• ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

দলে বাড়তি নজর ‘উদ্বিগ্ন’শেখ হাসিনা

bijoy71news
প্রকাশিত এপ্রিল ১৭, ২০১৯

আলী আসিফ শাওন :
সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ঘটনায় দলের মাঠপর্যায়ের নেতাদের সম্পৃক্ততার অভিযোগ ওঠায় ক্ষুব্ধ আওয়ামী লীগ সভাপতি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সব শেষ ফেনীর সোনাগাজীর ঘটনায় উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন তিনি। এ পরিস্থিতিতে শৃঙ্খলা ধরে রাখতে তিনি দলে নজরদারি বাড়াচ্ছেন।
পাশাপাশি দলের দায়িত্বশীল নেতাদেরও এ দিকে মনোযোগ বাড়াতে বলেছেন। অপরাধমূলক কার্যকলাপে জড়ালে বা জনগণের দুর্ভোগের কারণ হলে দলের কোন পর্যায়ের কাউকে ছাড় না দিয়ে সাংগঠনিক ও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার কঠোর নির্দেশও দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী।
একই সঙ্গে দল ও সহযোগী সংগঠনগুলোকে আরও শক্তিশালী ও সংগঠিত করার তাগিদ দিয়েছেন শেখ হাসিনা। বারবার নিষেধ করা সত্তে¡ও অন্য রাজনৈতিক দলের নেতাকর্মীদের আওয়ামী লীগে ভেড়াচ্ছেন তৃণমূলের নেতারা। ফলে তাদের দায়ও এসে পড়ছে দলের ওপর। এ অনুপ্রবেশ ঠেকাতে সতর্কবার্তাও দিয়েছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের একাধিক কেন্দ্রীয় নেতার সঙ্গে আলাপকালে জানা গেছে, গত সোমবার রাতে গণভবনে দলের কয়েক জন শীর্ষনেতার সঙ্গে আলাপকালে এসব নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। অনির্ধারিত ওই আলোচনায় আওয়ামী লীগের তিন জন যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক, দুজন সাংগঠনিক সম্পাদক, একজন উপসম্পাদক এবং দুজন কার্যনির্বাহী সংসদের সদস্য উপস্থিত ছিলেন।
গণভবন সূত্রে জানা গেছে, ফেনীর সোনাগাজীর মাদ্রাসাছাত্রী নুসরাত জাহান রাফি হত্যাকান্ড, ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পহেলা বৈশাখের কনসার্ট ভন্ডুল এবং সাম্প্রতিক বেশ কয়েকটি ধর্ষণ ও হত্যাকাণ্ডের বিষয়ে উদ্বেগ জানান আওয়ামী লীগ সভাপতি শেখ হাসিনা। এসব ঘটনায় আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাদের নামে অভিযোগ এসেছে তার কাছে। তিনি জানতে পেরেছেন, প্রায় প্রতিটি ঘটনায় অভিযুক্তদের আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়েছেন আওয়ামী লীগের স্থানীয় নেতাকর্মীরা। দলের আদর্শের কথা ভুলে তৃণমূলের নেতাকর্মীরা নিজেদের স্বার্থে এসব কাজ করে চলেছেন।
এ বিষয়ে উদ্বেগ জানিয়ে দলের নেতাদের সঙ্গে আলাপকালে আওয়ামী লীগের অতীত স্মৃতিচারণ করেন ১৯৮১ সাল থেকে দলটির নেতৃত্ব দিয়ে আসা বঙ্গবন্ধুকন্যা শেখ হাসিনা। তিনি বলেন, আওয়ামী লীগে কতবার ভাঙন ধরেছে। আমি যখন দলের দায়িত্ব নিই, তখন আওয়ামী লীগ একাধিক ব্র্যাকেটে বন্দি। দায়িত্ব নেওয়ার পর দলকে একত্রিত করলাম। সারাদেশে সংগঠিত করলাম। আমাদের মনে রাখতে হবে, আজকে আওয়ামী লীগ আছে বলেই আমরা রাষ্ট্রক্ষমতায়। আওয়ামী লীগ বেঁচে থাকলে আমরা সবাই বেঁচে থাকব। দলটি না থাকলে আমরা কেউই থাকব না। এ জন্য আওয়ামী লীগের নীতি-আদর্শ কেন্দ্র থেকে তৃণমূল সবখানে অক্ষুন্ণ রেখে চলতে হবে আমাদের।
