বৃহস্পতিবার রাত পৌনে বারোটা থেকে একটার মধ্যে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে আসতে থাকে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স। সেগুলোতে থাকা মানুষের দেহের বেশিরভাগই নিথর।
দেহগুলোকে প্রথমে নিয়ে যাওয়া হচ্ছিল ঢাকা মেডিকেলের ৭ নম্বর অবজারভেশন ওয়ার্ডে। সেখান থেকে পাঠানো হতে থাকে মর্গে। হাসপাতাল জুড়ে স্বজনদের কান্না, ভিড় সামলাতে বাঁশির শব্দ আর মাঝে মাঝে আসতে থাকা অ্যাম্বুলেন্সের সাইরেনের শব্দ।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে বোনকে খুঁজছিলেন এক নারী। তার তিন সন্তান ও স্বামীকে নিয়ে এক অনুষ্ঠানে গিয়েছিলেন বেইলি রোডের কাচ্চি ভাই রেস্টুরেন্টে।
ঢামেকে পূর্বে থেকে চিকিৎসা নেয়া রোগীর এক অভিভাবক জানান, হঠাৎ চারদিকে একসাথে এম্ব্যুলেন্সের ডাক, বাশির আওয়াজ শুনে নীচে নেমে দেখি লাশ আর লাশ। আর পাশেই স্বজনদের আহাজারি। এমন দৃশ্য কখনও দেখিনি।
বৃহস্পতিবার (২৯ ফেব্রুয়ারি) রাতের অগ্নিকাণ্ডের পর তাদের কারো খোঁজ নেই, ফোনও বন্ধ।
গণমাধ্যমে সেই ভবনে আগুনের কথা জানান পর মনের কোণে আশঙ্কা নিয়ে ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল ও শেখ হাসিনা জাতীয় বার্ন ইনস্টিটিউটে উদ্ভ্রান্তের মতো ছুটোছুটি করছিলেন সেই নারী।
সেখানে আরও বহু মানুষ একইভাবে তাদের স্বজনদের খোঁজে ঘুরছিলেন। তারা হাসপাতালের ফটকে এসে জিজ্ঞেস করছেন নিরাপত্তার দায়িত্বে নিয়োজিতদের। তারা যখনই মর্গ দেখিয়ে দিচ্ছেন, কান্নায় ভেঙে পড়ছেন একেক জন।
বৃহস্পতিবার শেষ কর্মদিবসের রাতটিতে হঠাৎ করেই বীভৎস হয়ে উঠে। রাত ১০টার দিকে বেইলি রোডের গ্রিন কোজি কটেজে আগুন লাগে।
ঘণ্টা দুয়েক ধরে ফায়ার সার্ভিসের অগ্নি নির্বাপণ ও উদ্ধার অভিযান চলার সময় ঘুণাক্ষরেও মানুষ বুঝতে পারেনি কত বড় দুঃসংবাদ অপেক্ষা করেছিল তাদের জন্য।
নীচ তলায় আগুনের কারণে সরাসরি ভবনটিতে ঢোকার সুযোগ ছিল না। যারা ভবনটির ছাদে অবস্থান নিয়েছিল, তাদেরকে মইয়ে করে নামিয়ে আনা হয়। আগুন নেভানোর আগে আগে জানানো হয় ৭৫ জনকে সেখান থেকে উদ্ধার করা হয়।
রাত একটার আগেই সাইরেন বাজিয়ে একের পর এক অ্যাম্বুলেন্স আসছিল ঢাকা মেডিকেল ও শেখ হাসিনা বার্ন ইনস্টিটিউটে।