• ২১শে সেপ্টেম্বর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ৬ই আশ্বিন, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৮ই রবিউল আউয়াল, ১৪৪৬ হিজরি

ঘুষের টাকা না দিলে মিলেনা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল!

bijoy71news
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ১২, ২০২৪
ঘুষের টাকা না দিলে মিলেনা খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল!

রংপুরের বদরগঞ্জে ঘুষের পুরো টাকা না পাওয়ায় খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির চাল আটকে রাখার অভিযোগ উঠেছে। পরিবেশকেরা (ডিলার) বলছেন, গুদাম থেকে চাল তুলতে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক টনপ্রতি ২০০ টাকা ঘুষ দাবি করেছেন। ডিলাররা ৫০ টাকা করে দিয়েছেন। কিন্তু পুরো টাকা না পাওয়ায় তিনি নানা অজুহাত দেখিয়ে চাল আটকে রেখেছেন।

শুধু খাদ্য নিয়ন্ত্রক নন, সরকারি খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তাও (ওসিএলএসডি) টনপ্রতি ৫০ টাকা করে ঘুষ দাবি করেছেন বলে ডিলাররা অভিযোগ তুলেছেন। তাঁরা চাল তোলার জন্য ব্যাংকে টাকা জমা দিয়েও ৩-৪ দিন ধরে খাদ্যগুদামে ঘুরছেন।

তবে অভিযোগ অস্বীকার করে উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক বিপ্লব কুমার সিং বলছেন, ‘দেশের পরিস্থিতি ভালো নয়। আমি জানি, ডিলাররা এখন থেকে চাল নিয়ে বাইরে গেলে সমস্যায় পড়বেন। তাই আমি চাই না, আমার কোনো ডিলার চাল উত্তোলন করে সমস্যায় পড়ুক।’
খাদ্যগুদামের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসিএলএসডি) আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘আমি কারও কাছ থেকে ঘুষ দাবি করি না। ডিলাররা চাল নেওয়ার পর খুশি মনে যা দেন, তা-ই নেই।’

উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, বদরগঞ্জে খাদ্যবান্ধব কর্মসূচির আওতায় ১৯ হাজার ৯৬২ জন কার্ডধারী সুফলভোগী রয়েছেন। দরিদ্র এই কার্ডধারীরা ১৫ টাকা কেজি দরে বছরে পাঁচ মাস ৩০ কেজি চাল পেয়ে থাকেন। এই চাল বিতরণের জন্য ৩৯ জন ডিলার নিয়োগ করা হয়। এর মধ্যে চারজন ডিলার মারা গেলে গত বৃহস্পতিবার ও রোববার ৩৫ জন ডিলার চাল তোলার জন্য ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারের কোষাগারে টাকা জমা দেন।

নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক খাদ্য গুদামের তালিকাভুক্ত এক ডিলার বলেন, ‘আমি রোববার ১৩ টন চাল তুলতে ব্যাংকের মাধ্যমে সরকারের কোষাগারে ১ লাখ ৭৩ হাজার ৩০০ টাকা জমা দিয়েছি। সেই চালান নিয়ে চাহিদাপত্র (ডিউ) নিতে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ে যাই। কিন্তু কার্যালয়ের পিয়ন গবিন্দের মাধ্যমে খাদ্য নিয়ন্ত্রক টনপ্রতি ২০০ টাকা দাবি করেন। পরে টনপ্রতি ৫০ টাকা হিসাবে ৬০০ টাকা দিয়ে ডিউ নেই। সেই ডিউ গত রোববার জমা দিলেও খাদ্যগুদাম থেকে চাল তুলতে পারছি না। খাদ্য নিয়ন্ত্রক স্যারের কাছে গেলে “দেশের পরিস্থিতি ভালো না, তাই এখন চাল দেওয়া যাবে না” বলে জানান।’

নাম প্রকাশ না করার শর্তে আরেক ডিলার বলেন, ‘প্রতি কেজিতে চাল বিক্রি করে লাভ হয় এক থেকে দেড় টাকা। কুলি আর গাড়িভাড়া দিয়ে কিছুই থাকে না। আর এই চাল তুলতে ঘুষ দিতে হয় উপজেলা খাদ্য নিয়ন্ত্রককে প্রতি টন ৫০ টাকা আর ভারপ্রাপ্ত খাদ্য কর্মকর্তাকে ৩০ টাকা। তবু তাঁদের হচ্ছে না। তাঁরা কি সরকার থেকে বেতন-ভাতা পান না?’

অভিযোগের বিষয়ে খাদ্য নিয়ন্ত্রক কার্যালয়ের পিয়ন গবিন্দকে মোবাইল ফোনে কল করা হলে বলেন, ‘ভাই, অফিসে আসেন। সাক্ষাতে কথা হবে।’ এরপর তিনি সংযোগ বিচ্ছিন্ন করে দেন।

ওসিএলএসডি আবু বক্কর সিদ্দিক বলেন, ‘আমি চাল দিতে এক পায়ে দাঁড়ানো আছি। কিন্তু সমস্যা হচ্ছে, ডিলারদের চাল না দিতে বিএনপির কিছু ছেলে আমার এখানে এসে আমাকে হুমকি দিয়েছেন। তাদের ভয়ে চাল দিতে পারছি না।’

উপজেলা বিএনপির সভাপতি ও সাবেক সংসদ সদস্য অধ্যাপক পরিতোষ চক্রবর্তী বলেন, ‘বিএনপির কোনো ছেলে কোথাও গিয়ে প্রভাব খাটাচ্ছে না। যদি কেউ খাদ্যগুদামে গিয়ে কর্মকর্তাকে হুমকি দিয়ে থাকেন, তাহলে এর দায় বিএনপি নেবে না।’

বদরগঞ্জ থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) আবু হাসান কবির বলেন, ‘বিএনপির ছেলেরা খাদ্যগুদামের কর্মকর্তাকে হুমকি দেওয়ার বিষয়টি আমার জানা নেই। এ ঘটনায় কেউ থানায় লিখিত অভিযোগ দিলে বিষয়টি দেখা হবে।’

উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা মো. নাজির হোসেন বলেন, ‘ডিলাররা সরকারের কোষাগারে টাকা জমা দিলে খাদ্য নিয়ন্ত্রক চাল দিতে বাধ্য। কোনো অজুহাতে চাল আটকে রাখার এখতিয়ার তাঁর নেই।’