বৃটিশ আমলে স্থাপিত সিলেটের ঐতিহ্যবাহী ক্বিনব্রিজটি এখন যান পারাপারের সামর্থ্য হারিয়েছে। অনেকটা ঝুঁকি নিয়ে কালের সাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে। সম্প্রতি ব্রিজটি সংস্কারের পর বর্তমানে শুধু পথচারীদের ব্যবহারের উপযোগী আছে।
সিলেটবাসীর দীর্ঘদিনের দাবি স্টিলের ব্রিজটি স্মৃতি হিসেবে রেখে পাশে আরেকটি দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণের। সাবেক স্পিকার হুমায়ূন রশীদ চৌধুরীও সুরমার উপর একটি ঝুলন্ত সেতুর স্বপ্ন দেখিয়েছিলেন সিলেটবাসীকে।
সিলেটবাসীর এমন দাবির পরিপ্রেক্ষিতে ক্বিনব্রিজের পাশে একটি দৃষ্টিনন্দন সেতু নির্মাণ করে দেয়ার প্রতিশ্রæতি দিয়েছিলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সিলেটে জাতীয় নির্বাচনী প্রচারণায় আলিয়া মাদরাসা মাঠে জনসভায় এমন প্রতিশ্রæতি দেন। সেই প্রতিশ্রæতির বাস্তবায়ন করতে চলেছে সরকার।
সম্প্রতি সড়ক ও জনপথ (সওজ) সিলেট অফিসের নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেনের সাথে এ নিয়ে কথা হয়। তিনি জানান, নিউ ডেভেলপমেন্ট ব্যাংক (এনডিবি) বাংলাদেশে ৫টি প্রকল্পে বিনিয়োগ করতে আগ্রহ দেখিয়েছে। প্রতিটি প্রকল্পে ঋণ প্রদানকারী ব্যাংকটি ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার বিনিয়োগ করবে।
তার মধ্যে একটি সুরমা নদীর ওপর ক্বিনব্রিজের পাশে দৃষ্টিনন্দন সেতু প্রকল্প। প্রকল্পগুলো নিয়ে গত ২২ জানুয়ারি সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কনফারেন্স রুমে এনডিবি কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
ওই বৈঠকে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব এবিএম আমিন উল্লাহ নূরী সভাপতিত্ব করেন। সিলেটে নতুন সেতু নির্মাণে এনডিবি ৩০০ মিলিয়ন মার্কিন ডলার দেবে আর বাকি অর্থের যোগান দেবে বাংলাদেশ সরকার। ইতোমধ্যে বাংলাদেশ অভ্যন্তরীণ নৌপরিবহন কর্তৃপক্ষের একটি প্রতিনিধি দল সিলেট পরিদর্শন করে গেছেন।
কয় লেন বিশিষ্ট সেতু হবে, ক্বিনব্রিজের কোন পাশে হবে এবং কোন অর্থবছর সেতুর কাজ শুরু হবে; এমন প্রশ্নে নির্বাহী প্রকৌশলী আমির হোসেন দৈনিক সিলেট বাণী’কে জানান, পর্যবেক্ষণ দল সুরমা নদীর নাব্যতা, সেতুটি কতটুকু উঁচু হবে তা সরেজমিন দেখে গেছেন।
এখন সওজের পক্ষ থেকে ‘প্রি ডিটেইলস প্রজেক্ট প্রোফর্মা-পিডিপিপি’ মন্ত্রণালয়ে পাঠানো হবে। সেখান থেকে পাঠানো হবে এনডিবিতে। পাবলিক প্রাইভেট পার্টনারশিপ প্রকল্পের আওতায় সেতুটি নির্মাণ হবে। যা ব্যবহারকারী যানবাহনকে সেতু পারাপারে টোল দিতে হবে।
তবে ক্বিনব্রিজের কোন পাশে নতুন সেতু নির্মাণ করা হবে এবং কবে কাজ শুরু হবে তা এই মুহূর্তে নির্দিষ্ট করে বলা যাচ্ছে না বলে তিনি জানান।
উল্লেখ্য, ব্রিটিশ আমলে স্টিলের কাঠামো দিয়ে ক্বিনব্রিজটি নির্মাণ করেছিল রেলওয়ের সেতু বিভাগ। টানা দুই বছর নির্মাণকাজ শেষে ১৯৩৬ সালে সেতুটি চলাচলের জন্য খুলে দেওয়া হয়েছিল। তৎকালীন আসাম প্রদেশের গভর্নর মাইকেল কিনের নামে সেতুর নামকরণ হয় ক্বিনব্রিজ।
প্রায় ৯ দশক ধরে সচল সেতুটি বাংলাদেশের অন্যতম প্রাচীন এবং সিলেট অঞ্চলে সুরমা নদীর ওপর প্রথম সেতু। যার দৈর্ঘ্য ১ হাজার ১৫০ ফুট এবং প্রস্থ ১৮ ফুট। মুক্তিযুদ্ধের সময় উত্তর সুরমা প্রান্ত ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ায় সেতুটি ১৯৭৭ সালে রেলওয়ে কর্তৃপক্ষ প্রথম দফা সংস্কার করেছিল।
এরপর আরও কয়েকবার সংস্কার করা হয়। সম্প্রতি ২ কোটি ১৫ লাখ টাকা ব্যয়ে মেরামত করে বাংলাদেশ রেলওয়ে সেতু বিভাগ। বর্তমানে ক্বিনব্রিজটি পদচারীদের পারাপারের জন্য ব্যবহার হচ্ছে