• ১৮ই অক্টোবর, ২০২৪ খ্রিস্টাব্দ , ২রা কার্তিক, ১৪৩১ বঙ্গাব্দ , ১৫ই রবিউস সানি, ১৪৪৬ হিজরি

শাবিতে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের, উপাচার্যের ৬ প্রস্তাব

bijoy71news
প্রকাশিত সেপ্টেম্বর ২০, ২০২৩
শাবিতে পরীক্ষা নেওয়ার দাবি শিক্ষার্থীদের, উপাচার্যের ৬ প্রস্তাব

সিলেটের শাহজালাল বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগের ২০২১-২২ সেশনের মাস্টার্স দ্বিতীয় সেমিস্টারের শিক্ষার্থীদের গত সেমিস্টারের একটি কোর্সের পুনরায় পরীক্ষা গ্রহণের দাবিতে দুই দিন ধরে অবস্থান কর্মসূচি পালন করেছেন শিক্ষার্থীরা। কর্মসূচি শেষে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের সঙ্গে টানা দুই ঘণ্টা বৈঠক করেন উপাচার্য। এতে শিক্ষার্থীদেরকে ৬টি প্রস্তাব দিয়েছেন তিনি। এসব প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে এখনো কোনো সিদ্ধান্ত জানাননি শিক্ষার্থীরা।

মঙ্গলবার (১৯ সেপ্টেম্বর) সকাল ১০টা থেকে দুপুর ১টা পর্যন্ত বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষাভবন ‘বি’ এর সামনে দ্বিতীয় দিনের মত অবস্থান কর্মসূচি পালন করেন শিক্ষার্থীরা। এসময় শিক্ষার্থীরা তাদের ‘দাবিতে অনড়’ আছেন এমন শ্লোগান দিতে দেখা যায়। এর মধ্যে সকাল ১০টা থেকে ১১টা পর্যন্ত বিশ^বিদ্যালয়ের ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালকের সঙ্গে এবং বেলা ১টা থেকে বিকাল সোয়া ৪টা পর্যন্ত বাংলা বিভাগের শিক্ষকদের সঙ্গে বৈঠকে বসেন শিক্ষার্থীরা। কিন্তু এ থেকে কোনো ফলপ্রসূ আলোচনা হয়নি।

ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক ও বাংলা বিভাগের শিক্ষকরা একাডেমিক কাউন্সিল সিদ্ধান্তের বাইরে কোনো কথা বলেননি। এসময় মাস্টার্সের শিক্ষার্থীরা পরীক্ষা নেওয়ার দাবিতে অনড় রয়েছেন বলে জানান। এদিকে, শিক্ষকদের সঙ্গে মিটিংয়ের পর বিকেলে সাড়ে চারটার দিকে বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্যের সঙ্গে সাক্ষাৎ করেন শিক্ষার্থীদের একটি প্রতিনিধি।

শিক্ষার্থীদের ৬ সদস্যের ওই প্রতিনিধি দল উপাচার্যের বাসভবেন যান। সেখানে দুই ঘণ্টাব্যাপী আলোচনা হয়। এতে উপস্থিত ছিলেন বিশ^বিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ফরিদ উদ্দিন আহমেদ, উপ-উপাচার্য অধ্যাপক কবির হোসেন, কোষাধ্যক্ষ অধ্যাপক আমিনা পারভীন, ছাত্র উপদেশ ও নির্দেশনা পরিচালক অধ্যাপক রাশেদ তালুকদার, বাংলা বিভাগের প্রধান অধ্যাপক ফারজানা সিদ্দিকা, বিভাগীয় ছাত্র উপদেষ্টা অধ্যাপক আশ্রাফুল করিম ও অধ্যাপক নিলুফা আক্তার ও সহকারী প্রক্টর আহসান হাবীব।

ছাত্র প্রতিনিধিদের একজন মোজাম্মেল হক বলেন, উপাচার্য আমাদেরকে ৬টি প্রস্তাব দিয়েছেন। এর মধ্যে আমাদের কোর্সের পরীক্ষাটি মাস্টার্স দ্বিতীয় সেমিস্টারের ফাইনাল পরীক্ষা শেষ হওয়ার দুই মাসের মধ্যে নেওয়ার কথা দিয়েছেন; প্রথম সেমিস্টারের গণমাধ্যম ও চলচ্চিত্র নামক ওই কোর্সের পূর্ববর্তী ক্লাস ও মিড টার্মের ৪০ নম্বর অব্যাহত থাকবে, অতিরিক্ত কোনো ক্লাস, মিড টার্ম কিংবা অ্যাসাইনমেন্ট দিতে হবে না;

