• ১৪ই ডিসেম্বর, ২০২৫ খ্রিস্টাব্দ , ২৯শে অগ্রহায়ণ, ১৪৩২ বঙ্গাব্দ , ২৩শে জমাদিউস সানি, ১৪৪৭ হিজরি

আরিফের সামনে ‘কঠিন চ্যালেঞ্জ’

bijoy71news
প্রকাশিত আগস্ট ১২, ২০১৮

নুরুল হক শিপু ::
টানা দ্বিতীয়বারের মত নির্বাচিত সিলেট সিটি কর্পোরেশন মেয়র আরিফুল হক চৌধুরীর সামনে অপেক্ষা করছে ‘কঠিন চ্যালেঞ্জ’। এই পরীক্ষায় বিজয়ী হলেই আরিফকে বলা যাবে সিলেটের সফল নগর পিতা। অন্যথায় পুরোনো মেয়রদের মতো তাঁর ভাগ্যেও একটি কথা জুটবে-‘ব্যর্থ মেয়র আরিফ’। তাই আরিফকে ‘সফল’ মেয়র খেতাব লাগাতে হলে অবশ্যই ২০১৩ সাল ও এবারের ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে হবে বলে মনে করেন মহানগরবাসী।

সুশাসনের জন্য নাগরিক (সুজন) সিলেটের সভাপতি ফারুক মাহমুদ চৌধুরী বলেন, ‘আরিফুল হক চৌধুরী মেয়র হয়েছেন মহানগরবাসীর ভোটে। নির্বাচিত হয়েই তাঁর কাজ শেষ নয়; জনগণের আমানত ভোটের বিনিময়ও তাঁকে দিতে হবে। তিনি ২০১৩ সালের এবং এবারের ঘোষিত ইশতের বাস্তবায়ন করে জনগণের ঋণশোধ করতে হবে। তখনই তাকে বলা যাবে সফল মেয়র। ফারুক মাহমুদ বলেন, দুই বারের ইশতেহার বাস্তবায়ন করা মেয়র আরিফের সামনে বড় পরীক্ষা। এবার নগরবাসীর দেখার পালা তিনি উর্ত্তীণ হন না অকৃতকার্য হন’।

প্রথমবার মেয়র নির্বাচিত হয়ে ঘোষিত ইশতেহার বাস্তবায়ন করতে না পেরে প্রায় তিন বছর কারাবরণকে দায়ি করেছিলেন আরিফুল হক চৌধুরী। ২০১৩ সালের নির্বাচনে ১৮ দল সমর্থিত সম্মিলিত নাগরিক জোটের প্রার্থী কেন্দ্রীয় বিএনপির নির্বাহী সদস্য আরিফুল হক চৌধুরীর ১৪ দফা ইশতেহারে ছিল, সিটি কর্পোরেশনকে জবাবদিহিমূলক প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়া, নগরীর বিশিষ্ট ব্যক্তিদের সমন্বয়ে উপদেষ্টা পরিষদ গঠন, নিজস্ব আয় বৃদ্ধি, সাইবার সিটি গড়ে তোলা, পানীয় জলের সমস্যার সমাধান, জলাবদ্ধতা দূরীকরণ, যানজট ও পরিবহন সংকট দূরীকরণ, শিক্ষা উন্নয়ন, স্বাস্থ্যসেবা নিশ্চিত করা, বর্জ্য ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে পরিচ্ছন্ন নগরী গঠন ও প্রবাসী সেবাকেন্দ্র স্থাপন। ইশতেহারে মেয়র নির্বাচিত হলে সিলেট নগরীর জন্য মহাপরিকল্পনা প্রণয়ন করবেন এবং সিলেট কারাগারের জায়গায় আধুনিক সাইবার সিটি গড়া, পানীয় জলের সমস্যা সমাধানে সাইফুর রহমানের সময় নেওয়া উদ্যোগ বাস্তবায়নের মাধ্যমে নগরীর প্রতিটি ঘরে সুপেয় খাওয়ার পানি পৌঁছে দেওয়া, বেসরকারি উদ্যোগে নগর বাস সার্ভিস আরও সম্প্রসারণ এবং বিআরটিসি বাস ও ট্যাক্সি ক্যাব সার্ভিস চালু, পথচারীদের নিরাপদ পারাপারের জন্য ওভারব্রিজ ও গুরুত্বপূর্ণ জায়গায় ফ্লাইওভার নির্মাণ, নগরীর শিক্ষার উন্নয়ন ও প্রসারে নগর বিশ্ববিদ্যালয় স্থাপনসহ বিভিন্ন ওয়ার্ডে প্রাথমিক ও মাধ্যমিক বিদ্যালয় প্রতিষ্ঠা করা কথা ছিলো। এছাড়া বিদেশের সঙ্গে লিংক প্রোপ্রামের মাধ্যমে প্রফেশনাল স্কিল ডেভেলপমেন্ট ইনস্টিটিউট স্থাপন করা, স্বাস্থ্যসেবার উন্নয়নে নগরীর প্রতিটি ওয়ার্ডে একটি করে স্যাটেলাইট ক্লিনিক স্থাপন করা। কিন্তু এসব প্রতিশ্রুতির ৯০ শতাংশই বাস্তবায়ন করতে পারেননি আরিফ।

