• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে জাবেদের মামলা : রহস্য আ.লীগে?

bijoy71news
প্রকাশিত মে ২০, ২০২৪
দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে জাবেদের মামলা : রহস্য আ.লীগে?

নুরুল হক শিপু

গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদ নির্বাচন সম্পন্ন হয় গত ৮ মে। নির্বাচন শেষ হলেও শেষ হয়নি নির্বাচনী কূটকৌশল। প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করতে সেই কূটকৌশল গড়িয়েছে জুডিশিয়্যাল মেজিস্ট্রেট ও দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনাল সিলেট পর্যন্ত। গোলাপগঞ্জ উপজেলা পরিষদের সাবেক চেয়ারম্যান, আওয়ামী লীগের বয়োজ্যেষ্ঠ প্রয়াত নেতা ইকবাল আহমদ চৌধুরীর ছোটভাই টানা দুইবারের নির্বাচিত উপজেলা চেয়ারম্যান মঞ্জুর কাদির শাফি এলিমের সমর্থকদের ঘায়েল করতেই দ্রুত বিচার ট্রাইব্যুনালে মামলা করেছেন সিলেট জেলা আওয়ামী লীগের সদস্য ও সদ্য সমাপ্ত উপজেলা পরিষদ নির্বাচনে পরাজিত চেয়ারম্যান প্রার্থী শহিদুর রহমান চৌধুরী জাবেদ।

নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বৃহত্তর গোলাপগঞ্জে এই মামলাটি এখন রহস্যজনক মামলা হিসেবেই জনমনে বিবেচিত হচ্ছে। অনেকেই বলছেন, এলিমের পক্ষে সদ্য সমাপ্ত উপজেলা নির্বাচনে কাজ করাই কাল হয়েছে গোলাপগঞ্জ পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ও ২০২১ সালে গোলাপগঞ্জ পৌর নির্বাচনে শেখ হাসিনা মনোনীত নৌকার পরাজিত প্রার্থী রুহেল আহমদের।

শুধু মামলার আসামী রুহেলই নয়, এজাহার নমীয় ৯ জনই উপজেলা নির্বাচনে এলিম চৌধুরীর পক্ষে কাজ করার খেসারত হিসেবে মামলাটি তাদের গলার কাটা হয়ে বিধেছে। দায়েরকৃত এজাহারেও রয়েছে নানা রহস্য।

এজাহার সূত্রে জানা গেছে, নির্বাচনের আগের রাত ৮ মে রাত সোয়া ১ টায় মামলার বাদি জাবেদ আহমদ সস্ত্রীক পৌরসভার ২ নং ওয়ার্ডের তার ফুফু শ্বাশুড়ির বাড়ি থেকে ফেরার সময় বাড়ির রাস্তায়ই নির্বাচনী বিরোধের জের ধরে মামলার আসামি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহেল আহমদ, আওয়ামী লীগ নেতা জাহাঙ্গীর আলম, গোলাপগঞ্জ সদর ইউনিয়ন আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক ইসমাঈল আলী, ১ নং ওয়ার্ড আওয়ামী লীগেরে যুগ্ম আহবায়ক সুমন আলী, পৌর যুবলীগ নেতা আবিদ আহমদ, রুহেল আহমদ লাকী, পৌর ছাত্রলীগের সাংগঠনিক সম্পাদক একে রুহিত ও সামাদ আহমদ দেশীয় অস্ত্র দিয়ে জাবেদ আহমদের গাড়ি আটকে সামনের গ্লাস ভেঙ্গে দেন। এসময় তার স্ত্রীর গলায় থাকা ১ ভরি স্বর্ণের চেইন ও জাবেদ আহমদের মানিব্যাগে থাকা নগদ ১৫ হাজার টাকা ছিনিয়ে নেয়া হয়।

বাদি এজাহারে আরও উল্লেখ করেন, ঘটনার ছবি ও ভিডিও চিত্র তার কাছে সংরক্ষিত রয়েছে।

আওয়ামী লীগের একাধিক নেতার কাছে বিষয়টি জানতে চাইলে তারা বলেন, কারো উপরে অতর্কিত হামলা হলে তাকেতো কেউ জানিয়ে হামলা করার কথা নয়! মামলার বাদি জাবেদ চৌধুরী বিষয়টি হয়তোবা আগে থেকেই জানতেন, অথবা এটি তার সাজানো নাটকের কোন অংশও হতে পারে! এজন্য তিনি আগে থেকেই ভিডিও ক্যামেরা এবং স্থিরচিত্র ধারণকারীকে প্রস্তুত রেখেছিলেন।

এদিকে প্রশাসনের মামলা তদন্ত সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা বলছেন, মামলার বাদি এজাহারে উল্লেখকৃত গ্লাস ভাঙ্গা গাড়িটি এখন পর্যন্ত থানায় জব্ধ তালিকায় নথিভূক্ত করেননি। এমনকি ঘটনার ভিডিও এবং স্থিরচিত্রও হস্তান্তর করেননি।

এব্যাপারে গোলাপগঞ্জ মডেল থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা মাসুদুল আমিন প্রতিবেদককে জানান, মামলাটির তদন্ত চলছে। প্রাথমিক তদন্তে পুরো রহস্য উদঘাটন হয়নি। প্রাথমিকভাবে তদন্তে পাওয়া তথ্য অনুযায়ী মনে হচ্ছে, কিছু নিরীহ মানুষকে নির্বাচনী জেরে আসামি করা হয়েছে। এক প্রশ্নের জবাবে ওসি বলেন, ঘটনাটি রহস্যজনক কি না, তা এই মুহূর্তে কিছু বলা যাচ্ছে না। তবে যে ঘটনাই ঘটুক মূল রহস্য উদঘাটন করা হবে। তবে ঘটনারদিন রাতে কিছু একটা ঘটেছে। তদন্ত শেষে সত্য বেরিয়ে আসবে।

তদন্ত সংশ্লিষ্ট আরেকটি সূত্র জানায়, মামলার প্রধান আসামি পৌর আওয়ামী লীগের সাধারণ সম্পাদক রুহেল আহমদ পৌরসভার ৩ নং ওয়ার্ডের একজন বিশিষ্ট ব্যবসায়ীর বাড়িতে অবস্থান করছিলেন। এ সময় ২নং ওয়ার্ডের কাউন্সিলর তার সাথে ছিলেন। তদন্ত সংশ্লিষ্ট সূত্রটি আরও বলছে, জাবেদ আহমদের উপর হামলার ঘটনাটি যদিও ২ নং ওয়ার্ডে ঘটে থাকে, তবে প্রধান আসামির ফোন ট্যাকিং লোকেশন বলছে তিনি তখন ৩ নং ওয়ার্ডে অবস্থান করছিলেন! অন্যান আসামিদের ট্রাকিং লিস্টও ৮/১০ মাইল দূরে দেখাচ্ছে!