গোলের পর উড়ছেন তপু বর্মণপ্রথমার্ধের শুরুটা হয়েছিল যেভাবে, দ্বিতীয়ার্ধেও ধরা দিল ঠিক একই দৃশ্য। দুই অর্ধের শুরুর পারফরম্যান্সে সাফ ফুটবলের শুরুটা রাঙিয়ে নিলো বাংলাদেশ। যাতে ভুটানের বিপক্ষে ‘প্রতিশোধ’ পর্ব সেরে ২-০ গোলের জয়ে দক্ষিণ এশিয়ার ফুটবলের শ্রেষ্ঠত্বের আসর শুরু করেছে জামাল ভূঁইয়ারা।
দিনকয়েক আগের প্রীতি ম্যাচে শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হার শঙ্কার মেঘ জন্মেছিল বাংলাদেশের ফুটবলপ্রেমীদের মনে। যদিও সেই শঙ্কার মেঘ সরিয়ে দুর্দান্ত বাংলাদেশই চোখ পড়লো ভুটানের বিপক্ষে সাফে নিজেদের উদ্বোধনী ম্যাচে। বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে তপু বর্মণ ও মাহবুবুর রহমানের গোলে ৩ পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছেড়েছে স্বাগতিকরা।
আক্রমণাত্মক ও গতির ফুটবলে সম্ভাবনাময় এক বাংলাদেশকেই দেখা গেছে ভুটানের বিপক্ষে। ছন্দময় আক্রমণের বিপরীতে মাঝেমধ্যে রক্ষণে ফাটল ধরলেও তাতে বিপদ হতে দেননি গোলরক্ষক শহীদুল আলম। দারুণ জয়ে এই গোলরক্ষকের অবদানও কম নয়।
দুই বছর আগে ভুটানের বিপক্ষে ৩-১ গোলে হেরে প্রায় এলোমেলো হয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশের ফুটবল। এএফসি এশিয়ান কাপের প্রাক বাছাই পর্বের ওই হার র্যাংকিংয়ে বাংলাদেশকে পেছনে ঠেলে দিয়েছিল অনেক। এবার সেই হিসাব চুকিয়ে চমৎকার জয়ে বাংলাদেশ শুরু করলো সাফ চ্যাম্পিয়নশিপ।
মঙ্গলবার সন্ধ্যা ৭টায় শুরু হওয়া ম্যাচে প্রথম গোলটি এসেছে পেনাল্টি থেকে। প্রথম মিনিটেই কর্নার পায় বাংলাদেশ, সেই কর্নারের সময়ই নিজেদের রক্ষণের মধ্যে ফরোয়ার্ড সাদ উদ্দিনকে ফাউল করেন ভুটানের এক ডিফেন্ডার। তাতে রেফারি বাজান পেনাল্টির বাঁশি। সুবর্ণ এই সুযোগটা নষ্ট করেননি তপু বর্মণ। স্পট কিক থেকে ঠাণ্ডা মাথায় লক্ষ্যভেদ করে স্বাগতিকদের এগিয়ে নেন এই ডিফেন্ডার।
গোল শোধে মরিয়া হয়ে ওঠে ভুটান। ২৪ থেকে ২৬- এই দুই মিনিটে তিনটি ভালো সুযোগ তৈরিও করেছিল ‘ড্রাগন বয়েজ’। ২৫তম মিনিটে গোল না হওয়ায় ভাগ্যকে দোষ দিতেই পারে তারা। অবশ্য তাতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা ছিল বাংলাদেশেরও!
যার গোল এগিয়ে গিয়েছিল বাংলাদেশ, সেই তপু বর্মণ করে বসেন বড় ভুল। মাঝমাঠ থেকে বাড়ানো শট গোলরক্ষক শহীদুল আলমের জন্য ছেড়ে দিয়েছিলেন তপু। কিন্তু ভুল বোঝাবুঝিতে বক্সের ভেতর ফাঁকায় বল পেয়ে যান চেনচো গায়েতশেন। যদিও স্বাগতিকদের ভাগ্য সহায় হওয়ায় তার নেওয়া শটটি চলে যায় পোস্টের ওপর দিয়ে।
মিনিট তিনেক পর বাংলাদেশও পায় ভালো একটি সুযোগ। সাদ উদ্দিনের একক প্রচেষ্টায় ভুটানের বক্সের সামনে থেকে নেওয়া শট প্রতিহত হলেও পরে বাঁ প্রান্তে বল পেয়ে যান বিপলু আহমেদ। এই উইঙ্গারের নেওয়া আড়াআড়ি শট চলে যায় পোস্টের সামান্য বাইরে দিয়ে।
৩৬তম মিনিটে আবারও সুযোগ বাংলাদেশের। এবার কর্নার থেকে উড়ে আসা বল আতিকুর রহমান উড়ে এসে হেড করেছিলেন, যদিও ঠিকমতো ‘কানেক্ট’ করতে না পারায় হতাশায় মাথায় হাত বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়ামে হাজির হওয়া দর্শকদের।
তপুর করা গোলের লিড নিয়ে বিরতিতে গিয়েছিল বাংলাদেশ। প্রথমার্ধের শেষ দিকে একটু ঝিমিয়ে আসা স্বাগতিকরা দ্বিতীয়ার্ধের শুরুতেই আগুনে রূপে। ৪৮তম মিনিটে দলকে দ্বিতীয় গোল এনে দেন মাহবুবুর রহমান। ডান প্রান্ত দিয়ে দ্রুতগতিতে ভুটানের বক্সের ভেতর ঢুকে পড়ে ডান পায়ের জোড়লো ভলিতে বল জালে জড়িয়ে দেন তিনি।
আরও পিছিয়ে পড়া ভুটান ম্যাচে ফেরার চেষ্টা করলেও বাংলাদেশের কড়া রক্ষণ ছিল প্রস্তুত। কাউন্টার অ্যাটাকিং ফুটবলে বরং স্বাগতিকরা বারকয়েক কাঁপিয়ে দিয়েছিল ভুটানের রক্ষণ। তা থেকে গোলের দেখা না পেলেও ২-০ গোলের জয়ে পুরো পয়েন্ট নিয়ে মাঠ ছাড়তে কোনও অসুবিধা হয়নি বাংলাদেশের।