• ২১শে ডিসেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই পৌষ, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৯শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

ঈদে বিশেষ নজরদারি থাকবে ফেসবুকে

bijoy71news
প্রকাশিত আগস্ট ১৬, ২০১৮


ঈদুল আজহা উপলক্ষে ৫০ লাখের বেশি মানুষ আগামী সপ্তাহে ঢাকা ছাড়বেন। গ্রামের বাড়িতে স্বজনদের সঙ্গে তারা পালন করবেন ঈদ। ব্যস্ততম নগরী কয়েক দিনের জন্য থাকবে ফাঁকা।

এ ছাড়া রাজধানীর ২১টি হাটে বসেছে পশুর হাট। এসব হাটে কয়েক লাখ গরু-ছাগলসহ অন্য পশু কেনাবেচা হবে। কোরবানি ঈদের আগে-পরে যাতে নগরীর আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি স্বাভাবিক থাকে সে জন্য আগেভাগেই প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ-র‌্যাবসহ অন্য বাহিনীগুলো। প্রতিবারের মতো এবারো বাসাবাড়ি, পশুর হাট এবং বাস-ট্রেন-লঞ্চ টার্মিনালকে কেন্দ্র করে সাজানো হয়েছে নিরাপত্তা পরিকল্পনা। আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, নগরবাসী যাতে উৎসবমুখর পরিবেশে ঈদ উদযাপন করতে পারে সে জন্য যাবতীয় প্রস্তুতি নেওয়া হয়েছে। তবে এবারের ঈদে ফেসবুকসহ অন্য সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কেউ যাতে গুজব ছড়িয়ে উসকানি দিতে না পারে সেদিকে কঠোর নজর রাখবে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীগুলো। আইনশৃঙ্খলা বাহিনী সূত্রে জানা গেছে, ঈদে রাজধানীর গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলোতেও কয়েক স্তরের নিরাপত্তা দিতে প্রস্তুতি নিয়েছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। র‌্যাবসহ অন্য আইনশৃঙ্খলাবাহিনীও প্রস্তুত রয়েছে। এ ছাড়া বাসাবাড়ি, কোরবানির পশুর হাট এবং বাস-টার্মিনাল, লঞ্চ টার্মিনাল ও রেলস্টেশনেও থাকবে নিরাপত্তার বেষ্টনী। মলমপার্টি ও ছিনতাইকারীর দৌরাত্ম্যরোধে মাঠে থাকবে একাধিক গোয়েন্দা টিম।
ঈদুল আজহা উপলক্ষে গত শনিবার পুলিশ হেডকোয়ার্টার্সে আইনশৃঙ্খলা সংক্রান্ত এক সভা অনুষ্ঠিত হয়ছে। সেখানে উৎসবমুখর পরিবেশে নগরবাসী যাতে ঈদ উদযাপন করতে পারেন সে লক্ষ্যে পুলিশ কর্মকর্তাদের নিষ্ঠা ও পেশাদারিত্বের সঙ্গে দায়িত্ব পালনের জন্য নির্দেশনা দিয়েছেন আইজিপি ড. মো. জাবেদ পাটোয়ারী। শুধু তাই নয়, কোনো ব্যক্তি বা গোষ্ঠী সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে যাতে কোনো ধরনের অপপ্রচার চালিয়ে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির অবনতি ঘটাতে না পারে সে জন্য সবাইকে সতর্ক ও সজাগ থাকতে বলা হয়েছে।
ওই সভায় পবিত্র ঈদুল আজহাকে কেন্দ্র করে সারা দেশ থেকে ঢাকার বিভিন্ন হাটে কয়েক লাখ পশু প্রবেশ করবে। কোরবানির পশু বহনকারী কোনো গাড়ি মহাসড়কে যাতে কোনো বাধার সম্মুখীন না হয় সেই দিকে কঠোর নজরদারি রাখার পরামর্শ প্রদান করা হয়েছে। সুনির্দিষ্ট কোনো অভিযোগ ছাড়া মহাসড়কে কোরবানির পশুবাহী ট্রাক না থামানোর জন্যও বলা হয়েছে।
