• ২৭শে জুলাই, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ১২ই শ্রাবণ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ২১শে মহর্‌রম, ১৪৪৬ হিজরি

রাজধানীতে হঠাৎ বাড়ছে অগ্নিকান্ড!

bijoy71news
প্রকাশিত মার্চ ২৫, ২০২৪
রাজধানীতে হঠাৎ বাড়ছে অগ্নিকান্ড!

রাজধানী ঢাকায় হঠাৎ করেই বেড়েছে আগুনের ঘটনা। গত কয়েকদিনে বেশ কয়েকটি বড় আগুনের ঘটনা ঘটেছে শুধু রাজধানীতে।

রোববার (২৪ মার্চ) সকাল থেকে শুধু ঢাকা বিভাগেই ভয়াবহ ৩টি আগুনের ঘটনা ঘটেছে। এর মধ্যে ভোরে প্রথম আগুন লাগে নারায়ণগঞ্জ জেলার গাউছিয়া কাঁচাবাজার মার্কেটে। এর পরই দুপুর ১টার দিকে আগুন লাগে মুন্সীগঞ্জের গজারিয়া উপজেলায় টি কে গ্রুপের মালিকানাধীন সুপার বোর্ড কারখানায় এবং সর্বশেষ রাজধানীর বনানীর গোডাউন বস্তিতে।

ফায়ার সার্ভিস সূত্রে জানা যায়, নারায়ণগঞ্জের রূপগঞ্জের গাউছিয়া কাঁচাবাজারে আগুন লাগে ভোর সাড়ে চারটার দিকে। পরে ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট কাজ করে ভোর ৫টা ৪৫ মিনিটে আগুন নিয়ন্ত্রণে আনে। এই ঘটনায় গাউছিয়া কাঁচাবাজারের আগুনে পুড়ে গেছে দুই শতাধিক দোকান।

দুপুর ১টা ১০ মিনিটে ফায়ার সার্ভিস আগুনের খবর পায় মুন্সীগঞ্জের গজারিয়ার একটি সুপারবোর্ড কারখানায়। সংবাদ লেখা পর্যন্ত ওই আগুন এখনো নিয়ন্ত্রণে আসেনি। সর্বশেষ খবর অনুযায়ী ফায়ার সার্ভিসের ১২টি ইউনিট আগুন নিয়ন্ত্রণে কাজ করছে।

অন্যদিকে বিকেলে ৪টার দিকে আগুন লাগে রাজধানীর বনানীতে গোডাউন বস্তিতে। ফায়ার সার্ভিসের আটটি ইউনিট ঘটনাস্থলে কাজ করে। পরর্বর্তীতে আরও ৪টি ইউনিটসহ সেনাবাহিনীর চেষ্টায় সন্ধ্যা পৌনে ৬টার দিকে আগুন নিয়ন্ত্রণে আসে। প্রাথমিকভাবে আগুনে হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি। তবে বেশ কয়েকটি ঘর পুরেগেছে বলে জানা যায়।

এদিকে সম্প্রতি বেইলি রোডে রেস্তোরাঁয় ভয়াবহ আগুনে ৪৬ জনের মৃত্যুর পর পাঁচ শতাধিক ভবন ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করেছে ফায়ার সার্ভিস অ্যান্ড সিভিল ডিফেন্স। এর মধ্যে রাজধানীর ৮৪টি রেস্তোরাঁ ও শপিংমল অতি অগ্নিঝুঁকিতে রয়েছে বলে জানিয়েছে ফায়ার সার্ভিস।

জানা গেছে, ৮৪টি ভবন ও প্রতিষ্ঠানকে অগ্নিনিরাপত্তায় অতিঝুঁকিপূর্ণ, ৪০৮টি ভবন ও প্রতিষ্ঠানকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়েছে। অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ২টি ও ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ৮টি ভবন-প্রতিষ্ঠানে সতর্কতা বার্তা টানিয়ে দেওয়া হয়েছে। এর মধ্যে সর্বাধিক ২৭টি রয়েছে খিলগাঁও এলাকায়। এসব ভবনে যেকোনো সময়ে বড় ধরনের দুর্ঘটনা ঘটতে পারে।

