• ৫ই নভেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২০শে কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ৩রা জমাদিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

নেপালের মনে প্রতিশোধের আগুন, উৎসব দেখার অপেক্ষায় বাঙালিরা

bijoy71news
প্রকাশিত অক্টোবর ৩০, ২০২৪
নেপালের মনে প্রতিশোধের আগুন, উৎসব দেখার অপেক্ষায় বাঙালিরা

নারী সাফ চ্যাম্পিয়নশিপের ফাইনাল আজ বুধবার (৩০ অক্টোবর)। কাঠমান্ডুর দশরথ রঙ্গশালা স্টেডিয়ামে বাংলাদেশ–নেপাল ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে। ম্যাচটি গড়াচ্ছে সন্ধ্যা ৬টা ৪৫ মিনিটে।

মঙ্গলবার (২৯ অক্টোবর) সংবাদ সম্মেলন শেষে দশরথের মাঠেই দুই কোচ ও অধিনায়ক ট্রফি নিয়ে অফিশিয়াল ফটোসেশন করেছেন। ট্রফিতে হাত রেখে হাস্যোজ্জ্বল দুই অধিনায়ক—বাংলাদেশের সাবিনা খাতুন ও নেপালের অঞ্জিলা তুম্বাপো সুব্বা। আজ ফাইনাল শেষে ট্রফি নিয়ে হাসবে যে কোনো একটি দল।

সেই পর্ব শেষে সংবাদ সম্মেলনে নেপালের অধিনায়ক ও গোলকিপার অঞ্জিলা তুম্বাপো সুব্বা আজকের ফাইনালকে নেপালের জন্য ‘প্রতিশোধের ম্যাচ’ বলতে চাননি। তবে এটুকু বলেছেন— ‘আমরা সাফের ৫টি ফাইনালে হেরেছি আগে। এটা আমাদের অনেক বড় দুঃখ। আশা করি সেই দুঃখ এবার ঘুচবে।

আজ পুরো নেপাল উদ্গ্রীব হয়ে আছে। তাদের মনে প্রতিশোধের আগুন জ্বলছে। কারণ দুই বছর আগে ২০২২ সালের ১৯ সেপ্টেম্বর ষষ্ঠ নারী সাফের ফাইনালে বাংলাদেশকে হারিয়ে শিরোপা জেতার স্বপ্ন দেখেছিল তাদের মনে। কিন্তু পারেনি। সেই ফাইনালে নেপালকে ৩-১ গোলে হারিয়ে ইতিহাস গড়েন বাংলাদেশের মেয়েরা।

প্রথমবার সাফ জিতে দেশে ফিরে বিমানবন্দর থেকে ছাদখোলা বাসে বাফুফে ভবনে যাত্রা মনিকা-মারিয়াদের, যা আজীবন মনে রাখার মতো একটি দৃশ্য। আরও একবার বাংলাদেশের মেয়েদের ছাদখোলা বাসে উৎসব দেখার অপেক্ষায় বাঙালিরা। দুই বছর আগে যে মুকুট অন্য উচ্চতায় তুলেছিল বাংলাদেশ নারী ফুটবল দলকে, আজ তা ধরে রাখার চ্যালেঞ্জ। সেই চ্যালেঞ্জ পেরোনোর পরীক্ষাই আজ সপ্তম নারী সাফের ফাইনালে দিতে হবে বাংলাদেশকে। ফুটবলপ্রেমীদের ধারণা, আজ দুই বছর আগে দশরথ রঙ্গশালার গ্যালারিভর্তি প্রায় ২০ হাজার দর্শককে থামিয়ে দেবেন সাবিনারা।

এদিকে আগামী শুক্র থেকে রোববার দীপাবলি, যা স্থানীয় ভাষায় তিহার উৎসব। সেই উৎসবের পালে আগাম হাওয়া লেগেছে রাজধানীর হৃৎপিণ্ডে থাকা বসন্তপুর দরবার স্কয়ারে। উৎসবটা এবার কয়েক গুণ বেড়ে যেতে পারে নেপাল আজ প্রথমবার সাফ নারী চ্যাম্পিয়নশিপ জিতলে। সেই ট্রফির ছোঁয়া পেতে উদ্গ্রীব কাঠমান্ডুর অলিগলি, হোটেল, রেস্তোরাঁসহ সর্বত্র।