এবারের ইশতেহারে আরিফ উল্লেখ করেন, ‘জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী গড়তে ছড়া ও খাল উদ্ধারের পাশাপাশি শতভাগ জলাবদ্ধতামুক্ত নগরী গড়ার স্বার্থে সুরমা নদীকে খনন করা হবে। সিলেটকে এগিয়ে নিতে তথ্যপ্রযুক্তির নগরী হিসেবে গড়ে তোলা, নগরীতে ‘তথ্য প্রযুক্তি ভবন’ গড়ে তোলা, নগরীর অন্যতম প্রাণকেন্দ্র সন্ধ্যাবাজারে ওয়াইফাই চালুরও কাজ বাস্তবায়ন, দ্বিতীয় মেয়াদে নির্বাচিত হলে এই প্রকল্প বাস্তবায়নে অগ্রাধিকার দেওয়া, যানজট নিরসন ও হকারদের পুনর্বান করা, ট্রাক টার্মিনালের নির্মাণ কাজ সম্পন্ন করা, কদমতলী বাস টার্মিনালকে আন্তর্জাতিক মানে রূপান্তর করা, যানজট নিরসনের জন্য টাউন বাস চালু করা, প্রাইভেট গাড়ির আধিক্য কমানোর লক্ষ্যে স্কুলভিত্তিক বাস চালু করা, রাস্তা প্রশস্তকরণ কার্যক্রম অব্যাহত রাখা, অপরিকল্পিতভাবে নির্মিত ও ঝুঁকিপূর্ণ পুরনো লালদিঘী মার্কেট ভেঙে ফেলা, এখানে নতুন সুপরিসর মার্কেট তৈরী করে হকারদের পুনর্বাসন করা হবে। পরিচ্ছন্ন নগরী গড়তে আরো ৫টি স্থানে সেকেন্ডারি ট্রান্সফার স্টেশন স্থাপন, তরল বর্জ্য, ক্লিনিক্যাল ও মেডিকেল বর্জ্য আধুনিক এবং বৈজ্ঞানিক পদ্ধতিতে ডাম্পিংয়ের ক্ষেত্রে অটোক্ল্যাপ পদ্ধতি সম্পূর্ণরূপে বাস্তবায়ন করা, নগরীর বস্তিবাসীদের জীবনমান উন্নয়নে বস্তিতে স্যানেটারি কক্ষ নির্মাণ, বস্তি বা গরীব কল্যাণ ফান্ড গঠন, বিশেষ অ্যাম্বুলেন্সের ব্যবস্থা করা, বস্তিবাসী নারীদের জন্য সেলাই প্রশিক্ষণ, বিউটি পার্লার প্রশিক্ষণসহ ‘মোবাইল ট্রেনিং সেন্টার’ চালু করার অঙ্গিকার করেন আরিফ।

