• ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

রঙ করে দূরপাল্লার রুটের জন্য তৈরি হচ্ছে লক্কড়-ঝক্কড় বাস

bijoy71news
প্রকাশিত আগস্ট ১৬, ২০১৮

ঈদ এলেই দূরপাল্লার পরিবহনে যাত্রীদের উপচেপড়া ভিড় হয়। মালিকরাও ব্যবসা বাড়াতে ঈদে যে কোনো কায়দায় পরিবহন সড়কে নামাতে চান। ফলে ফিটনেস সমস্যা থাকলেও রঙ করে সড়কে বাস নামিয়ে দেয়।

তাই প্রতিটি ঈদের আগ মুহূর্তে ঢাকায় লক্কড়-ঝক্কড় বাস রঙ করার ধুম পড়ে যায়। ফিটনেসের সমস্যা থাকলে বাইরে থেকে যাতে কেউ দেখে প্রশ্ন না তুলতে পারে।
বুধবার দুপুরে সরেজমিনে গাবতলী টার্মিনালের ভিতরে একাধিক রুটের দূরপাল্লার বাস রঙ করতে দেখা গেছে। সেখানে বাসের রঙ করছে এমন একাধিক মিস্ত্রির সাথে কথা বলে জানা যায়, তারা বিগত এক মাসের মধ্যে প্রায় হাজারের অধিক পুরনো দূরপাল্লার বাস রঙ করেছেন। তবে অধিকাংশ বাসের ফিটনেস সমস্যা রয়েছে বলেও জানাই তারা। সাময়িক বিড়ম্বনা এড়াতে বাস মালিকরা রঙ করাচ্ছেন বলেও জানান তারা।

গাবতলী টার্মিনালের ভেতরে দ্রুতি নামের একটি পরিবহনের রঙের কাজ করছিলেন মিস্ত্রি মনোরঞ্জন সরকার। তিনি বলেন, ‘সারা বছর কম চাপ থাকলেও দুই ঈদে ব্যাপক কাজের চাপ থাকে।’
তিনি বলেন, ‘গত এক মাসে শতাধিক গাড়ি রঙ করেছি। এখনো ঈদের আগে ৬টা গাড়ির কাজ হাতে আছে।’
পুরনো রঙ করা গাড়ির ফিটনেস ঠিক থাকে কি না জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘আসলে ঈদের সময় গাড়িগুলো রঙচঙ করে সড়কে তুলতে চায়। একটু সমস্যা থাকলে, সেটা পরে মেরামত করতে চায়।’

তিনি বলেন, এই যেমন এখন যে গাড়িটার রঙ করছি কিছু সমস্যা রয়েছে, তবে কালকেই নিয়ে গিয়ে ঈদের যাত্রী বহন করবে মালিক পক্ষ। ঈদ শেষে আবার গ্যারেজে এনে ঠিক করে নিবে।
এর পাশেই ঢাকা-টাঙ্গাইল রুটে নিরালা সুপারের একটি গাড়ি রঙ করা হচ্ছে। সেখানে কাজ করছেন এমন একজন বলেন, ‘ঈদের সময় ফিটনেস নিয়ে পুলিশের ঝামেলা এড়াতে লক্কড়-ঝক্কড় বাস রঙ করে থাকে। ফিটনেস সমস্যা তো আছে।’
টার্মিনালের মধ্যে একটু সামনে গিয়েই দেখা যায় ঢাকা থেকে রংপুর-সৈয়দুপুর রুটের সালমা পরিবহনের তিনটা বাস রঙ করা হচ্ছে।
গাবতলী টার্মিনালের বিপরীত পাশে খালেকের মাঠে গিয়ে দেখা যায়, সেখানে দূরপাল্লার একাধিক বাস রঙ করা হচ্ছে। সেখানে রিমন নামের এক মিস্ত্রি বলেন, রাস্তায় ছাত্র মারা যাওয়াতে বাস মালিকরা একটু চাপে আছে। তাই রঙ করাতে বেশিই আসছে। আর তাছাড়া ঈদ উপলক্ষে রঙ করাচ্ছে।
গাবতলী টার্মিনালে এক চায়ের দোকানদার বলেন, ‘এখানে ফিটনেসবিহীন বাস রঙ করে রাস্তায় তুলে দেয়। বাইরে থেকে সুন্দর দেখা গেলেও গাড়িগুলোর ফিটনেস ঠিক থাকে না।’
গাবতলী টার্মিনালে ঢাকা থেকে ঠাকুরগাঁও-রানীশংকৈল রুটের রূপা পরিবহনের একটি গাড়ির রঙ করানো হচ্ছে। সেখানে উপস্থিত রূপা পরিবহনের বাবুল নামে এক কর্মচারী বলেন, ‘ঈদের আগে আমাদের ৫টি গাড়ির রঙ করানো হচ্ছে।’
তবে তিনি লক্কর-ঝক্কর বাস রঙ করা হচ্ছে না জানিয়ে বলেন, ‘না। আমাদের ৫টা বাসের ফিটনেসসহ সবকিছু ঠিক করা হচ্ছে। সবকিছু ঠিক করেই বাস রাস্তায় নামাবো। যাত্রীদের কোনো রকম ঝুঁকিতে ফেলতে চাই না।’

এ ব্যাপারে বাংলাদেশ সড়ক পরিবহন মালিক সমিতির মহাসচিব খন্দকার এনায়েত উল্লাহ বলেন, ‘ফিটনেসবিহীন বাস রঙ করে সড়কে নেয়া মোটেও ঠিক না। আমরা এ ব্যাপারে নিষেধাজ্ঞা পাঠাচ্ছি। আর ঈদের পর থেকে ফিটনেস পরীক্ষা করা হবে। আপাতত ঈদকে সামনে রেখে ফিটনেস পরীক্ষা স্থগিত রেখেছি। এসব কারণে ঘরমুখো মানুষের কোনো ভোগান্তি যেন না হয়।’
বিআরটিএর চেয়ারম্যান মশিউর রহমান জানান, ফিটনেসবিহীন যানবাহন যেসব জায়গায় মেরামত চলছে, সেখানে আমাদের কয়েকটি টিম মনিটরিং চালাচ্ছে। যতেই মেরামত ও রঙ করানো হোক, কোনো লাভ নেই। শুধু এই ঈদে নয়, আর কখনো কোনোভাবেই মহাসড়কে ফিটনেস ও লাইসেন্সবিহীন পরিবহন চলতে দেয়া হবে না।