• ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

মিয়ানমারে রয়টার্সের ২ সাংবাদিকের কারাদণ্ড

bijoy71news
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ৩, ২০১৮

মিয়ানমারে রোহিঙ্গা নিপীড়নের তথ্য সংগ্রহের সময় গ্রেফতার বার্তাসংস্থা রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে ৭ বছরের কারাদণ্ড দিয়েছেন দেশটির একটি আদালত।
সোমবার ইয়াঙ্গুনের জেলা জজ আদালত রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইন লঙ্ঘনের অভিযোগে তাদের এই সাজার রায় দেন।
রায়ের সময় সাংবাদিক ওয়া লোন (৩২) এবং কিয়াও সো ও (২৮) আদালতে উপস্থিত ছিলেন।
ইয়াঙ্গুনের উত্তরাঞ্চলের জেলা জজ ইয়ে লিন বলেন, ‘ওয়া লোন এবং কিয়াও সো ও ঔপনিবেশিক আইন লঙ্ঘন করে রাষ্ট্রের গুরুত্বপূর্ণ গোপনীয় নথি সংগ্রহ করছিলেন।’
তিনি আরো বলেন, ‘অভিযুক্তদের রাষ্ট্রীয় গোপনীয়তা আইনের সেকশন ৩.১.সি ধারায় সাত বছরের কারাদণ্ড দেয়া হয়েছে। ২০১৭ সালের ১২ ডিসেম্বর তাদের গ্রেফতারের দিন থেকে এই সাজা গণনা করা হবে।’
রায়ের পর আদালতেই সাংবাদিক ওয়া লোন বলেন, ‘আমি এই রায়ে ভীত নই। আমি ভুল কিছু করিনি। আমি ন্যায়বিচার, গণতন্ত্র এবং স্বাধীনতায় বিশ্বাস করি।’
এই দুই সাংবাদিকেরই কন্যাসন্তান রয়েছে। এই রায়ের ফলে তাদের সন্তান ও পরিবারের অন্য সদস্যদের কারাগার ছাড়া মুক্ত পরিবেশে দেখার সুযোগ নেই, যেটি বিগত ৯ মাস ধরেই হয়ে আসছে। কিয়াও সো ও’র মেয়ের বয়স তিন বছর। আর ওয়া লোনের স্ত্রী প্যান ই মন গতমাসে তাদের প্রথম সন্তান প্রসব করেন।
রয়টার্সের এই দুই সাংবাদিক আদালতে বলেছিলেন, গতবছরের ১২ ডিসেম্বর উত্তর ইয়াঙ্গুনের একটি রেস্টুরেন্টে দাওয়াত দিয়ে দুই পুলিশ কর্মকর্তা তাদের হাতে মোড়ানো কিছু কাগজ ধরিয়ে দিয়ে আটক করেন।
ওই দুই সাংবাদিককে ফাঁদে ফেলে ধরার জন্য যে ওই ঘটনা যে সাজানো হয়েছিল, তা পরে মামলার বিচারের সময় প্রত্যক্ষদর্শী এক পুলিশ সদস্যের সাক্ষ্যেও উঠে এসেছিল। কিন্তু, চূড়ান্ত রায়ে সেসব আমলে না নিয়ে দুই সাংবাদিককে সাজা দেয়া হলো।

গ্রেফতারের পরই প্রেস ফ্রিডম অ্যাডভোকেটস, জাতিসংঘ, ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং বাংলঅদেশ, যুক্তরাষ্ট্র, কানাডা, অস্ট্রেলিয়াসহ বিভিন্ন দেশ এই দুই সাংবাদিকের মুক্তি দাবি করেছিল।
আর আজ রায়ের পর তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় রয়টার্সের প্রধান সম্পাদক স্টিফেন জে অ্যাডলার বলেন, ‘মিয়ানমারের জন্য, রয়টার্সের সাংবাদিক ওয়া লোন ও কিয়াও সো ওর জন্য এবং বিশ্বের সব সংবাদমাধ্যমের জন্য আজ একটি দুঃখের দিন।’
জরুরি ভিত্তিতে এই রায় সংশোধনের জন্য মিয়ানমার সরকারের প্রতিও তিনি আহ্বান জানান।
২০১৬ সালে রয়টার্সে যোগ দেয়া সাংবাদিক ওয়া লোন রাখাইন রাজ্যে রোহিঙ্গা সংকটসহ বিভিন্ন ঘটনার সংবাদ প্রকাশ করেছেন। আর কিয়াও সো ও গতবছর সেপ্টেম্বর থেকে রয়টার্সের প্রতিবেদক হিসেবে কাজ করে আসছিলেন।
এই দুই সাংবাদিককে গ্রেফতারের পর সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়, রাখাইনের নিরাপত্তা পরিস্থিতি নিয়ে গোপন নথিপত্র ছিল তাদের কাছে।
পরে রয়টার্সের এক প্রতিবেদনে বলা হয়, গ্রেফতার হওয়ার আগে ওয়া লোন এবং কিয়াও সো ও রাখাইনের সেনা অভিযানের সময় এক গ্রামে ১০ রোহিঙ্গাকে হত্যা করে লাশ পুঁতে ফেলার একটি ঘটনা নিয়ে অনুসন্ধান করছিলেন।
বিচার চলাকালে আসামিপক্ষের আইনজীবী গত ২ জুলাই এ মামলা বাতিলের আবেদন জানিয়ে বলেছিলেন, রাষ্ট্রপক্ষ অভিযোগের পক্ষে যথেষ্ট প্রমাণ দেখাতে পারেনি। সংবাদ সংগ্রহে বাধা দিতেই ঘটনা সাজিয়ে দুই সাংবাদিককে পুলিশ গ্রেফতার করেছে।
অন্যদিকে রাষ্ট্রপক্ষে সেদিন আদালতে বলা হয়, রয়টার্সের দুই সাংবাদিককে যখন গ্রেফতার করা হয় তাদের কাছে সেনাবাহিনীর গতিবিধির বিস্তারিত তথ্য সম্বলিত নথি পাওয়া যায়। আর মোবাইলে পাওয়া যায় বিভিন্ন মাত্রার গোপনীয় তথ্য।
এই রায়ের পর স্বাভাবিকভাবেই ২০১৭ সালের আগস্টে রাখাইনে মুসলিম সংখ্যালঘু রোহিঙ্গাদের ওপর চালানোর ঘটনায় দেশটির নোবেল বিজয়ী নেত্রী অং সান সু চির ওপর চলে আসা চাপ আরো বাড়বে।
কারণ, পশ্চিমা কূটনীতিবিদের কেউ কেউ এবং কোনো কোনো অধিকার সংগঠন দুই সাংবাদিকের এই বিচারকে গণতন্ত্রে প্রত্যাবর্তনের প্রক্রিয়ায় থাকা মিয়ানমারের জন্য একটি পরীক্ষা হিসেবে মন্তব্য করেছিলেন।
জাতিসংঘের তথ্যে, মিয়ানমার সেনাদের নির্যাতনের মুখে ৭ লাখের বেশি রোহিঙ্গা পালিয়ে বাংলাদেশে আশ্রয় নেন।