বি৭১নি ডেস্ক : আধ্যাত্মিক নগরী সিলেট সম্প্রীতির নগরী হিসেবেও পরিচিত। ধর্ম, রাজনীতি, সংস্কৃতি প্রতিটি ক্ষেত্রেই সৌহার্দপূর্ণ পরিবেশের অপূর্ব মিশেলে অনন্য উদাহরণ তৈরী করে চলেছে এই পূণ্যভূমি। বিশেষ করে সিলেটের রাজনীতি সম্প্রীতির মেলবন্ধনে মাড়িয়েছে সুদীর্ঘ পথ। এখানে রাজনীতির মাঠে নেতায় নেতায় কথার বাণ চলে। কিন্তু রাজনীতির মাঠ থেকে বেরিয়েই এক টেবিলে বসে নেতায় নেতায় চলে খোশগল্প।
জাতীয় নির্বাচনের মৌসুম এখন। সারাদেশে আওয়ামী লীগ ও বিএনপি নেতাদের মধ্যে বাড়ছে দূরত্ব, চলছে প্রতিপক্ষকে ঘায়েল করার চেষ্টা। কিন্তু উল্টোচিত্র সিলেটে। এখানে রাজনৈতিক উত্তাপকে এক পাশে রেখে বজায় রয়েছে শান্তিপূর্ণ পরিবেশ। এই যেমন আজ বৃহস্পতিবার আওয়ামী লীগের প্রবীণ নেতা অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের বাসায় গিয়ে হাজির হলেন বিএনপির ভাইস চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী। রাজনৈতিক আদর্শের দূরত্বকে দূরে রেখে উভয় নেতা মেতে ওঠলেন খোশগল্প আর স্মৃতিচারণে।
সিলেট নগরীর ধোপাদিঘীরপাড় এলাকায় হাফিজ কমপ্লেক্সে অর্থমন্ত্রী মুহিতের পারিবারিক বাসভবন। বৃহস্পতিবার সকাল সাড়ে ১০টার দিকে সেখানে গিয়ে হাজির হন প্রাইভেটাজাইশেন কমিশনের সাবেক চেয়ারম্যান ইনাম আহমদ চৌধুরী। মুহিতের সাথে ইনামের সাক্ষাৎকালে উপস্থিত ছিলেন ড. মোমেনও।
হঠাৎ করে মুহিতের সাথে ইনামের এই সাক্ষাতে কী আলোচনা হয়েছে, তা নিয়ে সর্বত্র রয়েছে কৌতুহল।
খোঁজ নিয়ে জানা গেল, প্রায় ঘন্টাব্যাপী তাঁরা বিভিন্ন বিষয়ে কথা বলেছেন। তাঁদের আলাপের সিংহভাগজুড়ে ছিল অতীত স্মৃতিচারণ।
আসন্ন একাদশ জাতীয় নির্বাচনকে কেন্দ্র করে বিএনপির নেতাকর্মীদের যাতে গ্রেফতার ও হয়রানি করা না হয়, নির্বাচনে যাতে সুষ্ঠু ও শান্তিপূর্ণ পরিবেশ বজায় থাকে, সেজন্য অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আব্দুল মুহিতের হস্তক্ষেপ কামনা করেন ইনাম আহমদ চৌধুরী। একইসাথে গ্রেফতারকৃত বিএনপি নেতাকর্মীদের মুক্তির বিষয়টি তুলে ধরেন ইনাম।
ইনাম চৌধুরী প্রত্যাশা ব্যক্ত করে বলেন, সিলেটের রাজনৈতিক সম্প্রীতি যেন নির্বাচনেও বজায় থাকে।
জানতে চাইলে বিএনপি নেতা ইনাম আহমদ চৌধুরী সিলেটভিউকে বলেন, ‘এটা নিতান্তই সৌজন্য সাক্ষাৎ ছিল। অতীত নিয়ে স্মৃতিচারণ করেছি আমরা। মুহিত আমার বড় ভাই ফারুক চৌধুরীর ঘনিষ্ঠ বন্ধু ছিলেন। আমার সাথেও তাঁর ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক রয়েছে। মুহিতের বাসা যেখানে, সেখানে অনেক আগে আমাদের বাসাও ছিল।’
ইনাম চৌধুরী বলেন, ‘অর্থমন্ত্রীর সাথে ঘন্টাখানেক কথা বলেছি। ছাত্রজীবনে ১৯৫৪-৫৫ সালের দিকে তিনি এবং আমি একই ক্যাবিনেটে ছিলাম। তিনি আমার সিনিয়র ছিলেন। তাঁর সাথে সবসময়ই আমার যোগাযোগ থাকে।’
সিলেটের রাজনৈতিক সম্প্রীতির বিষয়টি উল্লেখ করে ইনাম চৌধুরী বলেন, ‘আমরা সম্প্রীতি, সৌহার্দপূর্ণ, শান্তিপূর্ণ পরিবেশে বিশ্বাস করি। আমাদের রাজনীতিতে আদর্শ স্থাপন করা উচিত। বিশেষ করে সিলেটে এটা হওয়া উচিত। সিলেটকে পূণ্যভূমি বলি। সিলেটে রাজনৈতিক, ধর্মীয়, সাম্প্রদায়িক সবকিছুর ঊর্ধ্বে ওঠে সম্প্রীতির যে বিষয়, তা শুধু মুখের কথায় নয়, কর্মে প্রমাণ করা উচিত। সিলেটে প্রশাসনে যারা আছেন, তারাও যেন এটা করেন। অর্থমন্ত্রী সর্বোজ্যেষ্ঠ একজন নেতা। তার সাথে সৌজন্য সাক্ষাৎ সম্প্রীতিরই ধারাবাহিকতা। এখানে কে আওয়ামী লীগ, কে বিএনপির, কে জাতীয় পার্টির প্রার্থী এটা সামনে আসা উচিত নয়। এটা ভোটের মাঠে ভোটাররা বিবেচনা করবেন।’