খিলগাঁওয়ের ২৭টি ছাড়াও মতিঝিল, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর, বেইলিরোড, ওয়ারী, সদরঘাট, লালবাগ এলাকায় ২২টি, ধানমন্ডি মোহাম্মাদপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার, তেজগাঁও ও মিরপুর এলাকায় ১৫টি ভবন ও প্রতিষ্ঠানকে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা রয়েছে। অন্যদিকে গুলশান, বনানী ও উত্তরাতে ২০টি ভবন ও প্রতিষ্ঠান অতিঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত হয়েছে।

গত ৫ মার্চ থেকে ১২ মার্চ পর্যন্ত ৫১৬টি শপিংমল, রেস্টুরেন্ট, ভবন ও প্রতিষ্ঠানে অগ্নিনিরাপত্তা পরিদর্শন করে অতিঝুঁকিপূর্ণ, ঝুঁকিপূর্ণ ও কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে তিন ক্যাটাগরিতে ভাগ করে তালিকা প্রস্তুত করা হয়েছে।

এর মধ্যে জোন-১ এর মতিঝিল, মালিবাগ, মৌচাক, শান্তিনগর ও বেইলিরোড এলাকায় ৬৩টি ভবন পরির্দশন করে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ১০টি, ঝুঁকিপূর্ণ ৩টি ও কম ঝুঁকিপূর্ণ চিহ্নিত করা হয়। এ ছাড়া ওয়ারী, লালবাগ ও সদরঘাট এলাকায় ৭৭টি প্রতিষ্ঠান ও ভবন পরির্দশন করে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ১২টি, ঝুঁকিপূর্ণ ৬২টি এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ৩টি ভবন চিহ্নিত করা হয়।

জোন-২ এর আওতায় ধানমন্ডি, মোহাম্মদপুর, ফার্মগেট, কারওয়ান বাজার ও তেজগাঁও এলাকায় মোট ৯৯টি ভবন পরিদর্শন করে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ২টি, ঝুঁকিপূর্ণ ৯৬টি ও কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে একটি ভবন চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া শুধু মিরপুর জোনে ৭৪ প্রতিষ্ঠান ও ভবন পরিদর্শন করে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ১৩টি, ঝুঁকিপূর্ণ ৫৫টি এবং কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ৬টি চিহ্নিত করা হয়।

জোন-৩ এর আওতায় গুলশান ও বনানী এলাকায় ৫৩টি ভবন ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ৯টি, ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ৪১টি এবং ৩টি কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এছাড়া উত্তরা এলাকায় ৭৬টি ভবন ও প্রতিষ্ঠান পরিদর্শন করে অতিঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ১১টি, ঝুঁকিপূর্ণ ৫৫টি ও কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে ১০টিকে চিহ্নিত করা হয়।

জোন-৫ এর আওতায় খিলগাঁওয়ে ৭৪টি ভবন ও প্রতিষ্ঠান পরির্দশন করে ২৭টিকে অতি ঝুঁকিপূর্ণ ও ৪৭টিকে ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত করা হয়। এখানে কম ঝুঁকিপূর্ণ হিসেবে কোনো ভবন বা প্রতিষ্ঠান চিহ্নিত করা হয়নি।

এছাড়া জোন-১ এর এলাকাসমূহে পরিদর্শন শেষে ৫টি ভবন ও প্রতিষ্ঠান, জোন-২ এ দুটি, জোন-৩ এ দুটি এবং জোন-৫ এ একটি ঝুঁকিপূর্ণ ঘোষণা করে ব্যানার টানানো হয়েছে।

এ বিষয়ে ফায়ার সার্ভিসের মিডিয়া উইং কর্মকর্তা শাহজাহান শিকদার গণমাধ্যমকে বলেন, রাজধানীজুড়ে অভিযান ও পরিদর্শন সবই চলমান রয়েছে। সরাসরি কোনো প্রতিষ্ঠান বা ভবন মালিককে শাস্তি দিতে পারি না। আমরা তালিকা প্রস্তুত ও স্পেশাল মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করে অর্থদণ্ড ও আদালতের মাধ্যমে মামলা করতে পারি।