমরা গর্বিত। পৃথিবীর ইতিহাসে আমাদের গৌরবের ধন রুশনারা আলী, টিউলিপ সিদ্দিক, রুপা হক ও আপসানা বেগম।”