মধ্যনগরে নদী ভাঙ্গন ঝুঁকিতে পড়েছে দেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম স্মৃতিসৌধ। সুনামগঞ্জের মধ্যনগর উপজেলার সীমান্তবর্তী বংশীকুন্ডা উত্তর ইউনিয়নের মহিষখলা নদীর তীরে অবস্থিত এটি। ১৯৭১ সালে মহান মুক্তিযুদ্ধে ১১ নং সেক্টরের ১ নম্বর সাব-সেক্টর মহিষখলা অঞ্চল ছিল এটি।
জানা যায়, মুক্তিযুদ্ধকালীন সময় পাকিস্তানী হানাদার বাহিনীর হাত থেকে এ অ লকে রক্ষার জন্য গুরুত্বপূর্ণ পরিকল্পনা, যুদ্ধ প্রস্তুতি, মুক্তিসেনারা বিভিন্ন মুক্তি মিশন এখন থেকেই বাস্তবায়ন করতো। মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত স্থান বিধায় ও স্বাধীনতা যুদ্ধে শহিদের স্মরণে সুনামগঞ্জ জেলার তৎকালীন জেলা পরিষদ প্রশাসক ব্যারিস্টার এম এনামুল কবির ইমনের পরিকল্পনায় ও জেলা প্রশাসনের অর্থায়নে ১ কোটি ৯ লক্ষ টাকা ব্যয়ে এটি নির্মিত হয়েছিল। সংশ্লীষ্ট সূত্রে জানা যায়, স্থপতি রাজন দাসের নকশায় এবং গীতিকার নজরুল ইসলাম বাবুর লেখা ‘সবকটা জানা খোলে দাও না’ গানটির আঙ্গিকে মহিষখলা নদীর তীর ঘেসে নদীর প‚র্বদিকে ১৮ হাজার ৭০০ বর্গফুট জায়গায় ২০১২ সালে স্মৃতিসৌধটি নির্মাণ করা হয়। প্রতি বছর পাহাড়ী ঢলে নদীর পাড় ক্রমশ ভাঙ্গন ও গত দুই বছর যাবত অধিকহারে পাহাড়ী ঢলে নদী ভাঙ্গনের ফলে স্মৃতিসৌধের পশ্চিম পাড়ের মাটি নদী গর্ভে ধসে পড়েছে। যেকোনো সময় বড় ধরনের ক্ষয়-ক্ষতির সম্মুখিন হতে পারে এই স্থাপনাটি। বছর দুয়েক আগে স্মৃতিসৌধটি রক্ষায় বালু ভর্তি জিও ব্যাগ দিয়ে নদী পাড়ে বাঁধ তৈরী করলেও তা বেশি দিন টেকসই হয়নি। তাই স্থায়ীভাবে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ করা না হলে কালের পরিক্রমায় নদী গর্ভে বিলীন হয়ে যাবে গুরুত্বপূর্ণ এই স্থাপনাটি।
সরেজমিনে গিয়ে দেখা যায়, স্মৃতিসৌধের মূল স্থাপনার পশ্চিম দিকের মাটি সরে গেছে। রক্ষণাবেক্ষণহীন ও জরাজীর্ণ অবস্থায় পড়ে আছে স্মৃতিসৌধটি। স্মৃতিসৌধের প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের জোর দাবি জানিয়েছেন স্থানীয় মুক্তিযোদ্ধারা ও জনসাধারণ। স্থানীয় গণমাধ্যমকর্মী আল-আমিন সালমান জানান, মহিষখলা মহান স্বাধীনতার স্মৃতিবিজড়িত একটি স্থান। মহান মুক্তিযুদ্ধের শহীদদের স্মরণে নির্মিত স্মৃতিসৌধটি বর্তমানে বেহাল অবস্থায় আছে। তাই স্মৃতিসৌধটি রক্ষণাবেক্ষণ ও নদীর পাড়ে প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণের দাবি জানাচ্ছি।
স্থানীয় বীর মুক্তিযোদ্ধা ও ধর্মপাশা উপজেলা মুক্তিযোদ্ধা সংসদের সাবেক ডেপুটি কমান্ডার মো. নূরুল হক বলেন,’ মহান মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিবিজড়িত এই মহিষখলা স্মৃতিসৌধটি বহুদিন যাবত অবহেলায় পড়ে রয়েছে। স্মৃতিসৌধটি আমাদের স্বাধীনতার প্রতীক। মহান মুক্তিযুদ্ধের সময় সদ্য সাবেক রাষ্ট্রপতি আব্দুল হামিদ খান সহ দেশের বহু বরেণ্য ব্যক্তিবর্গ মুক্তিযুদ্ধের ১১ নং সেক্টরের ১ নম্বর সাব-সেক্টর মহিষখলায় এসেছিলেন। স্মৃতিসৌধটি মহিষখলা নদীর পাড়ে অবস্থিত। কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত স্মৃতিসৌধটি বর্তমানে ঝুঁকির সম্মুখীন। নদীর পাড়ে প্রতিরক্ষা দেয়াল না থাকায় স্থাপনাটির পাড় ধসে পড়ার উপক্রম হয়েছে। স্থায়ীভাবে স্মৃতিসৌধটির প্রতিরক্ষা দেয়াল নির্মাণ ও রক্ষাণাবেক্ষণের জন্য কর্তৃপক্ষের সার্বিক সহযোগীতা প্রয়োজন।
‘উপজেলা নির্বাহী কর্মকর্তা (ইউএনও) শীতেষ চন্দ্র সরকার জানান, ‘এই বিষয়ে প্রয়োজনীয় ব্যবস্থা গ্রহণের জন্য জেলা প্রশাসকের কাছে লিখিতভাবে জানানো হবে।’