ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার বলেছেন, ভারতের ব্যাঙ্গালোরের আদলে সিলেটও হয়ে উঠবে ডিজিটাল শহরের উদাহরণ। বর্তমান সরকার দেশে ১২টি হাই-টেক স্থাপনের যে উদ্যোগ নিয়েছে তা পুরোপুরি বাস্তবায়িত হলে শুধু প্রযুক্তিখাতে ২০ লক্ষ লোকের কর্মসংস্থান হবে। তাছাড়া স্থানীয় জনগণের জীবন মানে আসবে ব্যাপক পরিবর্তন।
রোববার (২ সেপ্টেম্বর) বাংলাদেশ হাইটেক পার্ক কর্তৃপক্ষ ও সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির যৌথ উদ্যোগে আয়োজিত ‘সিলেট হাইটেক পার্কে বিনিয়োগে উদ্যোক্তাদের উদ্বুদ্ধকরণ’ শীর্ষক সেমিনারে তিনি এসব কথা বলেন।
সিলেট চেম্বারের কনফারেন্স হলে আয়োজিত এ সেমিনারে প্রধান অতিথি হিসেবে যোগ দেন সরকারের ডাক, টেলিযোগাযোগ ও তথ্যপ্রযুক্তি মন্ত্রী মোস্তাফা জব্বার।
তিনি আরও বলেন, সিলেটের নৈসর্গিক সৌন্দর্যকে ঠিক রেখে প্রাকৃতিক পরিবেশে স্থাপন করা হচ্ছে সিলেট হাইটেক পার্ক (ইলেকট্রনিক্স সিটি)। এটি হবে বাংলাদেশের সবচেয়ে দৃষ্টিনন্দন হাই-টেক পার্ক। সিলেটের এই হাই-টেক পার্ককে ঘিরে যে বিশাল কর্মযজ্ঞ তা এখন আর পরিকল্পনায় সীমাবদ্ধ নেই। এটা এখন অনেকটাই বাস্তব। এর অবকাঠামো এখন অনেকটাই দৃশ্যমান। আর তা হয়েছে প্রকৃতির কোনো প্রকার ক্ষতিসাধন না করেই।
মন্ত্রী বলেন, সিলেটের বিনিয়োগকারীরা এগিয়ে এলে এই হাই-টেক পার্ক থেকে আমাদের হার্ডওয়্যার ও সফটওয়্যার শিল্প আরো অনেক বেশি সমৃদ্ধ হবে। ২০০৮ সালে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আমাদের যে ডিজিটাল বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখিয়েছেন এটা এখন বাস্তবে রুপ নিচ্ছে। এখান থেকে আমাদের ডিজিটাল রুপান্তরের পথে আরো এক ধাপ এগিয়ে যাওয়া সম্ভব হবে।
তিনি বলেন, শেখ হাসিনার স্বপ্নের ডিজিটাল বাংলাদেশ এখন আর স্বপ্ন নয়। এখন এটা বাস্তব। তথ্য প্রযুক্তি খাতে বাংলাদেশ এখন যেকোনো দেশের জন্য অনুকরণীয়। একসময় যা চিন্তাও করা যেত না, প্রধানমন্ত্রীর যুগোপযোগী সিদ্ধান্ত আর নিরলস পরিশ্রমে আজ আমরা তা অর্জন করতে পেরেছি।
সিলেটকে স্মার্ট সিটি হিসেবে গড়ে তুলতে তিনি সংশ্লিষ্ট সকলকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানান।
মোস্তাফা জব্বার বলেন, ইতিমধ্যে এই হাই-টেক পার্ককে ঘিরে সিলেটে অবকাঠামোগত যে উন্নয়ন হচ্ছে তা দেখে সহজেই অনুমান করা যায় প্রধানমন্ত্রীর পরিকল্পনা যুগোপযোগী এবং আধুনিক প্রযুক্তিনির্ভর।
তিনি স্থানীয় উদ্যোক্তাদের আশ্বস্ত করে বলেন, হাই-টেক পার্কে বিনিয়োগে সকল ধরণের সহায়তা করতে সরকার প্রস্তুত। এই খাতে বিনিয়োগ করে কাউকে ভুগতে হবে না। তিনি বাংলাদেশকে সত্যিকার অর্থে ডিজিটাল বাংলাদেশে রুপান্তরে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বাধীন সরকারকে আবারও নির্বাচিত করার আহ্বান জানান।
সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ও তথ্যপ্রযুক্তি বিষয়ক সংসদীয় কমিটির সভাপতি ইমরান আহমদের সভাপতিত্বে বিশেষ অতিথি হিসেবে বক্তব্য রাখেন প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের মুখ্য সচিব নজিবুর রহমান, মহাপরিচালক-১ মো. সালাহ উদ্দিন, বাংলাদেশ হাই-টেক পার্ক এর ব্যবস্থাপনা পরিচালক হোসনে আরা বেগম, সিলেট হাই-টেক পার্কের পরামর্শক স্থপতি ও প্রকৌশলী ইকবাল হাবিব, প্রকল্প পরিচালক ব্যারিস্টার গোলাম সরওয়ার ভূঁইয়া, সিলেটের ভারপ্রাপ্ত বিভাগীয় কমিশনার মৃণাল কান্তি দে, সিলেট রেঞ্জের ডিআইজি কামরুল আহসান বিপিএম, সিলেট সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী প্রমুখ।
সেমিনারে শুভেচ্ছা বক্তব্য রাখেন সিলেট চেম্বার অব কমার্স এন্ড ইন্ডাস্ট্রির সভাপতি শিপার আহমদ।
চেম্বার সভাপতি সিলেটের উন্নয়নে বর্তমান সরকারের ভূয়সী প্রশংসা করে বলেন, সিলেটে স্থাপিত এই হাই-টেক পার্ক নিঃসন্দেহে সিলেটের উদ্যোক্তাদের আকৃষ্ট করবে। তবে ব্যবসায়ীদের বিনিয়োগে আশ্বস্ত করতে সিলেট চেম্বারের সাথে সমন্বয় করে একটি হেল্প ডেস্ক চালু করার দাবি জানান তিনি।
অনুষ্ঠানের সভাপতি ও সিলেট-৪ আসনের সংসদ সদস্য ইমরান আহমেদ বলেন, বর্তমান সরকার বাংলাদেশে বিনিয়োগের পরিবেশ ফিরিয়ে এনেছে। ২০০১ থেকে ২০০৮ পর্যন্ত বাংলাদেশে বিনিয়োগ করতে বিদেশিরা এবং বিভিন্ন দেশে অবস্থানরত প্রবাসীরা ভয় পেতেন। কিন্তু বর্তমান আওয়ামী লীগ সরকার দায়িত্ব নেবার পর থেকে সে অবস্থা কেটে গেছে। এখন বিদেশী বিনিয়োগের পাশপাশি প্রবাসীরাও আকৃষ্ট হচ্ছেন। আর সিলেট যেহেতু প্রবাসী অধ্যুষিত এলাকা তাই সিলেটে বিনিয়োগের ক্ষেত্রে আমরা তাদেরকেই অগ্রাধিকার দেবো। এছাড়া যাবতীয় সুযোগ সুবিধা পাবেন। এর মধ্যে গ্যাস, নিরবিচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ, সহজ যোগাযোগ ব্যবস্থাসহ যা যা প্রয়োজন সবকিছুই করা হবে। তবে এজন্য তিনি ব্যবসায়ীদেরকেও সহযোগিতার হাত বাড়িয়ে দিতে আহ্বান জানান।