স্বাগতিক নেপাল দুরন্ত ছন্দে। সেমিফাইনালে ১০ জন নিয়েও টুর্নামেন্টে পাঁচবারের চ্যাম্পিয়ন ভারতের বিপক্ষে গোল করে ম্যাচে ফিরে জিতেছেন টাইব্রেকারে। সমতাসূচক গোলদাতা এ মুহূর্তে নেপালের গোটা ক্রীড়াঙ্গনের সবচেয়ে বড় তারকা সাবিত্রা ভান্ডারি খেলেন ফরাসি ক্লাবে। তিনিই ফাইনালে বড় বড় হুমকি। হুমকি ছিলেন আরেকজন। আরব আমিরাতের ক্লাবে খেলা রেখা পৌডেল। টুর্নামেন্টে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ ৭ গোল করা রেখা সেমিতে লালকার্ড দেখায় ফাইনালে থাকছেন না। রেখার না থাকা বাংলাদেশ দলের জন্য কিছুটা তো স্বস্তিরই। আর অস্বস্তি-কাঁটা নিঃসন্দেহে স্বাগতিক হিসেবে পাওয়া নেপালের বাড়তি সুবিধা।

নেপাল কোচ রাজেন্দ্রা তামাং অবশ্য বাংলাদেশকে নিয়ে বেশ সতর্ক— ‘ইংলিশ কোচের অধীন বাংলাদেশ শক্তিশালী দল। তাদের খেলার স্টাইল ইংলিশদের মতোই। যদিও সমর্থকদের পাশে পাওয়ার সুবিধাটা আমরা পাব। কিন্তু টেকনিক্যালি ও ট্যাকটিক্যালি এগিয়ে থাকা বাংলাদেশকে নিয়ে আমাদের অবশ্যই সতর্ক থাকতে হবে।

রাজেন্দ্রা জানেন কাঠমান্ডু বাংলাদেশের জন্য সৌভাগ্যের শহর। এই শহরেই বাংলাদেশের ফুটবলে এসেছে অন্যতম দুটি বড় সাফল্য। দশরথ রঙ্গশালায় ২০২২ নারী সাফ জেতার আগে ১৯৯৯ সালে সাফ গেমস ফুটবলে বাংলাদেশের সোনা জেতার কথাও রাজেন্দ্রার অজানা নয়। বাংলাদেশকে নিয়ে তাই নেপালকে সতর্ক থাকতেই হচ্ছে।

এদিকে বাংলাদেশ দল অবশ্য জানে কীভাবে স্বাগতিকদের থামাতে হয়। দশরথ রঙ্গশালায় গতকাল দুপুরে ফাইনালপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে তাই খুব আত্মবিশ্বাসী লাগল বাংলাদেশ অধিনায়ক সাবিনা খাতুনকে। তিনি বলেন, আমাদের জন্য এটা অবশ্যই চ্যালেঞ্জও। তবে চ্যালেঞ্জটা নিচ্ছি আমরা। ভালো খেলেই ফাইনালটা জিততে চাই।

প্রতিযোগিতার নিয়মানুযায়ী, আজ নির্ধারিত ৯০ মিনিট ড্র থাকলে সরাসরি টাইব্রেকার। ভারতের বিপক্ষে নেপালের ফুটবলাররা টাইব্রেকারে দারুণ নৈপুণ্য দেখিয়েছেন। এ কারণেই কিনা, ডিফেন্ডার শিউলি আজিম কাল অনুশীলনের এক ফাঁকে বলছিলেন— আমরা চাই ৯০ মিনিটেই ফল। টাইব্রেকার চাই না।

কিন্তু টাইব্রেকার হলে প্রস্তুতি তো রাখতে হবে। সেই অনুশীলনও অনেকটা সময় নিয়ে করিয়েছেন কোচ পিটার বাটলার। তার কথা, ‘জয় দিয়েই শেষ করতে চাই। তবে নেপাল যেভাবে খেলছে, তাদের দলীয় ঐক্য বিশেষভাবে চোখ কাড়ে। প্রতিপক্ষকে আমরা সম্মান করি।’

উল্লেখ্য, ২০১০ সালের ২৯ জানুয়ারি এসএ গেমসে নেপালের সঙ্গে ম্যাচ দিয়েই আন্তর্জাতিক ফুটবলে অভিষেক হয়েছিল বাংলাদেশ নারী দলের। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে সেই ম্যাচে বাংলাদেশের হারে ১-০ গোলে। সেই থেকে টানা সাত ম্যাচ এবং প্রায় ১১ বছর নেপাল ছিল বাংলাদেশের কাছে অজেয়। অষ্টম ম্যাচে এসে নেপাল মাথা নোয়ায় বাংলাদেশের কাছে, সেটা ওই সর্বশেষ সাফের ফাইনালে। এখন পর্যন্ত নেপালের সঙ্গে ১২ ম্যাচে ওই একটাই জয় বাংলাদেশের। ৬ হারের সঙ্গে আছে ৫টি ড্র, যার তিনটিই সর্বশেষ তিন ম্যাচে।