বাংলাদেশ পুলিশের (মিডিয়া অ্যান্ড পিআর) এআইজি মো. সোহেল রানা জানিয়েছেন, ‘ঢাকা মহানগরের বেশিরভাগ মানুষই গ্রামের বাড়িতে গিয়ে পরিবার পরিজন নিয়ে ঈদ করবে। এ সময় পুরো শহরের জানমালের নিরাপত্তার জন্য সব প্রস্তুতি নিয়েছে পুলিশ। বিশেষ করে এ ঈদে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে কোনো ধরনের গুজব না ছড়ায় সেই দিকটি প্রথম এজেন্ডা হিসেবে নেওয়া হয়েছে। আর যেসব স্থানে কোরবানি পশুর হাট বসেছে সেসব স্থানে আইনশৃঙ্খলা বাহিনীর যৌথ টিম কাজ করে যাচ্ছে।’ সড়ক, রেল, নৌপথ, পশুরহাট এবং ঈদ জামাতস্থলের নিরাপত্তা নিশ্চিতের জন্য সব প্রস্তুতি রয়েছে বলেও জানান তিনি।
কোরবানি পশুর হাট নিয়ে তিনি বলেন, নির্ধারিত হাট ছাড়া কোরবানির পশু উঠানামা করা যাবে না। পশুরহাটে অস্থায়ী ক্যাম্প স্থাপন করা হচ্ছে। তিনি জানান, এ ছাড়া জালনোট শনাক্তকরণ মেশিন স্থাপন করা হচ্ছে।
কোরবানির পশু পরিবহনে নৌপথ ও সড়কপথে চাঁদাবাজি রোধে পুলিশ ও অন্য সংস্থার সদস্যরা দায়িত্ব পালন করবে বলেও জানান তিনি। তিনি বলেন, পশু বিক্রির পর টাকা-পয়সা বহন করার সময় প্রয়োজনে নিকটস্থ থানায় পুলিশের সহায়তা নেওয়ার অনুরোধ করা হয়েছে ব্যবসায়ীদের। কোরবানির পশুর হাটে কৃত্রিম সংকট সৃষ্টিকারী, অতিরিক্ত হাসিল আদায়কারী বিরুদ্ধে সংশ্লিষ্ট সংস্থার সঙ্গে সমন্বয়ের মাধ্যমে মোবাইল কোর্ট পরিচালনা করা হবে।
তিনি জানান, নৌপথ, রেলপথ ও সড়কপথে ঘরমুখো যাত্রীদের নিরাপদ ভ্রমণের জন্য যান চলাচল স্বাভাবিক রাখার পাশাপাশি যাত্রীদের নিরাপত্তা এবং চাঁদাবাজি বন্ধে নৌপুলিশ ইউনিট ও অন্য পুলিশ ইউনিটের সহায়তায় চেকপোস্ট স্থাপন এবং টহলের ব্যবস্থা করা হয়েছে। বাস টার্মিনাল এবং পার্শ্ববর্তী এলাকার আইনশৃঙ্খলা নিয়ন্ত্রণে টহল জোরদার, টিকিট কালোবাজারি ও মহাসড়কে ডাকাতি প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণ করেছে পুলিশ। এ ছাড়া জাতীয় ঈদগাহ ময়দানসহ সারা দেশের প্রধান প্রধান ঈদ জামাতস্থলসহ জেলা এবং থানা পর্যায়ে গুরুত্বপূর্ণ ঈদ জামাতস্থলের নিরাপত্তায় পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেওয়ার কথাও জানান তিনি।
পুলিশের পাশাপাশি র‌্যাবের পক্ষ থেকেও নগরীর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদারের নানা উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে। র‌্যাবের মিডিয়া উইংয়ের পরিচালক মুফতি মাহমুদ খান জানান, ঈদে বাড়ি ফেরা মানুষের দুর্ভোগ যাতে পোহাতে না হয় এবং মহাসড়কে যাতে কোরবানি পশু বহনকারী গাড়িতে কোনো ধরনের চাঁদাবাজি না হয় সেই দিকটি কঠোরভাবে মনিটরিং করবে র‌্যাব। ফাঁকা নগরীতে চুরি ডাকাতি রোধে আর্থিক প্রতিষ্ঠান, শপিংমল, কোরবানির হাট ও বাসাবাড়ি নিশ্চিদ্র নিরাপত্তা বেষ্টনীর মধ্যে রাখা হবে। নগরে পশুর হাট ও ঈদের জামাত যেখানে হবে সেসব স্থানে প্রতিবছরের মতো এবারও নিরাপত্তার চৌকি বসানো থাকবে। তা ছাড়া ভ্রাম্যমাণ কয়েকটি টিমও কাজ করবে।
তিনি বলেন, কেউ যদি বিনা কারণে কোনো ধরনের উসকানিমূলক প্রচারণা চালায় তার ব্যাপারে আইনানুগ ব্যবস্থা গ্রহণ করবে র‌্যাব।