তিনি আরও বলেন, এটাই হয়তো আমার শেষ মেয়াদ। বয়স হয়ে গেছে, এর পর আমি অবসর নেব। কিন্তু এভাবে দল চলতে থাকলে সামনের দিনে আওয়ামী লীগের জন্য ক্ষমতায় আসা কঠিন হয়ে পড়বে।
সূত্রগুলো আরও জানিয়েছে, প্রধানমন্ত্রী এ সময় সারাদেশে সংগঠনের প্রতি নজর দিতে বলেন দলের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ও সাংগঠনিক সম্পাদকদের। দলের নেতাকর্মীদের নামে অভিযোগ উঠলে তাদের ক্ষেত্রে সাংগঠনিক ও প্রশাসনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে- এই বার্তা তৃণমূলে পৌঁছে দেওয়ার নির্দেশ দেন তিনি। আগামী অক্টোবরে আওয়ামী লীগের জাতীয় সম্মেলনের আগে তৃণমূল পর্যায়ে বর্ধিত সভা করার নির্দেশ দেন তিনি। শেখ হাসিনা চান একটি ফ্রেশ কাউন্সিলর তালিকা তৈরির মধ্য দিয়ে জাতীয় সম্মেলনটি করতে।
আওয়ামী লীগের পাশাপাশি দলের সহযোগী সংগঠনগুলো নিয়েও কথা বলেন শেখ হাসিনা। ছাত্রলীগের কেন্দ্রীয় কমিটি যত দ্রুত সম্ভব পূর্ণাঙ্গ করার নির্দেশ দেন তিনি। পাশাপাশি যুবলীগ, স্বেচ্ছাসেবক লীগ, কৃষক লীগসহ দলের যেসব সহযোগী সংগঠনের বর্তমান কমিটির মেয়াদ শেষ হয়েছে, তাদের সঙ্গে কথা বলে সম্মেলন আয়োজনের ব্যবস্থা নিতেও বলেছেন তিনি।
আওয়ামী লীগের কেন্দ্রীয় নেতারা আরও জানিয়েছেন, আগামী শুক্রবার বিকালে বঙ্গবন্ধু অ্যাভিনিউয়ে দলের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ে দলের উপদেষ্টা পরিষদ ও কেন্দ্রীয় কার্যনির্বাহী সংসদের সঙ্গে এক যৌথসভায় বসবেন শেখ হাসিনা। ওই সভায় এসব বিষয়ে বিস্তারিত আলোচনা করবেন তিনি। আওয়ামী লীগ সাধারণ সম্পাদক ওবায়দুল কাদের চিকিৎসা শেষে দেশে ফিরলে বিশেষ বর্ধিত সভা করা হবে। ওই সভায় সারাদেশ থেকে আসা দলের দায়িত্বশীল নেতাদের দিকনির্দেশনা দেবেন প্রধানমন্ত্রী।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে গণভবনের ওই অনির্ধারিত বৈঠকে উপস্থিত আওয়ামী লীগের ভারপ্রাপ্ত সাধারণ সম্পাদক মাহবুব-উল আলম হানিফ আমাদের সময়কে বলেন, তৃণমূল পর্যায়ে দলকে সুসংগঠিত করার নির্দেশনা দিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। সে অনুযায়ী শিগগিরই সারাদেশে সাংগঠনিক কার্যক্রম শুরু হবে।
ওই বৈঠকে উপস্থিত দলের আরেক যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক আবদুর রহমান বলেন, নেত্রী নির্দেশ দিয়েছেন দলের প্রতি গুরুত্ব দিতে হবে। আগামী দিনে দলকে নানা অশুভ শক্তির চ্যালেঞ্জের মুখে ফেলার চেষ্টা হবে, সে বিষয়ে সতর্ক থাকতে হবে সবাইকে। দলকে গতিশীল করতে হবে।
দলটির সাংগঠনিক সম্পাদক ও নৌপরিবহন প্রতিমন্ত্রী খালিদ মাহমুদ চৌধুরী বলেন, অতীতেও অনেকে আওয়ামী লীগে ঢুকে দলকে ক্ষতিগ্রস্ত করার চেষ্টা করেছে, এখনো সেই চেষ্টা অব্যাহত আছে। অন্যান্য দল থেকে অপরাধীদের যারা আওয়ামী লীগের অনুপ্রবেশ করাচ্ছে এবং যারা অনুপ্রবেশ করছে তাদের প্রতি সাংগঠনিক ব্যবস্থা নেওয়া হবে। কারণ আওয়ামী লীগের গঠনতন্ত্র ও ঘোষণাপত্র কোনো অপরাধ সমর্থন করে না।

সূত্র : আমাদেরসময়