‘‘দ্বিতীয় সেমিস্টারের পরীক্ষা শেষ হওয়ার পর প্রয়োজনমাফিক অ্যাপিয়ার্ড সার্টিফিকেট দেওয়া হবে; ড্রপ কোর্সের পরীক্ষা সম্পন্ন হওয়ার এক সপ্তাহের মধ্যে ফলাফল প্রকাশিত করা হবে; শিক্ষার্থীদের প্রয়োজনে একদিনের মধ্যে সনদপত্র দেওয়া হবে; অসুস্থ শিক্ষার্থীর সব ধরণের চিকিৎসা সহায়তা দেওয়া হবে; এ ছাড়া নিয়মের ভিতরে থেকে আমাদের আরো কোনো দাবি থাকলে মেনে নেওয়ার আশ^াস দেওয়া হয়েছে।’’

ছাত্র প্রতিনিধিরা বলেন, ‘‘উপাচার্য বলেছেন, যেহেতু ওই কোর্সের বিষয়ে একাডেমিক কাউন্সিলে সিদ্ধান্ত হয়ে গেছে, তা পরিবর্তন করা এখন সম্ভব নয়। তবে তিনি মানবিক দিক বিবেচনা করে অসুস্থ সহপাঠীর জন্য আমাদের এই ত্যাগকে তিনি সম্মান জানিয়েছেন। উপাচার্য আরও বলেছেন, পরীক্ষা সংক্রান্ত বিষয়ে অসুস্থ শিক্ষার্থীর ক্ষেত্রে বিশেষ ব্যবস্থা নেওয়া যায়; কিন্তু তা বিভাগের পক্ষ থেকে শিক্ষার্থীদের জানানো হয়নি। একইসঙ্গে অসুস্থ শিক্ষার্থীর শারীরিক ও মানসিক অবস্থা এতটাই গুরুতর, সেই তথ্য বিভাগ থেকে কর্তৃপক্ষকে অবগত করা হয়নি। এই ভুল বুঝাবুঝির কারণেই এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।’’

এজন্য সার্বিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে উপাচার্য ৬টি প্রস্তাব দেন বলে জানান শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের ওই সদস্য।

প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে প্র্রতিনিধি দলের সদস্যরা তৎক্ষনাৎ কোনো সিদ্ধান্ত উপাচার্যকে জানান নি। শিক্ষার্থীরা বলেন, ‘তবে উপাচার্য বলেছেন, ওই প্রস্তাবগুলো লিখিতভাবে আমাদের কাছে দেওয়া হবে।’

এসব প্রস্তাবের প্রেক্ষিতে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের প্রতিনিধি দলের আরেক সদস্য শেখ দেলোয়ার হোসেন বলেন, ‘‘৬টি প্রস্তাব লিখিত আকারে পেলে এবং একইসঙ্গে বিশ^বিদ্যালয়ের নিয়মের মধ্যে থাকা আমাদের আরো কিছু দাবি আছে; সেগুলো মেনে নেওয়া হলে পরের সপ্তাহ থেকে আমরা ক্লাসে বসব। আপাতত আমাদের কর্মসূচি স্থগিত ঘোষণা করেছি। পরবর্তী কর্মসূচির ব্যাপারে পরে জানানো হবে।’’

এর আগে গত ১৬ জুলাই বাংলা বিভাগের মাস্টার্সের প্রথম সেমিস্টারের ‘গণমাধ্যম ও চলচ্চিত্র’ কোর্সের ফাইনাল পরীক্ষা ছিল। সহপাঠী গুরুতর অসুস্থ থাকায় ওই বিভাগের মাস্টার্সের কোনো শিক্ষার্থীই পরীক্ষা অংশগ্রহণ করেন নি। এতে গত দেড় মাসের বেশি সময় ধরে বিভিন্ন আশ^াস ও আবেদন করেও বিভাগ থেকে পরীক্ষা নেওয়া হয়নি।

সবশেষ গত ১৪ সেপ্টেম্বর বিশ^বিদ্যালয়ের একাডেমিক কাউন্সিলের এক সভায় চলতি বছর পুনরায় এ পরীক্ষা নেওয়া হবে বলে সিদ্ধান্ত হয়, পরের বছর যারা মাস্টার্স প্রথম সেমিস্টারে ভর্তি হবেন তাদের সঙ্গে পরীক্ষা দিতে হবে। তবে শিক্ষার্থীদের দাবি ছিল দ্বিতীয় সেমিস্টারের মধ্যেই ওই কোর্সের পরীক্ষা নিতে হবে। এ দাবিতে তারা দুইদিন অবস্থান ও মানববন্ধন কর্মসূচি পালন করেন।