স্বাস্থ্যসেবার উন্নতির জন্য স্যাটেলাইট ক্লিনিকের সংখ্যা বৃদ্ধি, ২৫ শয্যাবিশিষ্ট কিডনি ডায়ালাইসিস সেন্টার চালু করা, শিক্ষাক্ষেত্রে উন্নয়নের লক্ষ্যে স্কুলের সংখ্যা ও কার্যক্রমের আওতা বৃদ্ধি করা, যুক্তরাজ্য ও অন্যান্য দেশের সাথে কানেকটিং ক্লাসরুম কার্যক্রম চালু করা, সুপেয় ও বিশুদ্ধ পানি সরবরাহ নিশ্চিত করার জন্য কুইটোক ওয়াটার ট্রিটমেন্ট প্লান্ট চালু করে নিরবিচ্ছিন্নভাবে প্রতিদিন ৫ কোটি লিটার পানি নাগরিকদের কাছে পৌঁছে দেওয়া, পানি সরবরাহ বৃদ্ধি করতে উৎপাদক নলকূপের সংখ্যা বৃদ্ধি করা, তরুন প্রজন্মকে নিয়ে একটি ড্রিম টিম গঠন করা, আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে এই প্রকল্পে শিক্ষিত তরুণ-তরুণীকে চাকরির সুযোগ করে দেওয়া, বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয় ও কলেজের শিক্ষার্থীরা এই ড্রিম টিমে কাজ করে আউটসোর্সিংয়ের মাধ্যমে নিজেকে স্বাবলম্বী করা, একই সাথে এই প্রকল্পের মাধ্যমে বেকারদের কর্মসংস্থানেরও সুযোগ সৃষ্টি করা, সিলেট সিটি করপোরেশনকে সম্প্রসারণ করার ক্ষেত্রে এবং সিলেটকে তথ্যপ্রযুক্তি সমৃদ্ধ ভবিষ্যতের সিলেট গড়ার কাজে এই ড্রিম টিম গবেষণাকর্মও পরিচালনা করা, নারীদের জন্য আলাদা একটি ট্রেনিং ইন্সটিটিউট করা, যোগ্যতার ভিত্তিতে সিটি করপোরেশনসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে তাদেরকে চাকরির সুযোগ করে দেয়া, নারীদের জন্য আলাদা টাউন বাস চালু করা, বিশ^ব্যাপী আউটসোর্সিংয়ের যে মার্কেট সেখানে তারা যাতে কাজ করতে পারে সেভাবে তাদের যোগ্য করে গড়ে তোলা, কর্মজীবী নারীদের সুবিধার জন্য ডে-কেয়ার সেন্টার চালুর উদ্যোগ গ্রহন করা, নগরীতে একটি লার্নিং রিসোর্স সেন্টার চালু করা, এতে থাকবে ই-লাইব্রেরি, ডেস্কটপ কম্পিউটার, ওয়াইফাই সুবিধা, থাকবে কফিশপসহ তথ্যপ্রযুক্তির সেবার ক্ষেত্রে নানারকম সুবিধা। শিক্ষিত ও মেধাবীরা যাতে এই লার্নিং রিসোর্স সেন্টারে এসে বিশে^র বিভিন্ন বিশ^বিদ্যালয়ে স্কলারশিপ, ক্রেডিট ট্রান্সফার ইত্যাদি বিষয়ে যাবতীয় তথ্য পেতে পারে সেজন্য ইনফরমেশন ডেস্ক স্থাপন করা, ওয়ার্ডভিত্তিক ক্লাব পাঠাগার এবং ফরেন ল্যাঙ্গুয়েজ কোর্স চালু করা। সবমিলিয়ে একটি নতুন সিলেট গড়ার প্রত্যয় করেন আরিফ।

এ ব্যাপারে নবনির্বাচিত মেয়র আরিফুল হক চৌধুরী বলেন, ‘চ্যালেঞ্জ নিয়ে কাজ করতেই আমি ভালোবাসি। আমি জানি আমি কঠিক পরীক্ষার মুখোমুখি। মহানগরবাসীর স্বপ্ন বাস্তবায়ন এবং আমার দুইবারের ইশতেহার বাস্তবায়নই হবে আমার মূললক্ষ্য।’